ফেসবুকে ‘ট্যাগ’ করায় আদালতে!
ফেসবুক যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা জানেন এখানে বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত মানুষকে কোনো পোস্ট বা ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়, ফেসবুকে এটি ‘ট্যাগিং’ হিসেবে পরিচিত। তো এই ট্যাগ করার ঘটনা হরহামেশাই ফেসবুক ব্যবহারকারীরা করে থাকেন। কিন্তু তাই বলে মামলা-মোকদ্দমায় হবে কেন? কিন্তু এমন ঘটনাই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্পর্কে সাবেক ননদ, তাঁকে ফেসবুকে ট্যাগ করায় আদালতে দাঁড়াতে হচ্ছে মারিয়া গনজালেসকে। তিনি নিউইয়র্কের বাসিন্দা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছরের জন্য জেলও খাটতে হতে পারে তাঁকে। অবশ্য ঘটনা যতটা সাদামাটা মনে হচ্ছে, ততটা সরল নয়। এর মধ্যে আইনি জটিলতাও রয়েছে। এ খবর ফলাও করে ছাপিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দি ইনডিপেনডেন্ট।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন মারিয়া নিজেই। সাবেক শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। তাতে আবার ট্যাগ করে দেন তাঁর সাবেক ননদ মারিবেল কালডেরনকে।
ফেসবুক পোস্টে মারিয়া ইংরেজিতে লিখেছিলেন, ‘তুমি এবং তোমার পরিবারের সবাই হতাশ। তোমাদেরকে আরো শক্ত হতে হবে। আমি এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। এখন তোমাদের কোনো কিছুতেই আমার কিছু যায় আসে না।’
এতটুকু হলেও হতো। পরে আবার সাবেক ননদ মারিবেলকে ‘গাধা’ বলেও তিরস্কার করেন মারিয়া।
মারিবেলের ভাই রাফায়েল কালডেরনের সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটানোর জন্য বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন মারিয়া। আর সেখানে আদালতের নির্দেশ ছিল বিচ্ছেদের পর কালডেরনের পরিবারের সঙ্গে কোনোভাবেই কোনো যোগাযোগ করতে পারবেন না মারিয়া। এমনকি মেইল, টেলিফোন, ভয়েস মেইল বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করেও যোগাযোগ করা হলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিন্তু ফেসবুক পোস্টে সাবেক ননদকে ট্যাগ করে আদালতের সে নির্দেশ ভঙ্গ করেছেন মারিয়া। আর সে কারণেই তাঁর সাজা হতে পারে। আদালতের নির্দেশ ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল হতে পারে মারিয়ার।
অবশ্য মারিয়ার আইনজীবী কিম ফ্রোলিঙ্গার বলেছেন, আদালতের আদেশে ফেসবুকের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। কিন্তু ফ্রোলিঙ্গারের সঙ্গে ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক সুসান কাপেসি একমত নন। তিনি বলেন, ‘মারিয়ার প্রতি নির্দেশনা ছিল কোনো রকমের ইলেকট্রনিক মাধ্যম তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না সাবেক শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। ফেসবুক তার মধ্যেই পড়ে। ফেসবুকে তিনি তাঁর পোস্টে সাবেক ননদকে ট্যাগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে!’
২০১৪ সালে নিউইয়র্কের একটি আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, ফেসবুক ম্যাসেজকেও ইমেইল হিসেবেই গণ্য করা হবে। সে হিসেবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে সেটাতে ট্যাগ করা হলে সেটাও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মধ্যেই পড়ে। ট্যাগ করে আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে মারিয়াকে, এখন দেখার বিষয় এই ‘অপরাধে’ তাঁকে কারাবাস করতে হয় কি না!