রম্য
সহনীয় মাত্রায় প্রেম
ইস্যুহীন অবস্থায় গত কদিন ধরে আড্ডাটা ঠিক জমছিল না। অবশেষে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ইস্যু পেয়ে কাল পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে আমাদের আড্ডাটা বেশ জমেছিল। ‘সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খান’ ইস্যুতে আমরা কজন বাউণ্ডুলে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে নেমে পড়েছিলাম। সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়াকে অভূতপূর্বভাবে আমরা সবাই অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রস্তাব হিসেবেই গণ্য করেছিলাম। আমাদের অভিমত ছিল, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। এখন কর্তার কথা শুনে সবাই যদি কিছুটা সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খায়, অর্থাৎ ঘুষের অঙ্কটা যদি কিছুটা কমে, তবে তো সাধারণ মানুষেরই লাভ। চায়ের কাপে ঝড় তুলে আমাদের আড্ডা মোড় নিয়েছিল ব্যক্তিগত বিষয়াদির দিকেও।
ফারহান কিছুদিন ধরে কলির পেছনে ছুটছে, কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারছে না। আমি ওর সর্বশেষ অগ্রগতির খবর জানতে চাইলাম। বেচারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘আর বলিস না, কলিকেও সহনীয় মাত্রা পেয়ে বসেছে।’ সহনীয় মাত্রা মানে? আমরা বাকি সবাই গভীর আগ্রহে জানতে চাইলাম ফারহানের কাছে।
তার কথার সারমর্ম হচ্ছে, গেল শুক্রবার কলিকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছিল ফারহান। সেদিন সন্ধ্যায় একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ওরা বসেছিল। কথা বলার শুরুতেই কলি রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে ডেকে কয়েক পদের খাবারের অর্ডার দেয়। এরপর হাসিমুখে ফারহানকে বলে, ‘খেতে খেতে কথা বলা ভালো, কী বলেন?’ ফারহান আর কীবলবে, মানিব্যাগ খালি হওয়ার আসন্ন শঙ্কায় বেচারা কী বলেছিল, সেটা আর পরে সে মনে করতে পারেনি।
ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল। কলি খেতে খেতে ফারহানকে বলল, ‘তা দেখা করে কী যেন বলতে চেয়েছিলেন?’ কলির এমন নিস্পৃহ কথাবার্তায় ফারহান ভেতরে ভেতরে স্তব্ধ খেয়ে গেল। খুকখুক করে গলা খাকারি দিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে, অমনি কলি বলে বসল, ‘কী হে ফারহান ভাই, যক্ষ্মাটক্ষ্মা হয়নি তো?’ বেচারা ফারহান। একদিকে মানিব্যাগ শূন্য হওয়ার হাহাকার, অন্যদিকে কলির এমন কথাবার্তায় সে সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে ফেলল।
আমতা আমতা করে কলিকে ভালোলাগার কথা কোনোরকমে বলল ফারহান। কিন্তু কলির যেন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই; সে বলল, ‘আপনি না আগে ওপাড়ার রন্টির সঙ্গে প্রেম করতেন?’ আঁতকে ওঠে ফারহান, কলি এসব জানল কী করে। এসব সামলে নিয়ে বলল, ‘ওটা তো অনেক আগেই ব্রেকআপ হয়ে গেছে।’ ‘তারপর না অবনিতার পেছনে ঘুরঘুর করলেন?’ এ যেন কলির আরেক বোমা। ফারহান জবাব দিল, ‘প্রেম হওয়ার আগেই তো ওর বিয়ে হয়ে গেল!’
কলি এবার জ্বলে উঠল তেলেবেগুনে, ‘শোনেন ফারহান ভাই, একটা প্রেম করেছেন, আরেকটার পেছনে ছুটেছেন। এবার ক্ষান্ত দেন। সহনীয় মাত্রায় প্রেম করুন। অসহনীয় মাত্রায় কোনো কিছু ভালো না।’ গটগট করে চলে গেল কলি। মোটা অঙ্কের বিল হাতে নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ফারহান।