রম্য
বাড়িওয়ালার কাছে ভাড়াটিয়ার চিঠি
সুযোগ পেলেই বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিতে পুরো প্রস্তুত থাকেন বাড়িওয়ালারা। নতুন বছর উপলক্ষে তাঁরা ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারেন। ভাড়া না বাড়াতে বাড়িওয়ালার কাছে ভাড়াটিয়া চিঠি লিখলে সেটা কেমন হতো, জানাচ্ছেন হাস্যরস প্রতিবেদক।
জনাব বাড়িওয়ালা,
চিঠির শুরুতে ঝরে যাওয়া গোলাপের পাপড়ির শুভেচ্ছা রইল। বাজার থেকে তাজা মাছই কিনতে পারি না, আর আপনার জন্য তাজা গোলাপের শুভেচ্ছা কেমনে জানাব। যাকগে, সূত্রানুসারে বাড়িওয়ালাদের কোনো চিন্তা নেই, সংসারে টানাটানি নেই, তাঁরা বাংলা সিনেমার শেষদৃশ্যের মতো নয়, সব সময়ই সুখে-শান্তিতে বসবাস করেন। এই সূত্র ধরে আপনাকে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করতে চাইছি না।
মওকাবাজ বাড়িওয়ালা ভাই,
আপনারা ওত পেতে থাকেন শিকারি বাঘের মতো, যেন কোনো মওকা পেলেই বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারেন। গ্যাসের দাম বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়ান, বিদ্যুৎ বিল বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়ান—এগুলো তো আপনার জন্য কমন ব্যাপার। উপরন্তু ‘বৃষ্টি এবার বেশি পড়ছে’, ‘এবারের রোদটা খুব কড়া’, ‘বুঝলেন, ছোট ছেলেটা নতুন একটা মোটরবাইক কিনবে’, ‘আর বলবেন না ভাইজান, বড় মেয়েটা বায়না ধরেছে বন্ধুদের সাথে থাইল্যান্ডে ঘুরতে যাবে’, ‘আপনার ভাবিকে নিয়ে আর পারা গেল না, সে নাকি শপিং করতে সামনের মাসে সিঙ্গাপুর যাবে’—এসব নানা টালবাহানার কথা বলেও আপনি হুটহাট বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেন।
এই সময়ের জমিদার সাহেব,
নতুন বছর শুরু হয়েছে। এটা আপনার জন্য নতুন ‘শিকারের’ উৎস। গেল কদিনে আপনার হাবভাব দেখেই আমাদের বোঝা হয়ে গেছে, আপনি তলে তলে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার ধান্ধায় আছেন। আপনার এই ধান্ধা আমাদের শঙ্কিত করছে। বাজারে পেঁয়াজের কেজি আকাশছোঁয়া, চালের কেজি পাহাড়চূড়ায়, বাঁচা যায়, বলেন?
আপনি বছরে যতবার ভাড়া বাড়ান, তার চেয়ে বেশিবার বাড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। অথচ আমাদের বেতন বছরে একবার বাড়াতেও অফিসে নানা তেলবাজি করতে হয়! অফিসের বসকে বাসায় ‘ভালোমন্দ’ পাঠাতে হয়। এ রকম অবস্থায় আপনি বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিলে আমরা অন্যপন্থা বেছে নিতে বাধ্য হব। আপনার হয়তো খুব আগ্রহ হচ্ছে, সেই ‘অন্যপন্থা’ কী।
হ্যাঁ, আপনার জন্যই বলছি, আপনি এবার বাড়িভাড়া বাড়ালে আমরা আপনার বাড়ির ছেলে কম ভাড়ায় অন্য বাড়িতে গিয়ে উঠব। এটাই হচ্ছে আমাদের ‘অন্যপন্থা’!
ফুটনোট : ভাড়াটিয়াদের এ রকম ‘অন্যপন্থা’ ছাড়া আর কোনো পন্থা বেছে নেওয়ার হ্যাডম কোথায়।