আপনার জিজ্ঞাসা
তাবলিগ কাদের জন্য?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১ হাজার ৭২৯তম পর্বে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে আলম জানতে চেয়েছেন, যেসব চ্যানেলে ধর্মীয় বিষয় আলোচনা হয় তা শুনতে অন্যদের বললে পাপ হয় কি না। অনুলিখন : সজীব খান।
প্রশ্ন : যে সকল চ্যানেলে ধর্মীয় বিষয় আলোচনা হয়, সে বিষয়ে শুনতে অন্যদের বললে কি পাপ হয়?
উত্তর : রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে এরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি যখন ভাল কাজের নির্দেশনা দেয়, সে ওই ভাল কাজ যে করেছে তার মতোই। সুতরাং আপনি যদি কাউকে এই ভালো কাজের জন্য দিক নির্দেশনা করেন, তাহলে অবশ্যই এ সওয়াব পাবেন। ইসলামিক চ্যানেলগুলোতে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য শোনা এবং শোনার জন্য লোকদেরকে আহ্বান করা এ কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতি কাজ। যদি কেউ এ কথাটি বুঝতে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি এখনো ভালো করে দ্বীন বুঝতে পারেননি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই যুগে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের যে কাজ, এই কাজটি শুধুমাত্র অল্প সময়ের মধ্যেই বেশির ভাগ লোকের কাছে পৌঁছানোর একটাই উপায়। সেটা হলো চ্যানেল মাধ্যম। এই চ্যানেলের মাধ্যমে যদি আপনি দাওয়াতকে ব্যাপকভাবে প্রসার করতে না পারেন, তাহলে কিন্তু আমাদের সকল অবক্ষয় তৈরি হবে। দ্বীনের দিক থেকে অবক্ষয় তৈরি হবে, নৈতিকতার দিক থেকে অবক্ষয় তৈরি হবে, অবক্ষয় তৈরি হবে নিজেদের চিন্তা-চেতনার সব দিক থেকেই। তাই এ কাজটি দাওয়াতি কাজ এবং এর মাধ্যমে আপনি সওয়াব পাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং এটি ভালো কাজ করার যে মর্যাদা রয়েছে, সে মর্যাদাটুকু আপনি পাবেন।
প্রশ্ন : নবী করিম (সা.) ধর্ম প্রচারের জন্য কি কোনো চিল্লা দিয়েছেন? শিক্ষার মাধ্যম কি তাবলিগ? মূলত তাবলিগ কাদের জন্য?
উত্তর : ধর্ম প্রচারের জন্য চিল্লা দেননি। কিন্তু ধর্ম প্রচারতো করেছেন। তাবলিগ করেছেন এবং তাবলিগ করতে বলেছেন। বাকি রাসুল (সা.) চিল্লা দেননি, এটি কোনো সন্দেহ নেই। চিল্লা আবিষ্কার করেছেন তো ১৯৪০ সনে। সুতরাং রাসুল (সা.) তো ১৯৪০ সনে ছিলেন না। তাই এটি রাসূল (সা.) দেননি। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে আমাদের একটি জিনিস জানতে হবে। সেটা হলো এই দাওয়াতের যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতির মধ্যে রাসূল (সা.)যে কর্মনীতি দেখিয়েছেন সে কর্মনীতির মাঝে কোনো ধরনের পার্থক্য আছে কি না। যদি পার্থক্য থাকে তাহলে সেটা সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করতে হবে। আর যদি কোনো পার্থক্য না থাকে, সেটা সুন্নাহর পরিপন্থি কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে সে কাজটি করতে শরিয়তে কোনো বাধা নেই বা নিষেধ নেই। বাকি তাবলিগের সাথে সবচেয়ে বড় যে পলিসিটি (নীতি) এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং তাবলীগের জন্য পূর্বশর্ত, সেটা হচ্ছে রাসুল (সা.) কোরআনের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বলে দিয়েছেন আপনি বলুন, ‘এটিই হচ্ছে আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান করি জ্ঞানের ভিত্তিতে এবং আমার যারা অনুসারী আছে এদের দাওয়াতি কাজ হচ্ছে মূলত জ্ঞানের ভিত্তিতে।’ মূলত তাবলিগ এবং দাওয়াত যেটাই আপনি বলুন না কেন, এর জন্য জ্ঞান অপরিহার্য। যদি জ্ঞান না থাকে, তাহলে এই তাবলিগ ভুল হবে। আমরা অনেকে মনে করি যে শুধু বের হয়ে গেলেই তাবলিগের কাজ হয়ে গেল, তা নয়।
শিক্ষার মাধ্যম তাবলিগ নয়। তাবলিগ কোনো কিছু পৌঁছানো। দিনের কথা মানুষের কাছে পৌঁছানো। দিনের কথা মানুষের কাছে বলতে হলে নিজেকে জানতে হবে। কিন্তু না জেনে জানানোর চেষ্টা করলে সেটা ভুল হবে। সব মুসলিমের ওপর এ তাবলিগের দায়িত্ব রয়েছে।