তবুও টি-টোয়েন্টি দলে নাঈম, চমক মুনিম শাহরিয়ার
সংক্ষিপ্ত ফরমেটে ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে টিকে গেছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টি থেকে মুশফিকুর রহিমের বিশ্রাম পর্ব শেষ হলো একটি সিরিজ দিয়েই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে খেলছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
এদিকে দলে ফিরেছেন ওপেনার লিটন কুমার দাসও। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন সদ্যসমাপ্ত বিপিএলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নজর কাড়া ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার।
সবশেষ গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে এবারের দলে পরিবর্তন আরও বেশ কিছু। ১৬ সদস্যের সেই স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান সোহান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শামীম হোসেন ও আকবর আলি।
এবার ১৪ জনের দলের নতুন মুখ কেবল মুনিম। মুশফিক ও লিটনের পাশাপাশি দলে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে চোটের কারণে ছিলেন না এই অলরাউন্ডার।
প্রথমবার সুযোগ পেলেও মুনিমের ডাক পাওয়া খুব বিস্ময়কর নয়। বিপিএলে এবার ফরচুন বরিশালের হয়ে ৬ ম্যাচে ১৭৮ রান করেন তিনি ১৫২.১৩ স্ট্রাইক রেটে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিজেকে আলাদা করে চেনান তিনি। উইকেটের চারপাশে খেলার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সব শট খেলেও দেখিয়ে দেন নিজের শটের পরিধি।
বিপিএলে অভিষেক আসরে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের আগে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও একই ঘরানার ব্যাটিং দেখিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন ময়মনসিংহের ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে ওই টুর্নামেন্টে ১৩ ইনিংসে ৩৫৫ রান করেন ১৪৩.১৪ স্ট্রাইক রেটে।
মুনিমের ডাক পাওয়া ছিল যতটা প্রত্যাশিত, ততটাই বিস্ময় জাগানিয়া নাঈম শেখের টিকে যাওয়া। যদিও গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। তবে তাকে নিয়ে মূল প্রশ্ন স্ট্রাইক রেটে। গত বছর ২৬ ইনিংসে ৫৭৫ রান করেন তিনি কেবল ১০০.৩৪ স্ট্রাইক রেটে।
সবশেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে তিনি করেন ১ ও ২। তৃতীয় ম্যাচে ৪৭ রান করতে পারলেও বল খেলেন ৫০টি। আরও বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল তার বিপিএলে।
বিপিএলে মিনিস্টার ঢাকার হয়ে ওপেন করার সুযোগই তিনি সেভাবে পাননি। তাদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ শাহজাদ। নাঈম কখনও তিনে, কখনও চারে, এমনকি সাত-আটেও খেলেন। পারফর্ম করতে পারেননি কোনো জায়গায়। এক ম্যাচে তিনে নেমে ১৫ রান করতে খেলেন ৩০ বল! একাদশে জায়গাও হারান এক পর্যায়ে। শেষ ম্যাচে ওপেন করার সুযোগ পেয়ে করেন ৯ বলে ৬ রান। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে ৭ ইনিংস খেলে তার রান ৫০।
এতটা খারাপ না করলেও বিপিএলে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি মুশফিক ও লিটনও। খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৯ ইনিংসে মুশফিক ফিফটির দেখা পান কেবল একটিতে। ২৫১ রান করেন ১২৯.৩৮ স্ট্রাইক রেটে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে তাকে বাইরে রাখার সময় নির্বাচকরা বলেছিলেন বিশ্রাম দেওয়ার কথা। মুশফিক যদিও পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, এটিকে তিনি বাদ পড়া হিসেবে ধরে নিয়েই দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। আপাতত সেই চ্যালেঞ্জে তাকে জয়ী বলা যায়।
পাকিস্তান সিরিজের দলে লিটনের না থাকা ছিল সরাসরি বাদ পড়াই। সবশেষ ১৬ টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটে কোনো ফিফটি নেই। এবার বিপিএল ৯ ইনিংস খেলে ফিফটি কেবল একটি, ২০৯ রান করেছেন ১৩৫.৭১ স্ট্রাইক রেটে। তারপরও ফিরতে পারলেন দলে।
এদিকে সবশেষ সিরিজের স্কোয়াডে থেকেও ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া শহিদুল ইসলাম ও ইয়াসির আলি চৌধুরি টিকে গেছেন দলে। দুজনেরই বিপিএল পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভালো।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। বাকি দুটি ম্যাচ হবে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি। বেলা ১১টায় শুরু হবে ওয়ানডে ম্যাচগুলো। ওয়ানডে সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ।
ওয়ানডে সিরিজের পর ঢাকায় মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আগামী ৩ ও ৫ মার্চ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটি ম্যাচ হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুটি ম্যাচ শুরু হবে বেলা ৩টায়।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল: মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মুনিম শাহরিয়ার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ।