আপনার জিজ্ঞাসা
রাসূল (সা.) সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না—কথাটা কি সত্য?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮০০তম পর্বে লালবাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে জাহিদুল হাসান জানতে চেয়েছেন রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহুতায়ালা এ পৃথিবী সৃষ্টি করতেন কি না, সে সম্পর্কে। অনুলিখন করেছেন মুন্সী আবদুল কাদির।
প্রশ্ন : আমি শুনেছি, আল্লাহ রাসূলকে (সা.) সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না—এই কথা কতটুকু সত্য?
উত্তর : আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা যদি রাসূল (সা.)-কে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই ডাহা মিথ্যা-বানোয়াট কথা। এ কথা যদি হাদিসের নামে বলা হয়, তাহলে এটি সবচেয়ে বড় জালিয়াতি। আর এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেয়। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে।
আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা মানুষ সৃষ্টির বিষয়ে সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আরো স্পষ্ট করেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করব।’
আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহু রাব্বুল আলামিন সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন এটা প্রকাশ করলেন ফেরেশতাদের কাছে যে, ‘আমি আদমকে সৃষ্টি করছি। আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করছি।’ এভাবে আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা সৃষ্টির বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন, বেহুদা-অনর্থক সৃষ্টি করেছেন—ব্যাপারটা এমন নয়। এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, যা তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং তা নিজেদের আবিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। নিজেদের গবেষণা থেকে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর তৌহিদকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সেটি আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখানে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন কোথাও এ কথা বলেন নাই যে, এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য, অথবা মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এগুলো আমরা নিজেরাই আবেগ দিয়ে তৈরি করে নিয়ে কিছু সংখ্যক লোক পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসাকে পুঁজি করে ভালোবাসার মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
কোনো সন্দেহ নেই, রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ভালোবাসা ইমানের দলিল, রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা আমাদের থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তির অন্তরের মধ্যে যদি রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সে ইমানদার হতে পারবে না। কিন্তু ভালোবাসাকে পুঁজি করে পথভ্রষ্ট বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই অথবা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হওয়ার কোনো দরকার নেই। এ ধরনের বক্তব্য সত্যিকার অর্থে হেদায়েত থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত একটি বক্তব্য। আর এ ধরনের কথা রাসূল নিজেও বলেননি বা সাহাবারাও তাঁদের বক্তব্যে কোথাও বলেননি।