রম্য রচনা
পয়লা বৈশাখে আর যা নিষিদ্ধ হতে পারত
কার্টুন : রবিউল ইসলাম সুমন
সম্প্রতি পয়লা বৈশাখ উদযাপনের জন্য কিছু নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। ঝামেলা এড়াতে এসব নিয়মের পাশাপাশি আর যা হতে পারত, সেটাই দেওয়া হলো নিচে।
সর্বোচ্চ দুই স্তরের মেকআপ
আজকাল তিন-চার স্তরের মেকআপের কারণে অনেকেরই আসল চেহারা ঢাকা পড়ে যায়। ফলে পরিচিত মানুষকেও অনেক সময় চিনতে কষ্ট হয়। এ রকম মেকআপ করা কেউ পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করলে পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তার আসল চেহারার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। ফলে আমাদের করিৎকর্মা পুলিশ বাহিনী অপরাধী ধরতে পারবে না। এ সমস্যার কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ দুই স্তরের মেকআপ নেওয়া যাবে, এ রকম নিয়ম জারি করা যেত!
শুধু ভুভুজেলা নয়, বাঁশিও আউট
ভুভুজেলা বাঁশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ! তবে শুধু ভুভুজেলা নয়, এর পাশাপাশি যেকোনো বাঁশিই নিষিদ্ধ করা যেত। অনুষ্ঠানস্থানের আশপাশেই পুলিশ বাহিনী ডিউটি দেয়, তাদের অনেকের মুখে বাঁশি থাকে। সমস্যা দেখলে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সতর্ক করে। ভুভুজেলার পরিবর্তে সাধারণ জনগণ যদি অন্যান্য বাঁশি বাজায়, সে ক্ষেত্রে অনেকেই সেটাকে পুলিশের বাঁশি ভেবে বিভ্রান্ত হবে, ফলে অহেতুক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে!
ইলিশ এক পিস হলে ভালো হয়
‘দুটির বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’—না, এ রকম স্লোগান শুধু দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঠেকাতেই শুধু নয়, বরং এটাকে ব্যবহার করা যেতে পারে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানেও। পয়লা বৈশাখের দিন অনেকেই পান্তা-ইলিশ খেতে বসেন। কেউ কেউ এক পিস ইলিশ খেয়েই ক্ষান্ত হন না, কয়েক পিস লেগে যায়। ফলে ইলিশের ওপর চাপ পড়ে, এতে ইলিশের দাম বেড়ে যায় এবং অনেকের পক্ষে এক পিস ইলিশ খাওয়াই সম্ভব হয় না। তাদের কথা মাথায় রেখে সরকারের উচিত ছিল ঘোষণা দেওয়া, ‘দুই পিসের বেশি ইলিশ নয়, এক পিস হলে ভালো হয়!’
বেল্ট দিয়ে লুঙ্গি পরেন
পয়লা বৈশাখে একদিনের বাঙালি সাজা জনগণের অভাব নেই। তাদের লুঙ্গি পরতে বেল্ট লাগে, না হলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়! এ রকম একদিনের বাঙালিদের কারণে সব সময়ের বাঙালিরা বরাবরই উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এবারের অনুষ্ঠানে এসব একদিনের বাঙালি ঠেকাতে সরকার নিয়ম করতে পারত, যাঁরা যাঁরা বেল্ট দিয়ে লুঙ্গি পরেন, তাঁদের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিষেধ!
সেলফি তুলবেন না
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলা মানসিক রোগের লক্ষণ! পয়লা বৈশাখের দিন নানা বয়সী মানুষের যেখানে-সেখানে সেলফি তুলে অন্য মানুষের উৎসবে বাধার সৃষ্টি করেন। এসব মানসিক রোগী তথা সেলফি রোগীদের জন্য যদি নিয়ম করা যায়, একটার বেশি সেলফি তুললে জরিমানা হবে, তাহলে নিশ্চিন্তে সেলফি তোলার পরিমাণ কমে যাবে! মানুষও নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
গালে রং মাখাও নিষেধ
অনেকেই গালে কিংবা হাতে ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে বর্ষবরণের আনন্দ উদযাপন করেন। এসব লেখার কারণে অনেকের মুখ দেখে চিনতে অসুবিধা হতে পারে। মুখোশ পরা নিষেধ করার পাশাপাশি গালে রং মাখাও নিষেধ করা যেতে পারে।
‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গান গাওয়া নিষেধ
‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...’ পয়লা বৈশাখে এই গান সব জায়গাতেই গাওয়া হয়। এই গান শুনেই আগ্রহী হয়ে কালবৈশাখী চলে আসে। এসেই সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে। কালবৈশাখীর এই লণ্ডভণ্ড ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ ওই দিন এই গান গাওয়া নিষেধ করতে পারত।
ঢোলের শব্দও বাতিল
অনেকেই উচ্চ মাত্রার শব্দ সহ্য করতে পারেন না। হার্টে সমস্যা হয়, মাথা ধরে। তাঁদের কথা ভেবে নববর্ষের অনুষ্ঠানে ভুভুজেলার পাশাপাশি ঢোলের শব্দও বাতিল করতে পারত। কিংবা ঢোল বাজানো যাবে ঠিকই, তবে সেই ঢোল এমন হতে হবে যেন ঢোল বাজালেও শব্দ না হয়!
মাথাব্যথা হলে মাথা কাটুন
সব শেষে পয়লা বৈশাখে আনন্দ মিছিল হলে ভিড়ের মধ্যে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে পারে—এই অজুহাত দেখিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন বন্ধ করে দিতে পারত। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলাই যেহেতু সমাধান!