মেয়ে তুমি কেন ...
একজন মডেল ‘আত্মহত্যা’ করেছে। ২১ বছর বয়স। তরুণী। নিউজপোর্টালগুলো খবর প্রকাশ করতে গেলে ইদানীং ভিডিওটা বেশি পছন্দ করছে। কারণ, ভিডিওর দর্শক বেশি। দর্শক বেশি হলে পোর্টালের হিট বেশি। আর হিট বেশি হলে র্যাংকিংয়ে আগে থাকা যায়।
এ ক্ষেত্রে এই মডেল বড় ‘উপকার’ করে গেছে। মৃত্যুর আগে একটি ভিডিও দিয়ে গেছে। আত্মহত্যার চেষ্টার। যেটা লাখ লাখ দর্শক দেখে ফেলেছেন। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছি দেখার। এক সেকেন্ডও দেখতে পারিনি। ব্যর্থ হয়েছি। সাহসে কুলায়নি বা শেষ পর্যন্ত ইচ্ছে মরে গেছে।
আমার জিজ্ঞাসা, এই নিউজে ভিডিওটা দেওয়া কতটা যৌক্তিক? যারা মিডিয়াগুলোর কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট তাঁদের কাছে আমি জানতে চাই, কোনো যুক্তি আছে কি?
আপনাদের কারণেই ৫৭ ধারার যৌক্তিকতা খুঁজে পায় সরকার বা আইন প্রয়োগকারী বাহিনী। ক্ষেত্রটা আপনারাই তৈরি করে দেন।
তারুণ্যের প্রেম
যে মডেল তরুণী ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছিল তার শিশু বয়সেই। একরকম কলহের মধ্যেই মেয়েটি বড় হয়েছে। পড়ালেখাও শেষ করেনি। সামাজিক বন্ধনহীন ছন্নছাড়া এক জীবন ছিল তার। খবর পড়ে বোঝা গেল, মেয়েটি প্রেম করেছিল এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে একটি খবর উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে কমার্স কলেজের ১৬ বছরের এক ছাত্রকে দেখা গিয়েছিল স্কুলমাঠে অসংখ্য সহপাঠীর সামনে আরেক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে প্রেম প্রস্তাব করতে। এটা যে বলিউড-টালিউডের সস্তা সিনেমার প্রেম দ্বারা প্রণোদিত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কারণ, এই বয়সে একজন কিশোর শিক্ষার্থীর পড়ালেখা, ক্যারিয়ার নিয়ে ডুবে থাকার কথা। প্রেমের অর্থ তার ভাবনাসীমায় থাকার কথা না। প্রেম কী?-এমন প্রশ্নে তাদের উত্তর পাওয়া যাবে সেই সিনেমার ডায়ালগ থেকে কপি করা; এর বেশি কিছু নয়।
একবার সিঙ্গাপুর ঘুরতে গিয়ে সেখানে কথা বলেছি শিক্ষার্থী তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে। প্রেম নিয়ে তাদের ভাবার সময় নেই। খবরে পড়েছি, যাদের বিয়ের বয়স হয়েছে, তারা ক্যারিয়ার ও গবেষণা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে বিয়েটাও করার সময় নেই। সরকার ঋণ পর্যন্ত দিয়েও তাদের দেশে বিয়ে বা শিশু জন্মহার বাড়াতে পারেনি।
তাই বলে আমি প্রেম-বিয়ে-জন্মহার বাড়ানোর বিপক্ষে বলছি না। বলছি, প্রেম বা বিয়ে কী সেটা বোঝার মতো বয়স তাদের হতে হবে। মেয়েদের নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে হবে। পণ্যের মডেল হতে দোষ নেই। নিজে পণ্য হওয়া যাবে না। এইটুকু বোধ হলে, প্রেম কেন, বিয়ে করতেও দোষ নেই। নিজেকে সুশিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রেম-বিয়ের সময় তো পড়েই আছে সামনে।
মেয়ে তুমি কেন আত্মহত্যা করবে? কেন নিজের সবকিছু দিয়ে দেবে? এমনকি জীবনটাও কেন দিয়ে দেবে?
লেখক : সাংবাদিক