‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় গেলেন ৯৮ শ্রমিক
বেসরকারি রপ্তানিকারকদের যুক্ত করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি প্লাস পদ্ধতি) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রথম ৯৮ বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে আবার উন্মুক্ত হলো দেশটির শ্রমবাজার।
মালয়েশিয়ায় যাওয়া ওই শ্রমিকদের এরই মধ্যে তাঁদের নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কাজ শুরু করার আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন শ্রমিকরা।
গতকাল শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিজি-০৮৬ ফ্লাইটটি আজ শনিবার ভোরে মালয়েশিয়ার কেএলআই বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইটটিতে ৯৬ শ্রমিকের সঙ্গে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছয় কর্মকর্তাও এসেছেন।
ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর এই কর্মীদের রিফ্লেকস কেয়ার এমএসডি এন বিএইচডির (নিয়োগকর্তা) পরিচালক দাতু রাধা কৃষ্ণান ও জিএসএম ফাইজাল ওসমান তাদের গ্রহণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম, দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার কাজী সালাহ উদ্দিন, মালয়েশিয়াস্থ অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের মহাব্যবস্থাপক মো. ওয়ালিউল্লাহ, শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল, পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মশিউর রহমান তালুকদার, শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদ ও কল্যাণ সহকারী মোকসেদ আলী।
কর্মীদের অগ্রণী ব্যাংকের লোগোখচিত একটি করে টি-শার্ট ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষে একটি করে সিম দেন রাষ্ট্রদূত।
মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা ও দিন। শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করবেন না, যাতে করে বাকিদের আসার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। কোনো ধরনের সমস্যা হলে দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের জন্য শ্রমিকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন ফোরামে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শ্রম রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে যাঁরা আসবেন দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁদের দেখভালো করার দায়িত্ব হাইকমিশনের।’
এক প্রশ্নের উত্তরে হাইকমিশনার বলেন, ‘দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যাতে শ্রমিকদের হয়রানির শিকার হতে না হয়, সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা এসে উপার্জন করে দেশে পাঠাতে পারেন সে ব্যবস্থাই করেছে বাংলাদেশ সরকার।’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে কলিং ভিসা চালুর পর ২০০৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকারি হিসাব মতে সোয়া আট লাখ কর্মী নেওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া। দীর্ঘ বিরতির পর আবার ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে শ্রমিক নিতে শুরু করল দেশটি।
‘জিটুজি প্লাসের’ মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়া মশিউর রহমান, মো. জোবাইরুল হক, মো. জাহিদ হাসান ও মো. সিরাজ মিয়া বলেন, মালয়েশিয়া আসার কথা তাঁরা কখনো ভাবতে পারেননি। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাঁরা সবার দোয়া প্রার্থী।
দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য দুই দেশের সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে সুশীলসমাজ। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সফলতাকে ইতিবাচক মনে করছেন অনেকে। তবে দেশটিতে বসবাসরত অবৈধদের সমস্যা সমাধান করা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।