তোয়াব খান, সত্যবাকের আত্মকথা
ফোনের ওপারে তাঁর উচ্ছ্বল কণ্ঠ। একুশে পদক পেয়েছেন এ বছর। তাই অভিনন্দন জানাই ফোনে। অফিসের পথে তিনি। এই স্বীকৃতি জীবন প্রান্তে নিঃসন্দেহে তাঁকে উদ্বেল করেছে, ক্ষণিকের কথোপকথনে স্পষ্ট হলো সেটাই। এরই মধ্যে তিনি পেরিয়েছেন আশির কোঠা। এখন ৮২। অভিনন্দন তোয়াব খান, আমাদের তোয়াব ভাই!
তিনি কেবল সাংবাদিক নন, নিশ্চিতভাবেই সাংবাদিকদের সাংবাদিক। পেশাগত জীবনে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে তিনি আজ এক প্রতিষ্ঠান। ভূয়োদর্শী মানুষটি অন্তরে আর বাইরে সমান আধুনিক। সেই প্রতিফলন তাঁর পেশা ও ব্যক্তিজীবনের প্রতি পরতে। এই ব্যক্তিত্বের জীবনখাতার বর্ণিল পাতাগুলো কয়েক বছর আগে নেড়েচেড়ে দেখার প্রয়াস পেয়েছিলাম।
১৯ আগস্ট ১৯৬২। বিয়ে-বাসরে সুসজ্জিত নওশা। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব পরিবেষ্টিত। ততক্ষণে বিয়েও পড়ানো হয়ে গেছে। অফিস থেকে শিফট ইনচার্জ চিরকুট পাঠাচ্ছেন সেখানে : ‘সোহরাওয়ার্দী সাহেব গ্রেপ্তর। কী করিব জানাইবেন।’ বর তখন বদলে যাচ্ছেন বার্তা সম্পাদকে (দৈনিক সংবাদের তিনি তখন বার্তা সম্পাদক)। নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, বাতলে দিচ্ছেন করণীয়, পত্রবাহক মারফত। হাসতে হাসতেই স্মৃতিচারণা করছিলেন তোয়াব খান। দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক। নিজের বাসার ড্রয়িং রুমের সোফাচেয়ারে আরাম করে বসে। আসলে সাংবাদিকদের জীবনটাই এমন। ঢেঁকির মতো। দীর্ঘ আলাপনের একপর্যায়ে তাঁর জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা বলছিলেন তিনি। অনেকদিন পর, তা বলে বেশ কৌতুকও বোধ করলেন। অলক্ষ্যে সবার জন্য রয়ে গেল অনুকরণীয় এক শিক্ষা।
এই প্রসঙ্গের রেশ ধরেই সভয়ে জিজ্ঞেস করে ফেলা, বিয়েটা অ্যারেঞ্জড না অ্যাফেয়ার? সকৌতুকে বলেন, ‘বলতে পার দুটোই। আসলে আগে চেনাজানা ছিল। মামাতো বোন তো।’
প্রায় আট দশকের মুখর জীবন। পেশাজীবনও সময়পথ পাড়ি দিয়েছে সাড়ে পাঁচ দশক। মিডিয়ার মহীরূহপ্রতিম এই মানুষটির পথচলা অন্তবিহীন। স্মার্ট আর স্টাইলিশ। তাঁর লেখনিও। নির্মেদ আর তীক্ষ্ণ। অবশ্য লিখেছেন কম, লিখিয়েছেনই বেশি। অনুসরণীয় দুটোই। সেদিন টানা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নানা বিষয়ের আলোচনায় আবিষ্কার করা গেছে এক অন্য তোয়াব খানকে। দৈনিক জনকণ্ঠে একযুগের বেশি সময় অনুজপ্রতিম সহকর্মী হিসেবে যাঁকে দেখেছি, তিনি তো নন এই তোয়াব খান। বস্তুত সেই দেখা আর এই দেখা মিলিয়েই একটা সম্পূর্ণ ছবি।
পরে মনে হয়েছে, আসলে একজন তোয়াব খানকে আবিষ্কারই করতে হয়। কারণ ৮২ বছরের কোনো মামুলি জীবন তো নয়। একটা ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসনকালে শুরু যে পথের, তা আজও সমানে চলছে। নানা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পটপরির্তন আর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে সঙ্গে নিয়ে, সেই অভিজ্ঞতায় নিজেকে ঋদ্ধ করে। সময়ের সঙ্গে নিজের সঠিক অভিযোজনে। এজন্যই তিনি সমসাময়িক। আধুনিক।
অসাধারণ গল্পকথক। অনুপুঙ্খ বলে যান আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে। প্রতিটি ঘটনা তাঁর নখদর্পণে। স্মৃতিদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগই নেই।
