মালয়েশিয়ায় নানা আয়োজনে বৈশাখী মেলা
বিদেশে থাকলেও বাঙালির মন-প্রাণ বৈশাখী বর্ষবরণের জন্য কাঁদবেই। মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এর ব্যতিক্রম নন বরং অনেকের চেয়ে এগিয়ে। প্রায় এক যুগের ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ ফোরাম অ্যাসোসিয়েশন (এমবিএফএ)।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ মে) সকাল ১০টার দিকে কুয়ালালামপুর ক্রাফট কমপ্লেক্সে শিশুদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয় বৈশাখী মেলা। এরপর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে রাত সাড়ে ১১টায়।
সবার জন্য উন্মুক্ত বর্ষবরণের এ উৎসব ছিল মালয়েশিয়ার বাঙালির মিলন মেলা। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশের প্রবাসী বাঙালিরা বন্ধু ও স্বপরিবারে মেলায় উপস্থিত হয়ে সারা দিন দেশীয় উৎসব আমেজে সময় কাটিয়ে দেন। সবার পোশাক-আশাকে, সাজ-সজ্জায়, ভোজে-আড্ডায় এই দিনটি ষোলো আনা বাঙালিয়ানায় ভরে উঠেছিল।
প্রবাসের মাটিতে আয়োজিত এই দিনটি দেখে মনে হচ্ছিল লাল-সবুজের এক টুকরো বাংলাদেশ। বিকেল ৫টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভরপুর। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার মেলায় উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী শিশুরা ফুল দিয়ে হাইকমিশনারকে মেলায় স্বাগত জানান।
এমবিএফএর সভাপতি নিসার কাদের, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শঙ্কর চন্দ্র পোদ্দার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম, মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আউয়াল হোসেন রাজন ও নির্বাহী সদস্যরাসহ হাইকমিশনার মেলার স্টল পরিদর্শন করেন।
স্টল পরিদর্শন শেষে যখন হাইকমিশনার দর্শকসাড়িতে উপস্থিত হলে দর্শকরা তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্লোগানে অডিটোরিয়াম প্রকম্পিত করে তোলে। বিদেশে সব প্রবাসী যে দেশকে মনে প্রাণে ভালোবাসে তার-ই বহিঃপ্রকাশ ছিল এই স্লোগান। বাংলাদেশি প্রবাসী ছাড়াও মেলায় বিভিন্ন ভাষার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
মেলার প্রবেশ মুখ সাজানো হয় দেশীয় বৈঠকখানার আদলে। সেখানে বেতের চেয়ারে বসে দর্শনার্থীদের ছবি তোলার ধুম লেগে যায়। শিল্পীদের কোরাস সংগীত পরিচালনায় ছিলেন ড. মহুয়া রায় চৌধুরী, নৃত্যের কোরিওগ্রাফার ছিলেন আশা হোসাইন, ফ্যাশন শো পরিচালনায় ছিলেন তাহমিনা বারি রিনি, শিশুদের আবৃত্তি পরিচালনায় ছিলেন অনুপম পাল ও এসিএলপির প্রশিক্ষক তিয়াসা কাবেজ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন জাফর ফিরোজ, তিয়াসা কাবেজ ও শাকেরা হায়াত খান।
স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন কিংবদন্তি শিল্পী খুরশিদ আলম, নতুন প্রজন্মের ‘ক্রেজ’ দিলশাদ নাহার কনা, চিরকুটের পিন্টু ঘোষ, শিল্পী সুকন্যা মজুমদার ঘোষ ও ফ্যাশন আইকন লিপি খন্দকার। লোক সমাগম ও আয়োজনের ব্যাপকতায় মালয়েশিয়ার বৈশাখী মেলায় বাংলাদেশের বাইরে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন।
প্রায় এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় কুয়ালালামপুরের বৈশাখী মেলাকে মালয়েশিয়ার মূলস্রোত আর জনপ্রশাসনও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা সাব কমিটির সদস্য ছিলেন নিসার কাদের, ফখরুল ইসলাম শোভা ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল বাসার।
বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আউয়াল হোসেন রাজন ও সদস্য সচিব ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক জাফর ফিরোজ।
সাব কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—ড. শঙ্কর চন্দ্র পোদ্দার, প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম, অনুপম পাল, সাইয়েদ জাবেদ ইসলাম, ড. মহুয়া রায় চৌধুরী, তাহমিনা বারি রিনি, সঞ্জয় কুমার বসাক, মনিরুজ্জামান খান, সাংবাদিক আহমাদুল কবির, শেখ ফরিদ আহমেদ প্রমুখ।
অর্থবিষয়ক সাব-কমিটির ইনচার্জ মো. শহিদুল হাসান, সদস্য-মুরশিদ জাহান, আহসান গনি, শহিদ উদ্দিন মো. পারভেজ, আসিফ রায়হান চৌধুরী। স্টল সাব কমিটির ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার বসাক ও মো. শহিদুল হাসান। টেকনিক্যাল সাব কমিটির ইনচার্জ ক্যাপ্টেন জাকির মিয়া, সদস্য মাহফুজ কায়সার অপু। সিকিউরিটি সাব কমিটির ইনচার্জ মো. মাসুদুর রহমান, সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম, রুহুল আমিন সরকার, আরিফুল ইসলাম, মো. সালাহউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন দাস।
এবারের বৈশাখী উৎসবের টাইটেল স্পন্সর ছিল সিবিএল মানি ট্রান্সফার, ট্রাভেল পার্টনার ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, সিলভার স্পন্সর সানওয়ে মেডিকাল সেন্টার, কে এম কার্গো, স্পন্সরে ছিল প্লাসিড মানি ট্রান্সফার, স্টার কাবাব রেস্টুরেন্ট, পিঠাঘর রেস্টুরেন্ট ও পিকোলা কোকোনাট ওয়াটার।