স্মরণ
ক্ষণজন্মা এক প্রাণপুরুষ আকবর হোসেন
পূর্ণভূমি সিলেটের সুজলা সুফলা শষ্য-শ্যামলামলা প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছায়াঘেরা ও মায়াভরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কেই অতি আপন করে নিয়ে প্রায়–২৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন মোল্যা আকবর হোসেন। বিশ্বিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি মুলত নিজগুণে ও কর্মদক্ষতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হয়ে উঠেছিলেন। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষসহ সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের চোখের মনি ছিলেন আকবর হোসেন। সততা, দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে তিনি হয়ে যান সবার প্রিয় আকবর হিসেবে।
ক্ষণজন্মা এ প্রাণপুরুষটি গত ২২ অক্টোবর সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
মরহুম আকবর হোসেন সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৮ সালের ১০ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মো. আককাজ আলী এবং মাতার নাম মিসেস জোহরা আককাজ। তাঁর পিতা স্থানীয়ন নওয়াপাড়া প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং পরবর্তীতে ভূমি রাজস্ব অফিসে চাকরি করেছেন। তাঁর মাতা ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সমাজ সেবক।
মরহুম আকবর হোসেনের হাতেখড়ি হয় হাওলা ঠাকুর স্যার ও জগন্নাথ স্যারের মাধ্যমে। তিনি খান জিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, খান জিয়া জুনিয়র স্কুলে পড়াশুনা করেন। ১৯৭৩ সালে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৫ সালে খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ থেকে আইকম পাস করেন। এরপর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হন। এ সময় তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। কবি জসিম উদ্দিন হল ছাত্র সংসদের এজিএস প্রার্থী ছিলেন। প্রিয় এ ছাত্রনেতার রুম ছিল ৪২০ যা সাধারণ ছাত্রদের ভরসা ও আস্থার কেন্দ্র ছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম (অনার্স) ও এমএকম (ফিন্যান্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রথমে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চাকরিতে প্রবেশ করেন। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, ঢাকার হেড অফিসে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর শিক্ষানুরাগী আকবর হোসেন সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে যোগ দান করেন। ২০১০ সালে পদোন্নতি পেয়ে (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে অধিষ্ঠিত হন। চাকরি জীবনে আকবর হোসেন অত্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার অধিকারী ছিলেন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের মতে ‘সমাজে আকবর হোসেনের মতো মানুষ বিরল, তিনি শতভাগ সৎ কর্মকর্তা ছিলেন।’
তিনি ফুল খুব পছন্দ করতেন। এজন্য তিনি নিজ উদ্যোগেও নিজ খরচে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে দেশ-বিদেশের ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানি যা টাকার অঙ্কে ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ব্যয় করেছেন ফুলের বাগান করার জন্য।
শিক্ষার বিস্তারে তিনি অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছেন। সিলেট ও সাতক্ষীরার অনেক ছেলেমেয়েকে তিনি লেখাপড়ার খরচ বহন করেছেন। গরিব-দুঃখীদের তিনি নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছেন। কেহ তাঁর কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যেত না। তিনি প্রচার বিমুখ ছিলেন। কাউকে তিনি আথির্কভাবে সাহায্য করে প্রচার করতেন না। তাঁর ব্যবহার ছিল অমায়িক এবং তিনি ছিলেন সদালাপি। তিনি মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন।
লেখক : উপসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।