রম্য
মাঠ ঢেকে দাও প্লাস্টিকে
বৃষ্টি দেখলেই আবীরের মুখ কালো হয়ে যায়। আর যাবেই না কেন? যাঁরা বাংলাদেশের শহরে থাকেন তাঁরা সবাই জানেন যে বৃষ্টি মানেই বিপদের দিন। শহরের প্রধান রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যায়। রাস্তার পানি দেখে আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আবীর নোংরা পানি পার হয়ে স্কুলে যাওয়ার পর এক দফা বকা দেন মিস। কেননা তার পোশাকে তখনো ড্রেনের ময়লা লেগে আছে।
আজো বৃষ্টি দেখে আবীরের মুখ কালো, না এটা বাংলাদেশের বৃষ্টি নয় হিমাচলের বৃষ্টি। সেখানে নাকি যখন তখন বৃষ্টি হয়। শুধু বৃষ্টি নয়, মাঝে মাঝে আকাশ থেকে বরফেরাও নেমে আসে। এই হিমাচলে চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। খেলা চলছে, না কোথাও কোনো মেঘের ছায়া নেই কিন্তু বৃষ্টি নেমে গেল। এমনি জায়গায় খেলা আয়োজনের আক্কেল দেখাল বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা। আবীরের সঙ্গে আমাদেরও রাগ হয়, তারা হয়তো ভুলে গেছে যে ক্রিকেটে টেস্ট ছাড়া আর কোথাও পয়েন্ট ভাগাভাগিকে ভালো চোখে দেখা হয় না। হিমাচলে বেড়াতে গিয়ে যদি খেলার আয়োজনের ইচ্ছে থাকে তো আমাদের আপত্তি নেই। আমার বন্ধু ভুলো অবশ্য এসব মানতে একেবারে নারাজ, ঘুরতে গিয়ে যদি সাগর পছন্দ হয় তো সাগরে খেলার আয়োজন করতে হবে? এটাকে একদম পাত্তা দিবি না। আমরা এক বাক্যে ওর কথা মেনে নিই। তাই তো এসব একদম ভেবে দেখিনি।
আমাদের এই মন খারাপ অবস্থার মাঝে বোমা ফাটালেন গুড্ডু মামা। তিনি বললেন, খেলার আয়োজকদের মনে খারাপের উদ্দেশ্য ছিল। ওহো মামাকে একটু পরিচয় করিয়ে দেই-তিনি সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত দেন। আমাদের টক-শোয়ের বিশেষজ্ঞদের মতো-জানলেও মত দেবেন, না জানলেও দেবেন। তো মামা বললেন, বৃষ্টির কারণে না খেলিয়ে ছোট দলগুলোকে আনা মানে, ওদের হাত পায়ে জং ধরে যাবে। এরা মূলপর্বে এসে কোনো ফল পাবে না। বৃষ্টির আশায় থাকবে- আর প্রতিটা ম্যাচ গো-হারা হারবে। তাতে টেস্ট খেলা দেশগুলো পুরস্কার নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি যাবে। তিনি আরেকটি কথা বলে আমাদের আড্ডায় ভারি জনপ্রিয় হয়ে গেলেন, সেটা হলো ভারতে এত জায়গা থাকতে হিমাচলে কেন? উদ্দেশ্য একদম ভালো নয়। আমরাও বিষয়টা ভেবে দেখিনি। সত্যি মামাকে এখনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল কেন যে ডাকে না? ডাকলেই নগদ অর্থ পেয়ে যেতেন।
মামার কথা শুনে আমরা ভড়কে যাই, সত্যি তো বাংলাদেশ দলের জন্য ভয়ানক বিপদ। মামা বললেন, এ থেকে রক্ষার দুটো পথ তার কাছে আছে। কিন্তু কাজটা করা বেশ কঠিন। আমরা তখুনি মামার কাছে জানতে চাই পথ কী? তিনি বললেন, প্রথম পথ হলো পুরো স্টেডিয়াম প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দিতে হবে। তাহলে আর বৃষ্টির জল মাঠে পড়বে না। আর ভেতরে দিনের বেলায়ও ফ্লাড লাইট লাগিয়ে রাখতে হবে। শিলাবৃষ্টি হলেও সমস্যা নেই, এটায় বেশ খরচ হবে। সময়ও বেশি লাগবে, এবারে সম্ভব নয়। মামার কথা শুনে আমাদের মন খারাপ হয়ে গেল-তিনি এমন অসম্ভব কথা বলতে পারলেন? আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন-আরেকটা পথ আছে। সেটা একমাত্র তামিম পারবে।
মামার কথা শুনে চমকে যাই-তামিম পারবে সেটা আবার কী?
সেটা হলো এই মাঠে কখনো ছয় মারা যাবে না। এমনিতেই হিমাচলের মাঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উপরে, আর তামিম ছক্কা মারলে বল মেঘের দেশে চলে যায় আর ঘর্ষণে নেমে আসে বৃষ্টি।
মামার বুদ্ধি শুনে আর কোনো কথা না বলে ওমানের খেলা দেখার প্রস্তুতি নিতে চলে আসি।
লেখক : গল্পকার