এনটিভির ফেসবুক পেজে ৭৫ লাখ লাইক
২০১৫ সাল। দেশের শীর্ষস্থানীয় দীর্ঘদিনের এক টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে জন্ম নিল নতুন এক মাধ্যম। এনটিভির পরিচয় এক নামে, তার সঙ্গে যুক্ত হলো এনটিভি অনলাইন। টেলিভিশনের সুদীর্ঘ সুনামকে সমুন্নত রেখে হাল সময়ের সবচেয়ে ত্বরিত যোগাযোগমাধ্যম অনলাইনের পরিসরেও নিজের অবস্থানকে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল লক্ষ্য। আর এই পথচলায় দ্রুততম সময়ে ৭৫ লাখ লাইক এখন এনটিভির ফেসবুক পেজে।
ফেসবুক এখনকার সময়ে যে সবচেয়ে শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যমের একটি, তা বোদ্ধা থেকে শুরু করে অতি সাধারণেও বোঝেন বটে। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব গণমাধ্যম তাদের সংবাদ কিংবা কনটেন্ট শেয়ারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ফেসবুক। আর এই ফেসবুকে যে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে গড়ে তুলতে হবে, এ বিষয়ে শুরু থেকেই ফোকাস্ড ছিল এনটিভি অনলাইন। সংবাদ, বিনোদন কিংবা পাঠকের প্রয়োজন কিংবা তাৎক্ষণিক খবর—সবকিছুই পাঠকের দোরগোড়ায় সেলফোনে কিংবা কম্পিউটারে পৌঁছে গেছে এনটিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের সুবাদে।
এই সাফল্যের গল্প ফেসবুকের, তবে সেটি বলতে যাওয়ার আগে এনটিভি অনলাইনের শুরুর গল্পটা একটু যে না বললেই নয়। আর অনেক সাফল্যের আখ্যানের মতো মোটেই আয়েশে শুরু হয়নি এই যাত্রা। সহজাত সহযোগিতার বদলে প্রতিনিয়ত এসেছে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা, পূর্বতন সুনামকে সমুন্নত রাখা—এর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তো যুদ্ধটা নিরন্তর। বড় বড় তারকাদের সন্তানের ক্ষেত্রে যে বিপত্তি চিরাচরিত, এনটিভি অনলাইনকেও এর মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু করতে হলো।
ছোটখাটো একটা অফিস, নেহাত হাতেগোনা মানুষ না হলেও বিশাল কোনো দল নয়; বহু প্রশ্ন, কৌতূহল আর সংশয়কে সঙ্গী করেই যাত্রা শুরু করল এনটিভি অনলাইন। একটি বিষয়ে শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল একেবারে ছকে কাটা—বস্তুনিষ্ঠতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে পাঠককে একেবারে ভিন্ন আর সেরা অনলাইন ব্যবহারের অভিজ্ঞতার স্বাদ পাইয়ে দেওয়া। কাজেই কেবল সংবাদ আর শব্দের নিরন্তর বোঝাই নয়, সঙ্গে দেশ-বিদেশের এজেন্সির থেকে মোটা টাকা খরচা করে ছবি আর ভিডিওর কনটেন্ট প্রাপ্তি। আর প্রতিমুহূর্তে নতুন কিছু পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লড়াই। তার অন্যতম হাতিয়ার ফেসবুক।
তবে চাইলেই একটার পর একটা খবর ফেসবুকে দিলে কি চলবে নাকি? তার জন্য চাই ত্বরিত সিদ্ধান্ত, সময়ানুগ, আপলোড, অডিয়েন্স ট্রাফিক, ডেমোগ্রাফির মতো আরো অজস্র হিসাব-নিকাশের বিষয়। এনটিভির ফেসবুক পেজ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সময় এই সিদ্ধান্তগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের মধ্যে প্রথমেই এনটিভি অনলাইনে ফেসবুকের ‘ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল’ ফিচারটি সংযুক্ত হয়েছে। মূল ফেসবুক পেজের সঙ্গে রয়েছে আরো বেশ কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ফেসবুক পেজ। এগুলোর মধ্যে এনটিভি এন্টারটেইনমেন্ট, এনটিভি স্পোর্টস, এনটিভি লাইফস্টাইল, অপিনিয়ন অ্যান্ড আর্টস নানান ঘরানার পাঠকের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
এই বিশাল কনটেন্ট মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ফেসবুক। কি স্মার্টফোনে, কি ডেস্কটপে, কি ল্যাপটপে কিংবা ট্যাবে—ফেসবুক স্ক্রলিংয়ের সঙ্গেই সংগত মিলিয়ে অজস্র পাঠক এখন হদিস নেন সংবাদ থেকে বিনোদন, খিড়কি থেকে সিংহদুয়ারের। এনটিভি অনলাইন গুরুত্ব দিল ফেসবুককে, কিন্তু সেটা ডলারের পর ডলার খরচ করে পাঠকের নাকের সামনে জোর করে কনটেন্ট ঠেলে দিয়ে নয়। সেরা এবং মোক্ষম কনটেন্ট প্রতিনিয়ত তৈরি করাটাই হয়ে উঠল লক্ষ্য।