আজন্ম বেড়ে ওঠা তাঁর সাতক্ষীরায়। রসুলপুর, বর্ধিষ্ণু গ্রাম। আলোকিতও। ছেলেবেলা থেকে মা যতটা নন, ততটাই তাঁর জীবনকে প্রভাবিত করেছেন খালা (জাতীয় অধ্যাপক এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এম আর খানের মা)। চার খালাতো ভাই-ই স্কলার। পিঠাপিঠি বেড়ে উঠেছেন তাঁদের সঙ্গে। আর ছিল পরিবেশ। বহমান সেখানে স্বদেশিকতার উতল হাওয়া। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত আত্মীয়স্বজন। মাওলানা আকরাম খাঁ এঁদের অন্যতম। তিনি মাদ্রাসা গড়েছেন বিকল্প শিক্ষায় গ্রামবাসীকে শিক্ষিত করতে। তাঁর জামাতা রেজ্জাক খান যিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মুজফ্ফর আহমেদ, ডাঙ্গেদের সঙ্গে। তিনিও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন স্থানীয় মানুষদের শিক্ষিত করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতে। খেলাফত আন্দোলনের জন্য জেহাদিদের ট্রেনিং হতো তুরস্কে। যেতে হতো আফগানিস্তান হয়ে। পূর্ববাংলা থেকে সেখানে যাওয়ার ট্রানজিট পয়েন্ট ছিল এই গ্রাম। এসব খুব কাছ থেকে দেখা। এসবই তাঁর জীবনের সূচনাপর্বের অনুঘটক।
তোয়াব খান পড়েছেন সাতক্ষীরার শতাব্দীপ্রাচীন পিএন (প্রাণনাথ) স্কুলে। দেশের এক প্রান্তে হলেও পিএন স্কুল ছিল সময়ের নিরীখে যথার্থ অগ্রসর আর বিশেষ বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। শিক্ষকদের স্মৃতিচারণা এখনো অনিঃশেষ তৃপ্তি দেয় তাঁকে। শৈশব থেকে কৈশোরের উত্তরণপর্বটা তাঁদের জন্যই যে যথাযথ হতে পেরেছে, তা স্বীকার করেন শ্রদ্ধার সঙ্গে।
ক্লাস এইটে তাঁদের সঙ্গে পড়তে আসেন প্রাণময় এক কিশোর। মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার। ডাক নাম ডিকেন। পড়াশোনা আর নানা কর্মচাঞ্চল্যে সবার মন জয় করে নেওয়া এই কিশোরই তাঁর প্রিয় বন্ধু সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান বাশার। তাঁকে নিয়ে রয়েছে মধুর সব স্মৃতি।
চাক্ষুষ করেছেন পঞ্চাশের মন্বন্তর। বাংলা ১৩৫০। ইংরেজি ১৯৪২। তিনি তখন মাত্র ৮ বছরের বালক। মনে আছে তাঁর সেসব দিন। চারদিকে বুভুক্ষ মানুষের মিছিল। চরম দুর্বিষহ অবস্থা। প্রতিদিন মরছে মানুষ। সাতক্ষীরার পাকা রাস্তা দিয়ে লোহার চাকা লাগানো মরা ফেলার গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ডোমেরা। ‘ঘড়ঘড়ানি আওয়াজ শুনলেই বুঝে যেতুম আরো এক হতভাগ্যের জীবনে পূর্ণচ্ছেদ পড়ল।’
পরিস্থিতির ডামাডোলে পঞ্চাশে আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। পরের বছর ম্যাট্রিক পাস করে পুরনো ঢাকায় মামার বাড়িতে চলে আসেন তোয়াব খান। সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘দাঙ্গার জন্য তিন মাস আর ইরানের শাহের ঢাকা আগমন উপলক্ষে দেড় মাস পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। ততদিনে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তাই পরের বছর এসে ভর্তি হলাম। আমার সহপাঠী তখন আনিসুজ্জামান। আর আমাদের জুনিয়র হয়েও এক ক্লাস এগিয়ে গেল গাফ্ফররা (আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী)।
সেই তাঁর পাকাপাকিভাবে ঢাকায় চলে আসা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ভাষা আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। ‘তখন এমন কোনো ছাত্র ছিল না যে আন্দোলনে যোগ দেয়নি।’
মামার বাসাটা আবার পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড আখড়া। মাঝেমধ্যেই ডাকসাইটে নেতারা আসছেন। থাকছেন আত্মগোপন করে। মনি সিং, খোকা রায়, নেপাল নাগ, সালাম ভাই ওরফে বীরেন দত্ত মায় আলতাফ আলী। দেখা হচ্ছে। কথা হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে একটা পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে যাচ্ছে যৌবনের চৌকাঠে পা রাখা তোয়াব খানের। ফলে অজান্তে হয়েও যাচ্ছে তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক দীক্ষা। বদলে যাচ্ছে জীবনের গতিপথ। ক্রমেই শিকেয় উঠছে পড়াশোনা। পেয়ে বসছে তাঁকে বিপ্লবের নেশা। এই সময়টা তাঁর জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
