বিশ্ব ইজতেমায় জুমার নামাজে লাখো মুসল্লি
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে চারদিন বিরতি দিয়ে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। পথে পথে ভোগান্তি উপেক্ষা করে দেশের ১৬ জেলা থেকে মুসল্লিদের কাফেলা আসছে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাস্থলে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ২৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ঢাকাসহ (একাংশ) দেশের ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন।
শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের মাওলানা আবদুর রহমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মূল মঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় দেওয়া তাঁর এই বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন। এ ছাড়া বাংলার পাশাপাশি একই সঙ্গে বয়ান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ (তরজমা) করে প্রচার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত
বিশ্ব ইজতেমার শুরুর দিন জুমাবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়। এর আগে দুপুর দেড়টায় ওই নামাজের খুতবা পাঠ করা হয়। জুমার নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।
দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনে যাঁরা বয়ান করেন
দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান, তাঁর বয়ান বংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের বাংলাদেশের মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেন। বাদ জুমা থেকে ইজতেমার অন্য মুরুব্বিরা পর্যায়ক্রমে বয়ান করেন।
বিভিন্ন ভাষায় বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশি মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা বসেন এবং তাঁদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ
ইজতেমার প্রথম দিনে জুমার নামাজে অংশ নেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আসা এক মুসল্লি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মারা গেছেন। তাঁর নাম আবদুর রহমান (৬০)। তিনি বগুড়ার গাবতলী থানার মাঝবাড়ি এলাকার মৃত কছিমউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে। এর আগে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বে মোট নয় মুসল্লি মারা গেছেন।
আখেরি মোনাজাত রোববার সকালে
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যেসব জেলা অংশ নিয়েছে
এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লিদের অংশ নেওয়ার জন্য জেলাওয়ারি পুরো প্যান্ডেলকে ২৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ১৫টি জেলাসহ ঢাকা জেলার একাংশের মুসল্লিরা যেসবল খিত্তা অনুযায়ী অংশ নিয়েছেন, সেগুলো হলো- ১নং থেকে ৭নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৮নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৯ ও ১১নং খিত্তায় জামালপুর, ১০নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১২ ও ১৩নং খিত্তায় নেত্রকানা, ১৪ ও ১৫নং খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ ও ১৮নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৭নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৯ ও ২০নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১নং খিত্তায় ফেনী, ২২নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৩নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ২৪ ও ২৫নং খিত্তায় বগুড়া, ২৬ ও ২৭নং খিত্তায় খুলনা, ২৮নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা এবং ২৯নং খিত্তায় পিরোজপুর জেলা।
র্যাবর ব্রিফিং
ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার সকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘সম্ভাব্য সব ধরনের হুমকির বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য অন্য সব গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’
মুসল্লিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা
গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে বেড বাড়ানো হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষুসহ কয়েকটি ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়া মুসল্লিরা যাতে আশপাশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ সব চিকিৎসাসেবা পান, তার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ মুসল্লিদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকছে।
পাঁচ স্তরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, পুলিশ ও র্যাবের প্রায় ১২ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রয়েছে নৌ-টহল ও চেকপোস্ট।
প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বিদেশি মুসল্লি
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৯৬টি দেশের ছয় হাজার ৩১৮ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের জন্য তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
ইজতেমাস্থল ও আশপাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। আদালত এ সময় বিভিন্ন অভিযোগে অর্ধলক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছেন। সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ট্রাফিক কাজে চারটি এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানে খাবারের মান ও মেয়াদ যাচাইয়ে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।
হকার আটক
বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের আশপাশ থেকে প্রায় ৫০ জন হকার আটক করা হয়েছে। ইজতেমার পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ইজতেমা ময়দানের আশপাশে বসে পসরা সাজিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী বিক্রির অভিযোগে এদের আটক করা হয়েছে।
দেশের মোট ৩২টি জেলা নিয়ে এ বছর ইজতেমার দুই পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরবর্তী বছরে (২০১৭) বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন।