রম্য
গরু রচনা লিখল স্বয়ং গরু
হাস্যরসের ইতিহাসে প্রথমবার গরু নিজেই তার প্রবন্ধ প্রকাশ করল। ছোটবেলায় গরু নিয়ে রচনা লিখেনি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তবে সম্প্রতি ঢাকার এক বিশাল কোরবানির হাটের মোটাতাজা এক গরু আত্মরচনা লিখেছে। যার অংশবিশেষ হাস্যরসে তুলে ধরা হলো :
"আমি একজন শিক্ষিত গরু। তাই অন্যান্য গরুর মতো আমার দেহের গঠন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া আমার দেহের বিশেষ অংশের বিশেষ রূপ বর্ণনায় পাঠক মনের রস ভিজবে না, সেটা জানি। তাই রচনার শুরুতেই গরুর নাক, মুখ, পায়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।
…বেশ কয়েক মাস যাবৎ আমার আদর-সোহাগ হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল একদম ভোটের আগের দিনগুলোর মতন। তবে স্টেরয়েড (গরু মোটাকরণ ওষুধ) খাইয়ে আমার জিম করা সুঠাম দেহ আরো ফুলিয়ে নষ্ট করা হলেও কষ্ট পাইনি, কেননা জানতে পেরেছিলাম আমায় রাজধানীর কোনো এক বিশাল গরুর হাটে তোলা হবে। সেদিন বেশ আনন্দের সঙ্গে জেলখানা থেকে ছাড়াপ্রাপ্ত আসামির মতন গলাভর্তি মালা পরলাম। একাই একটা পিকআপ ভ্যানে জায়গা করে নিয়ে ছুটে চললাম রাজধানীর পানে। কিন্তু একি! দেখি শহরের ভেতর বিশাল সরু নদী। পরে জানলাম ওটা নদী নয়, মিরপুর।
পথে আমার মতন স্মার্ট গরুর জন্য আমার মালিক নানান জায়গায় বকশিশ বিলিয়েছে। যদিও ওটাকে ভুল করে অনেকেই বলে চাঁদাবাজি। সে যাই হোক, মিরপুর ১০ পার হতেই শুরু হলো আরেক চাপাচাপি।
গাড়ি যেন এগোচ্ছেই না। অনুমতি পেলেই হয়তো হেঁটেই রওনা দিতে পারতাম। শেষমেশ দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার পথ ছয় ঘণ্টায় পৌঁছে দেখতে পেলাম বিশাল এক ব্যানারে লেখা ‘বিশাল গরুর হাট’। গেটে গাড়ি ঢুকতেই কিছু লোক এসে আমার শরীরে গুঁতো মেরে আমার প্রশংসা করতে লাগল মালিকের কাছে। বুঝলাম, অতিরিক্ত তোষামোদ করে নিজের ফায়দা লাভের চেষ্টা। তবে এদের বলা হয় গরুর দালাল।
এরপর ভেতরে প্রবেশের পরপরই মনটা খারাপ হয়ে গেল যে, বাইরে এত সুবিশাল গেট বানিয়ে রেললাইনের পাশের ছোট্ট একটা জমি দখল করে এসব আয়োজন।
গরু হিসেবে আমার এই অপমান মেনেই নিলেও কিছু শঙ্কা মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে বারবার। যেমন :
১. এই প্রশস্ত সড়ক দিয়ে নিরাপদে ক্রেতার বাসা অবধি পৌঁছাতে পারব তো?
২. আমার ক্রেতা রাস্তা পারাপারে ওভারব্রিজ ব্যবহার করবেন তো? নাকি ফোন হাতে কোরবানির গরুর দামসহ সেলফি আপলোড করতে করতে রাস্তা পার হবেন?
ইত্যাদি।
পরিশেষে, মাননীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, অন্তত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে হলেও শহরের সব ওভারব্রিজের দুদিকে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করবেন। কেননা গরু হলেও জেনেশুনে রাস্তায় জীবন দিতে চাই না।"