আপনার জিজ্ঞাসা
জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর দাওয়াতে যাওয়া কি ঠিক?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবন-ঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭২০তম পর্বে ঢাকা থেকে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী ও বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগদানের বিধান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন জাহিদুল হাসান। প্রশ্নোত্তরের অনুলিখন করেছেন মুন্সী আবদুল কাদির।
প্রশ্ন : আমরা জানি, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী বা বিবাহবার্ষিকী পালন ঠিক নয়। কিন্তু কেউ যদি দাওয়াত দেন, তবে কি ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ঠিক হবে?
উত্তর : বর্তমানে এটি একটি ট্র্যাডিশন। ট্র্যাডিশনের সঙ্গে অনেকটা ফ্যাশনও হয়ে যাচ্ছে। সেটা হলো জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী ইত্যাদি পালন করা এবং আমরা সে ক্ষেত্রে গতানুগতিক সৌজন্যতার দিকে চলে যাচ্ছি। মানে, আসল বাদ দিয়ে নকলের দিকে যাচ্ছি আমরা। মানুষের ভালোবাসা একসময় অন্তরে ছিল, এখন মুখে এসেছে। কদিন পরে সেটা হয়তো চিঠিতে চলে যাবে। এটা এখন এসএমএসেও চলে যাচ্ছে, যেটা উন্নত বিশ্বে হয়ে গেছে। আর সেদিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি। মোদ্দাকথা, আপনি ঠিকই বলেছেন। ইসলামে এ ধরনের বিষয়কে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এটি কোনো ফেস্টিভ্যাল নয়। বাকি আর কোনো ভাই যদি এ ধরনের কাজ করে থাকেন, তবে সেটাকে একজন ব্যক্তি পরিহার করবেন, বর্জন করবেন।
তবে সেখানে সতর্কতার বিষয় আছে। সেটা হলো এই, যদি কোনো সামাজিক কারণে বা পারিবারিক কারণে সেখানে যুক্ত থাকাটা তার জন্য জরুরি হয়ে যায়, আর যুক্ত না হলে আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি ফেতনাও তৈরি হতে পারে অথবা দুজনের মাঝে সম্পর্ক বিনষ্টও হতে পারে। যেমন মনে করেন, সেই অনুষ্ঠানটা আপনার একদম কাছের একজন মানুষের হতে পারে। আর আপনি যদি সে অনুষ্ঠানে না যান, তবে এমন হতে পারে যে, তিনি আপনার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে বড় ধরনের সম্পর্ক বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বা অন্য কোনো ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ঠিক এমনি পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সেখানে শুধু আপনি অংশগ্রহণ করা, মানে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য তার এই দাওয়াতটাকে উপেক্ষা না করে শুধু যাওয়া, এতটুকু আপনার জন্য বৈধ হতে পারে। তবে সেখানে অন্য কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত না হওয়াটাই হচ্ছে ইসলামের বিধান।
ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যার মধ্যে প্রতিটি বিষয় আল্লাহর রাসুল (স.) জানিয়ে গেছেন। সুতরাং এখানে নতুন করে কোনো বিষয়কে আবিষ্কার করে এর মধ্যে তৈরি করার কোনো দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইবাদতের বিষয়টি আল্লাহতায়ালার বলা হতে হবে, রাসুল (স.)-এর দেখানো হতে হবে। তাই সুস্পষ্টভাবেই এটা অলাদা বিষয়। আর সামাজিকভাবে যদি কেউ দাওয়াত দেয়, আর সেখানে যদি হারাম কোনো বিষয় না থাকে, স্বাভাবিক বিষয় থাকে, তাহলে সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয়। সেখানে আমরা যেতেও পারি।