জুমার দিনের করণীয়
শুক্রবার বা জুমার দিন মুসলমানদের জন্য একটি বড় নিয়ামত। এ দিনটি গরিব মুসল্লিদের হজের দিন। সপ্তাহের এই দিনে জোহরের ওয়াক্তে জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া ফরজ। জুমার নামাজ নিজ গৃহে একাকী পড়া যায় না। এই নামাজ ইমামসহ আরো তিন বা এর বেশি মুসল্লি মিলে মসজিদে জামাতে আদায় করতে হয়।
জুমার দিন মুসল্লিদের প্রধান কাজগুলো হলো গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং মসজিদে হাজির হয়ে মনোযোগসহকারে খুতবা শোনা।
এ ছাড়া মসজিদে আদবের সঙ্গে বসা একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য। এ ব্যাপারে আদম (রা.) ... সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি জুমার দিন গোসল করে যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও তেল বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এর পর বের হয় এবং দুজন লোকের মধ্যে ফাঁকা না রেখে তাঁর নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তাহলে তাঁর সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি)
উত্তম কাপড় পরিধান করার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রা.) ... আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) মসজিদে নববির দরজার কাছে এক জোড়া রেশমি পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী করিম (সা.)-কে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমার দিন এবং যখন আপনার কাছে প্রতিনিধিদল আসে, তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোনো অংশ নেই। এর পর রাসূল (সা.)-এর কাছে কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন এক জোড়া তিনি উমর (রা.)-কে প্রদান করেন। উমর (রা.) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে এটা পরিধান করতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাকে এটি নিজে পরিধানের জন্য প্রদান করিনি। উমর ইবনে খাত্তব (রা.) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন। সে তখন মুশরিক ছিলেন। (সহিহ বুখারি-৫৬২)
এই হাদিসে আলোকপাত করলে বোঝা যায়, আপনার নিজের নতুন অথবা পুরোনো যে ধরনের পোশাক আছে, তার মধ্য থেকে যেটা উত্তম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সেটা পরে আপনাকে মসজিদে সালাতের জন্য আসতে হবে। তবে আপনার পোশাক যেন অবশ্যই মসজিদে আদব রক্ষার্থে শালীনতার মধ্যে থাকে। আপনার সালাত আদায়ের জন্য রাসূল (সা.) যে ধরনের পোশাকের কথা বলেছেন, সেটা থাকতে হবে।
এই দিনে মসজিদে সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.) বিভিন্ন মর্যাদায় সওয়াবের কথা উল্লেখ করেছেন। সহি বুখারির দ্বিতীয় খণ্ডের (৮৩৭) নম্বর হাদিসে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রা.) ... আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের মতো গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। আর পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন, তখন ফেরেশতারা জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। এর পর কোনো ব্যক্তি মসজিদে উপস্থিত হলে সে শুধু খুতবা ও সালাত আদায়ের সোয়াব পাবে। সুতরাং এই বিশাল সওয়াব থেকে বঞ্ছিত হবেন।’
তাই আমাদের জুমার দিন সঠিক সময়ে উপস্থিত অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে অপর এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, আবু নাইম (রা.) ... আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, জুমার দিন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সালাতে সময়মতো আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্ত হও?’ তিনি বললেন, ‘আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তো আমি অজু করেছি।’ তখন উমর (রা.) বললেন, ‘তোমরা কি নবী করিম (সা.)-কে এ কথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমার সালাতে রওনা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।’ [সহিহ বুখারি দ্বিতীয় খণ্ড, ৮৩৮ নম্বর হাদিস]
সুতরাং এ আলোচনা থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, জুমার দিন আমাদের করণীয় কাজগুলো কী হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী