ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে ফ্রান্সের প্রতি সমবেদনা
রংধনু প্রোফাইল পিকচারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? জুন মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সমকামীদের অধিকারপ্রাপ্তির পর তাদের সমর্থন জানিয়ে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার রাঙিয়েছিল রংধনু রঙে। একই ধরনের ফিচার আবার দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। তবে এবার সেটি ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের মানুষের জন্য।
শুক্রবার প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভার্চুয়াল জগতে ফেসবুককে প্রচণ্ড সোচ্চার দেখা গেছে। প্রথমে ব্যবহারকারীদের বন্ধু এবং স্বজনরা নিরাপদ আছে কি না, সে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘সেফটি চেক’ চালু করা হয়।
এরপর শনিবার সকালে প্রোফাইল পিকচার অপশনে ফ্রান্সের পতাকার একটি ফিল্টার চালু করা হয়, যার মাধ্যমে সবাই ফ্রান্স ও দেশটির জনগণকে সমর্থন জানাতে তাদের প্রোফাইল পিকচার ফ্রান্সের পতাকার রঙে সজ্জিত করতে পারবে।
গতবারের মতো এবারও ফেসবুককর্তা মার্ক জাকারবার্গ নিজেই প্রোফাইল পিকচার রাঙিয়েছেন ফ্রান্সের পতাকার নীল-সাদা-লাল রঙে।
এবার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যও চাইলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়া যাবে। ফিল্টারের নিচে অপশন রয়েছে আপনি কত দিন বা কত সময়ের জন্য এটি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে রাখতে চান—এক ঘণ্টা, একদিন নাকি এক সপ্তাহ। নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে গেলে আপনাআপনি প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন হয়ে আবার পুরোনোটি চলে আসবে। ফিল্টারটি ওয়েব ও মোবাইল দুই ভার্সনেই চালু রয়েছে।
এ ছাড়া অনেকেই ‘প্রে ফর প্যারিস’ নামে কভার পিকচার বা প্রোফাইল পিকচার আপলোড করেছেন ফ্রান্সের সমর্থনে। অনেকেই আবার ফ্রান্সের বিভিন্ন খবর শেয়ার দিয়েছেন #prayforparis হ্যাশট্যাগ দিয়ে। ওই হ্যাশট্যাগে ক্লিক করলে ফেসবুকে প্যারিস হামলা এবং এর সাহায্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
ফ্রান্সে হামলার প্রতিবাদে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব তাদের লোগোতে ফ্রান্সের পতাকার প্রলেপ লাগিয়েছে।
পিছিয়ে নেই টুইটারও। প্যারিসে অবস্থানরত হৃদয়বান ব্যক্তিরা টুইটারে #PourteOuverte লিখে হ্যাশট্যাগ দিচ্ছে, যার অর্থ হলো ‘খোলা দরজা’। সন্ত্রাসী হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় এবং সাহায্য প্রদান করার ইচ্ছা থেকেই তারা এটি টুইট করছে।
অনেক মানুষ এই টুইট দেখে সহায়তা গ্রহণ করছে। প্যারিসের ট্যাক্সি ড্রাইভাররা তাদের মিটার বন্ধ করে রেখেছে। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তারা কোনো টাকাই নিচ্ছে না। সকাল থেকে এ সংবাদও ছড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।
সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে দোষারোপ করা হয় বিভিন্ন কারণে। বলা হয়, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল হাতে মানুষ শুধু ভার্চুয়াল জগৎ নিয়েই পড়ে থাকে। আসল জীবনে মানুষ একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু প্যারিসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এ ঘটনার পর তাদের অনেকেরই হয়তো ভুল ভাঙবে।
শুধু চ্যাট করা আর সেলফি আপলোড নয়, ফেসবুক আর টুইটারের মতো মাধ্যমগুলো প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগটিও করে দিতে পারে।