আপনার জিজ্ঞাসা
হিজড়াদের বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৭৬৩তম পর্বে ঢাকা থেকে ই-মেইলে ইসলাম হিজড়াদের ব্যাপারে কী বিধান দিয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন সৈয়দা। অনুলিখনে ছিলেন মুন্সী আবদুল কাদির।
প্রশ্ন : ইসলামে হিজড়াদের ব্যাপারে কী বলা আছে। এ ব্যাপারে ব্যাখ্য দেবেন কি?
উত্তর : ইসলামে হিজড়াদের আদম সন্তান হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং হিজড়াদের সব অধিকার নিশ্চিত করেছে। মানবসমাজকে যেভাবে জীবনযাপন করতে বলা হয়েছে, হিজড়ারাও ঠিক সেভাবেই জীবনযাপন করতে পারবে। কোনো বিষয়েই ইসলাম তাদের উপেক্ষা করেনি। সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বক্তব্য রয়েছে। অনেক দীর্ঘ আলোচনাও রয়েছে।
মোদ্দাকথা হচ্ছে, হিজড়াদের মধ্যে স্বভাবজাত বা প্রাকৃতিক কারণে অথবা যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হরমোনের কারণে এ ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। তার পরও যেহেতু তারা আল্লাহর সৃষ্টি, সে সৃষ্টির মধ্যে দুটি ধরন হতে পারে। যার এই সৃষ্টিগত অবস্থানটি নারীদের কাছাকাছি হয়ে থাকে, সে নারীদের মধ্যে। নারীরা যেভাবে জীবনযাপন করে থাকে, তারা সেভাবে জীবনযাপন করবে। আর যার এ অবস্থানটি একেবারে পুরুষদের কাছাকাছি এবং মনে হয় যে সে পুরুষ, কথাবার্তা, আচার-আচরণ পুরুষের মতো, কিন্তু শুধু তার দেহের গঠনের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে বাহ্যিকভাবে পুরুষদের বিধান গ্রহণ করবে। কিন্তু তার অভ্যন্তরীণ যে বিষয়টি, তা নির্ভর করছে তার অবস্থার ওপর। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরীক্ষার মাধ্যমে সে কোন গ্রুপের মধ্যে পড়বে, তাকে সে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে এবং তার জন্য মূলত ইসলামে সব ধরনের অধিকার নির্দিষ্ট রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়েও তারা ছিল এবং ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজকের যুগ পর্যন্তও তারা আছে। তাদের অধিকার ইসলামে নিশ্চিত রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই, আমরা তাদের মানবগোষ্ঠীর বাইরে আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছি। ফলে তাদের আমরা ভিন্নভাবে এখন বিবেচনা করছি। কিন্তু এই কাজ একবারেই গলদ এবং তা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, কোনো একজন ব্যক্তির যদি একটা হাত না থাকে, তাকে কি মানুষ বলা হবে না? হিজড়াদের বর্তমানে যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁরা অনেকেই সমাজে এটাকে ভুলভাবে ব্যবহার করছেন তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থে। তো, কোনো কারণে যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাউকে একটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কম দেন বা ঘাটতি থাকে, তার পরও তিনি মানুষ এবং মানবিক আচরণই তার প্রাপ্য।