হতাশার ব্যাটিংয়ে লজ্জার হার বাংলাদেশের
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে দিয়েছিলেন তাইজুল-রাহিরা। কিন্তু নিজেদের দায়িত্বটা মোটেও পালন করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। উইকেটে আশা-যাওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। স্রোতের বিপরীতে ছিলেন কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ। দশম উইকেটে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন তিনি। জয়ের আশাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত। ১৭ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্বাগতিকদের।
ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে হেরে হোয়াইটওয়াশ হলো মুমিনুল হকের দল। দুই ইনিংসে নয় উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন রাকিম কর্নওয়াল।
আজ রোববার চতুর্থ ইনিংসে ২৩১ রানের লক্ষ্য। তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই মারমুখি খেলেন তামিম ইকবাল। প্রথম ১০ ওভারে ৪৫ রান তোলেন দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য সরকার। কিন্তু থিতু হতে পারেননি ওপেনাররা। দলীয় ৫৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ১২তম ওভারের প্রথম বলে সৌম্যকে ফিরিয়ে দেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ৩৪ বলে ১৩ রান করে ফেরেন বাঁ-হাতি ওপেনার সৌম্য।
সৌম্য ফেরার পরও নিজের ব্যাটিং স্টাইল ঠিক রেখেছিলেন তামিম। ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। ৪৪ বলে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু হাফসেঞ্চুরির পর হতাশ করেন তামিম। সেট হয়েও ঠিক ৫০ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরেন বাঁ-হাতি ওপেনার।
তামিম ফেরার পর বাকিরা শুধু উইকেটে আশা-যাওয়ার মিছিলেই ছিলেন। মূলত তামিম ফেরার পরই ম্যাচের চিত্র বদলাতে থাকে। শেষ সেশনে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আউট হন বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যান।
তামিমের পর ওয়ানডাউনে নেমে বরাবরের মতো ব্যর্থ হন নাজমুল শান্ত। এরপর কিছুক্ষণ লড়াই করে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিকুর রহিম। ১৪ মিনিটের মাথায় ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুনও।
জীবন পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি অধিনায়ক মুমিনুল। লিটনের সঙ্গে জুটি বেধে থিতু হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও জোড়া ধাক্কা। ১৯ বলে মধ্যে দুজনকেই সাজঘরে পাঠান অতিথিরা। রাকিম কর্নওয়ালের বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন মুমিনুল (২৬)। এরপর কর্নওয়ালের বলেই কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন লিটন (২২)।
এরপর শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আশা জাগিয়ে তোলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু কর্নওয়ালের স্পিনের সামনে পারেননি শেষ করতে।
আজ টেস্টের চতুর্থ দিনে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। আবু জায়েদ রাহি, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের বোলিংয়ে ১১৭ রানে ক্যারিবীয়দের অলআউট করে দেয় স্বাগতিকরা।
দিনের শুরুটা রাঙান রাহি। পরপর তুলে নেন ক্যারিবীয়দের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট। দিনের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে জোমেল ওয়ারিকানকে এলবির ফাঁদে ফেলেন রাহি। ওয়ারিকান ফেরার পর ক্যারিবীয়দের সফল জুটি বোনার ও কাইল মায়ার্সের জুটিও টিকতে দেননি তিনি। মায়ার্সকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন এই পেসার।
রাহির পর উইকেট উৎসবে যোগ দেন তাইজুল ইসলাম। ক্যারিবীয়দের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন তিনি। ফেরান জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে। দুই বোলার মিলে প্রথম ১৪ ওভারে ক্যারিবীয়দের তিন উইকেট তুলে নেন।
দ্বিতীয় সেশনে যেন পাখা মেলেন স্পিনাররা। দ্বিতীয় সেশেনে ২৩ মিনিটের মধ্যে ক্যারিবীয়দের চার উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। মধ্যাহ্নভোজের পর শুরুতে জোড়া উইকেট তুলে নেন তাইজুল। এরপর শেষ দুজনকে ফিরিয়ে ১১৭ রানে অতিথিদের অলআউট করেন নাঈম হাসান।
গতকাল শনিবার প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। ১১৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪১ রান করে তৃতীয় দিন শেষ করে ওয়েস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল দিনের শেষ দিকে ক্যারিবীয়দের তিন উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। একটি করে উইকেট পেয়েছিলেন নাঈম হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪০৯ ও ৫২.৫ ওভারে ১১৭ (বোনার ৩৮, ওয়ারিক্যান ২, মায়ার্স ৬, ব্ল্যাকউড ৯, জশুয়া ২০, জোসেফ ৯, কর্নওয়াল ১, গ্যাব্রিয়েল ১*; তাইজুল ২১-৪-৩৬-৪, নাঈম ১৫.৫-৫-৩৪-৩, মিরাজ ৬-১-১৫-১, আবু জায়েদ ১০-৪-৩২-২)।
বাংলাদেশ : ২৯৬ ও ৬১.৩ ওভারে ২১৩/১০ (তামিম ৫০, সৌম্য ১৩, শান্ত ১১, মুমিনুল ২৬, মিঠুন ১০, লিটন ২২, মিরাজ ৩১, তাইজুল ৮, নাঈম ১৪, রাহি ০; কর্নওয়াল ৩০-৫-১০৪-৪, জোসেফ ২-০-১৬-০, গ্যাব্রিয়েল ২-০-৮-০, ওয়ারিক্যান ১৬.৩-৪-৪৭-৩, ব্র্যাথওয়েট ১১-১-২৫-৩)।
ফল : ১৭ রানে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।