বাহান্ন পরবর্তীকালে বাড়ি থেকে আর্থিক সমর্থন কিছুটা অনিয়মিত হতে থাকে। তার সঙ্গে যোগ হয় বিপ্লবের নেশা। ৫৩ সালে কেজি মুস্তফার সঙ্গে বের করেন সাপ্তাহিক জনতা। এর মধ্যে দিয়ে হাতেখড়িও হয়ে যায় সাংবাদিকতা জীবনের। ‘এ সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন আলী আফসার ও হাসান হাফিজুর রহমান। আর সুলতান ভাই। তাঁর একটা বইয়ের দোকান ছিল বকশিবাজারে। ছাপড়া ঘর। সেখানে গিয়ে পড়তাম নানা ধরনের বই। বিশেষত বাম চিন্তাধারার। মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্ব জানতে ক্রিস্টোফার কডওয়েল যেমন, তেমনি অন্য সব বইও।’ সেই পঞ্চাশে কেন, তোয়াব খান আজও সমান বইপোকা। হাতের কাছে পেলে পড়ে নেন যেকোনো কিছু। চেষ্টা করেন তা থেকে শিক্ষা নিতে। ‘তবে রবীন্দ্রনাথ আমি পড়ি নিয়মিত। কারণ ভাষা নিয়ে যে খেলা তিনি খেলেছেন তা অতুলনীয়। আর আমার কাজটাও তো ঐ ভাষা নিয়েই।’
১৯৫৫ সালে তোয়াব খান যোগ দেন সংবাদে। নুরুল আমীন ছিলেন একজন মুসলিম লীগার। অথচ তাঁর পত্রিকা সংবাদ ছিল প্রগতিশীলদের মুখপত্র। এসব আজ অকল্পনীয়। ছাপান্নতে তিনি হেরে যাওয়ায় তাঁর আত্মীয় আহমদুল কবীর কিনে নেন সংবাদ। এখানে যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের সবাই ছিলেন প্রগতিশীল। মনি হাজারি, ফজলে লোহানী, সৈয়দ নুরুদ্দীন (সৈয়দ ফাহিম মোনায়েমের বাবা)। ‘বাংলাদেশের সংবাদপত্রে নুরুদ্দীন সাহেবের অবদান অনস্বীকার্য। ভাষা, মেকআপ আর নিউজ ফলোআপে তিনি দিয়েছেন নানা দিকনির্দেশনা।’
পরে রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদ সাবের, শহীদুল্লাহ কায়সার, সত্যেন সেন, জহুর হোসেন চৌধুরীরা কাজ করেছেন এই পত্রিকায়। এই সময়ে ফওজুল করিম তারা, আব্দুল আওয়াল খান আর তোয়াব খান ছিলেন হরিহর আত্মা। ‘আমাদের সংক্ষেপে বলা হতো ট্যাট। ২৫ পয়সায় টাইম, নিউজউইক কিনে নিজেরা পড়তাম। তারপর বাঁধিয়ে রাখা হতো।’
‘১৯৫৬ আরেক ঘটনাময় বছর আমার সাংবাদিকতা জীবনে। সারা বিশ্বের জন্যও। মিসরের সুয়েজ খাল দখল। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল মিলে মিসর আক্রমণ। তার রেশ ঢাকাতেও। ব্রিটিশ লাইব্রেরি জ্বালিয়ে দেওয়া। হাঙ্গেরিতে সশস্ত্র বিপ্লব। তা আবার সেনাবাহিনী দিয়ে দমন। মহাকাশে রাশিয়ার নভোযান স্পুটনিক উৎক্ষেপণ। রুশ প্রেসিডেন্ট বুলগানিনের ভারত সফর। একমাত্র কমিউনিস্ট হিসেবে সরদার ফজলুল করিমের গণপরিষদে নির্বাচিত হওয়া।’
১৯৫৫ সালে শুরু করে তোয়াব খান ১৯৬১ সালে বার্তা সম্পাদক হন সংবাদের। এ পদে ১৯৬৪ পর্যন্ত থেকে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। বার্তা সম্পাদক হিসেবেই। ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ওই সময়ে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নানা বিচ্যূতি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে কলাম লেখায়। সত্যবাক নামে দৈনিক বাংলায় শুরু করেন ‘সত্যমিথ্যা, মিথ্যাসত্য’ শিরোনামে বিশেষ কলাম। এ কলামে উঠে আসে একটি স্বাধীন দেশের আর্থ-সামাজিক চিত্র।
১৯৭৩-৭৫ সালে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব। আর ১৯৮৭ থেকে ৯১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিব। ১৯৮০-৮৭ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্বও। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। তাঁর তীক্ষ্ণ লেখনি আর আকর্ষক উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয়েছে ‘পিন্ডির প্রলাপ’। স্বাধীনবাংলা বেতার নিয়ে তাঁর রয়েছে ভালো ও মন্দে মেশানো অনুভূতি।
