আপনার জিজ্ঞাসা
অর্থসহ কোরআন শরিফ পড়ার নিয়ম কী?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭৫১তম পর্বে বাড্ডা থেকে চিঠিতে কোরআন তেলাওয়াতের মাসআলা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আয়েশা খাতুন। অনুলিখনে ছিলেন মুন্সী আবদুল কাদির।
প্রশ্ন : অর্থসহ কোরআন শরিফ পড়ার নিয়ম কী? প্রত্যেক আয়াত পড়ার পর অর্থ পড়তে হবে, নাকি দুই-তিন রুকু পড়ার পর অর্থ পড়া যাবে? আর কোরআন খতম করার নিয়ম কী?
উত্তর : অর্থসহ কোরআন পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত কোরআনকে উপলব্ধি করার জন্য। এটা বুঝতে হবে যে, আপনি কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন, কিন্তু কিছুই বুঝলেন না; আবার অর্থটা পড়ে গেলেন, কিন্তু বুঝলেন না। যদি এমনটি হয়, তাহলে অর্থসহ পড়া অর্থহীন হবে। এটা অনর্থক হবে।
খেয়াল রাখতে হবে, খুব সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে এখানে। সেটা হলো এই, কোরআনে কারিমের যে তেলাওয়াত রয়েছে, সে তেলাওয়াতকে উপলব্ধি করার জন্যই মূলত কোরআনের অর্থ পড়া। এ জন্য কোরআনে কারিমকে বোঝার ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা ‘বোঝা’ শব্দটি উল্লেখ করেননি, ‘উপলব্ধি’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তারা কি কোরআনকে উপলব্ধি করে না, নাকি তাদের অন্তরের অবস্থা এমন হয়েছে যে তাদের অন্তরকে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা আর কোরআনকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করবে না বা উপলব্ধি করতে পারবে না।’
তাই কোরআনকে উপলব্ধির বিষয়টি মূলত এমন—আপনি তেলাওয়াত করবেন, তার পর আপনি এর অর্থটা পড়ে যাবেন। আপনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন, তার পর এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা কী নির্দেশনা আমাদের জন্য দিয়েছেন, সে অর্থটা পড়লেন। তাহলে আপনি উপলব্ধি করতে পারলেন।
এখন আপনি যদি দুই রুকু-তিন রুকু পড়েন বা ১০/১২ আয়াত পড়েন, তার পর আপনি অর্থ পড়তে যান, তাহলে আপনি কোরআনের আয়াতও বুঝলেন না, এ আয়াতে কী বলা হয়েছে, সেটাও আপনি উপলব্ধি করতে পারলেন না। যেহেতু আপনি কোরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে অর্থ মেলাতে পারেননি, সে জন্য এ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা হয়ে যাবে। এ জন্য যারা কোরআন বোঝার জন্য চেষ্টা করে থাকেন, তাঁরা চেষ্টা করবেন যে শাব্দিক উপলব্ধির মাধ্যমে এবং সরাসরি কোরআনের আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে কোরআনের অর্থসহ পড়ার জন্য।
কিন্তু দ্বিতীয় মাসআলা হচ্ছে, কেউ যদি কোরআনে কারিমকে খতম করতে চান, তিনি কোরআনকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করে যাবেন। খতম হচ্ছে কোরআনে কারিমের একটা বড় দাবি। এ বিষয়কে আমরা অনেকে ক্ষুদ্র বিষয় বলে মনে করলেও তা নয়।
সহিহ বুখারির মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বছর ইন্তেকাল করেন, সে বছর জীবরিল আমিনের সঙ্গে রাসূল (সা.) পুরা কোরআনকে দুবার খতম করেছেন।
সুতরাং খতম করার বিষয়টি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এবং এর গুরুত্বও সাব্যস্ত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, সালফেসসালেহিনগণ কোরআনে কারিমকে খতম করতেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াতের মাধ্যমে।
সুতরাং যদি কেউ কোরআন খতম করতে চান, তাহলে তার জন্য উত্তম হচ্ছে তিনি শুধু কোরআনকে সরাসরি তেলাওয়াত করে যাবেন। সেখানে কোনো অর্থ পড়বেন না। এটি হচ্ছে তেলাওয়াতের উত্তম পদ্ধতি।