এ জন্য স্রেফ কনটেন্ট তৈরি করলেই তো আর চলে না। পাঠকের মানসিকতা, চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা, আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে হয় সময় আর দেশ-বিদেশের সীমানার সুক্ষতর সমীকরণ। যে লেখাটি আমাদের দেশের জন্য একেবারেই দরকার নেই, সেই লেখাটির জন্যই হয়তো দীর্ঘদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক প্রবাসী। তিনিও তো পাঠক, তাঁর চাহিদাও তো বুঝতে হবে, সংবাদকর্মীর নিরন্তর দায়িত্বের ঝুলি থেকে সেটা বাদ দেওয়া যে ঘোরতর অন্যায়। এ জন্য দিনের পর দিন, প্রতিনিয়ত চলে অজস্র গবেষণা, মিটিং, দীর্ঘক্ষণের আড্ডাতেও অবিরত আলাপ, আরো কী করা যায়! প্রথাগত নিয়মকে ভেঙে দেওয়ার জন্য আগে নিয়মটাকে খোলতাই করে জানা চাই, তারপর সেটা নিয়ে বিস্তার এক্সপেরিমেন্ট। তার মধ্য দিয়ে তো প্রতিনিয়তই এগিয়ে চলছে এনটিভি অনলাইন।
মাসুদ রানার বিভিন্ন বই যাঁরা পড়েছেন, দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্ধর্ষ দুঃসাহসী স্পাই রানার রোমাঞ্চকর গল্প, এনটিভি অনলাইনের এই পথ পাড়ি দেওয়াটাও বুঝি তেমনই। পার্থক্য একটাই, ‘টেম্পল রান’ ভিডিও গেমসের মতোই এ দৌড়ের কোনো শেষ নেই। কেবল এগিয়ে যেতে হবে সময় আর পথের লেন-বাই লেন-তস্য লেন ধরে; আর গতি কেবলই বেড়ে চলবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় সব গণমাধ্যম থেকে বাছাই করে নেওয়া সব সংবাদকর্মী লিটারেলি দিনের চব্বিশটা ঘণ্টা বুঁদ হয়ে গেলেন এই অভিযানে। একবার ফেসবুক নিয়ে কিছু সমস্যা হলো, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক মানুষের চেহারার দিকে যেন তাকানো যায় না! রাজ্যের বিষণ্ণতা সেখানে ভর করেছে। তার পরে দ্রুত সময়ে সে সমস্যার সমাধানও হয়েছে।
কাগুজে পত্রিকার সঙ্গে অনলাইনের অলিখিত মল্লযুদ্ধ দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে, সেটিকে ছাপিয়ে এনটিভি অনলাইন মনোযোগ দিল আরো একটি ভিন্ন দিকে, আর তা হলো ভিডিও কনটেন্ট। মানুষ এখন শুধু পড়তে চায় না, সঙ্গে নিজে চোখে দেখতে চায় পুরো বিষয়টা। আর শুধু তথ্যের ঠাসবুনোটে বোঝাই হয়ে থাকা কাঁহাতক কুলোয়! সঙ্গে বিনোদনের জন্য রইল এনটিভির অফুরন্ত সেরা মানের টেলিফিল্ম, নাটক, রিয়েলিটি শো, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান—আরো কত কী! অনলাইনের জন্য কেবল পাঠক নয়, একই সঙ্গে দর্শক ও শ্রোতা সৃষ্টি করে দেশের ইনফোটেইনমেন্ট পোর্টাল গড়ে তোলার লক্ষ্যে শুরু হলো এক কঠিন যাত্রা।
ভালো কাজের ফল নাকি সহসা দ্রুত আসে না। তবে এতগুলো মানুষের একান্ত যে পরিশ্রম, তা ছিল এক সম্ভাবনাময় বীজকে মহীরুহ করে তোলার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম। আর পরিসংখ্যানের উত্থান-পতন মিলিয়ে দিন শেষের যে স্পষ্ট ফল, তা দেখিয়ে দিচ্ছে যে কাজের ফল ভালো তো আসবে বটেই, বরং দ্রুতগতিতেই আসবে। দুই বছরেরও কম সময়ে এনটিভি অনলাইনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এখন লাইক ৭৫ লাখ ছাড়াল। এ ছাড়া আলাদা ফেসবুক পেজগুলোতেও রয়েছে হাজার হাজার পাঠকের বিশ্বাস আর সংযুক্তির লাইক। এই লাইকগুলো স্রেফ সংখ্যা নয়, আস্থার বুনিয়াদে একের পর এক গেঁথে বসা ইট; লক্ষ্য যার আকাশ ছাড়ানো। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একটা সময় কত পাঠক থাকবেন, লক্ষ্য আরো কতদূর? প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলা পাঠকের সংযুক্তি সংখ্যার পরও এ প্রশ্নের জবাব সহজ নয়, আসলে নেইও বলা যায়।
স্কাই হ্যাজ নো লিমিট!