১৯৯৯ সালে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ ছিল থিম কান্ট্রি। সেবার অশোক কুমার স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন তোয়াব খান। ‘সংস্কৃতির সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন’ শিরোনামে দেওয়া তাঁর বক্তৃতা বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর একমাত্র বই (প্রবন্ধ সংকলন) ‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই সুখপাঠ্য বক্তব্য।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রে একেকটি মাইলফলক রচিত হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে। প্রথম চাররঙা সংবাদপত্র এর মধ্যে একটি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘সবসময়ে পাঠকরাই আমার প্রাইমারি কনসার্ন। কাগজের দাম ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা হয়েছে। তারপর একলাফে ৮ টাকা। প্রতিবারই আমি তাদের নতুন কিছু দিতে চেয়েছি। তারই ফল ফোর কালার।’
সংবাদপত্রে পুরো পাতা ফ্যাশন আর টেকনোলজির জন্য বরাদ্দের কথা তাঁর আগে আর কেই বা ভেবেছেন! দৈনিক জনকণ্ঠে তিনি সেটাই করেছেন। পাঠককে দিয়েছেন নতুন স্বাদ। এটা একদিকে যেমন পাঠকদের কথা মাথায় রেখে, তেমনি সময়ের দাবিকে মেনে। আজকে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির যে রমরমা অবস্থা, তার নেপথ্যে দৈনিক জনকণ্ঠের ফ্যাশন পাতার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।
সাংবাদিকদের সম্পর্কে পুরনো ধ্যান-ধারণাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট দিয়ে। সকালে যেমন তিনি একজিকিউটিভ ড্রেসে সচ্ছন্দ তেমনি সন্ধ্যায় ক্যাজুয়ালি ক্ল্যাসি। আর এক পোশাকে পরপর দুইদিন... কখনোই নয়। নিজে শপিং করতে পছন্দ করেন। ‘তবে সেভাবে এখন আর যাওয়া হয় না। কোথাও কিছু ভালো লাগলে বাসায় এসে বলি। ওরাই কেনে।’
কেবল পোশাক-আশাকই নয়, সুগন্ধির প্রতিও তাঁর রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। যদিও বিষয়টিকে তিনি একটু অন্যভাবেই দেখেন। সুগন্ধি তাঁর কাছে ফ্রেশ থাকার অনুষঙ্গ।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান বলতে যা বোঝায়, তার শেষ সলতে তোয়াব খান। যদিও নিজেকে মানিক মিয়া কিংবা জহুর হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তুলনা করতে একেবারেই নারাজ তিনি। বলেন, ‘ওঁরা যে-সাংবাদিকতা করেছেন, তার ধারে-কাছেও আমরা নেই।’ পরোক্ষে এই শূন্যতা নিয়ে তাঁর খেদ রয়েছে, ‘আসলে এখন তো সব আইনের সম্পাদক। কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না। কিছু হলে রিপোর্টারদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি আরো একটা ব্যাপার হলো, সম্পাদকরা আগে মালিক, পরে সম্পাদক। এই ধারায় আবার কিছুটা ছেদ পড়েছে। এখন আর মালিক সম্পাদক হচ্ছেন না। তা বলে সম্পাদকরা যে স্বাধীন হয়ে গেছে বলা যাবে না। বরং মালিকের কথা পুরোপুরি মেনে চলতে হচ্ছে।’
সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। তা সত্ত্বেও রয়েছে তাঁর বিশেষ অতৃপ্তি। বললেন, ‘মনে হয় আরো কিছু করে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পারিনি।’ তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ হয়তো করবে আগামী প্রজন্ম। আর তা তারা করবে সত্যিকারের বস্তুনিষ্ঠ থেকে। আলাপন-প্রান্তে প্রত্যাশার এমনই সুর অনুরণিত হলো তোয়াব খানের কণ্ঠে।
লেখক : সাংবাদিক ও লাইফস্টাইল প্রফেশনাল