উত্থানেও মূলধন কমেছে ৫৩১৯ কোটি টাকা, টপটেনে দুর্বলদের দাপট
বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেন পরিমাণ বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি। তবে ৫৩১৯ কোটি টাকা কমেছে শেয়ারবাজার মূলধন। মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশই টপটেন কোম্পানির দখলে রয়েছে। টপটেনের ৬০ শতাংশই ‘বি’ ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৯৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৫টির, দর কমেছে ৬৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৬টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭১ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ দশমিক৫০৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ এবং বি ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এর আগের সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ এবং বি ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছিল।
গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৩৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই দশ কোম্পানি লেনদেন করেছে ৭৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বি ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ১৫২ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এছাড়া এমারেল্ড অয়েলের (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিচ হ্যাচারী (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যারের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপারের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের (বি ক্যাটাগরি) ২ দমমিক ২৯ শতাংশ এবং শমরিতা হাসপাতালের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ১৪ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।