২০২৩ সালের ১০ জনপ্রিয় এআই টুলস
বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই টুলসের এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। আর বাড়বেই বা না কেন! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব সহজেই সকল কাজ সম্পাদন করে থাকে। তথ্য প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট তৈরি, বিভিন্ন গবেষণা এমনকি কোডিং পর্যন্ত এআই দিয়ে করানো হচ্ছে। আর অদূর ভবিষ্যতে এটি আমাদের কাজকে আরও সহজ করে তুলবে। এআই এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব এ আই টুলস বের করে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। যার ফলে ব্যবহারকারীরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে যায় কোন এআই ব্যবহার করবে সেটা নিয়ে। আজকে ২০২৩ সালের এমন ১০ জনপ্রিয় এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা জানাবো যাদের ব্যবহার করে আপনি সহজেই দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজগুলো করতে পারবেন।
১. চ্যাট জিপিটি (Chat GPT)
এ আই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের মতো করে চিন্তা করতে সক্ষম তাদের মাঝে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল চ্যাট জিপিটি। ২০২২ সালের শেষের দিকে এই এআইয়ের আর্বিভাব মানুষের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি করে। এর পারফরমরন্সে মুগ্ধ হয়ে মাত্র পাঁচ দিনে এর ব্যবহারকরীর সংখ্যা হয়ে যায় ১ মিলিয়ন। অথচ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট এ সকল জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ে নি। এক্ষেত্রে চ্যাট জিপিটি অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছে। চ্যাট জিপিটি মূলত একটি ওপেন এআই দিয়ে তৈরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এতে লিখে যেকোনো ধরনের কমান্ড দেওয়া যায়। চ্যাট জিপিটি দিয়ে ওয়েব সাইট তৈরি, কোডিং, গবেষণার কাজসহ আর্টিকেল,গল্প, কবিতা ইত্যাদি লেখা যায়। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল এর লেখা গুলো খুবই মানসম্মত যা দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো কোনো এআই দিয়ে লেখা।
২. বার্ড এআই (Bard AI)
গুগল এর তৈরি করা এআই হল বার্ড এআই যা একধরণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট। এটি ২০২৩ সালের ২১মার্চ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে ১৮০টির বেশি দেশে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত চ্যাট জিপিটির সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্যই বার্ড এআইকে আনা হয়েছে। Bard শব্দের অর্থ হল কবি। একজন কবি -গায়ক যিনি রচনা ও আবৃত্তিতে দক্ষ। তাই google এর বার্ড এআই টুলসটি ব্যবহারকারীর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে খুবই দক্ষ। Bard এ Google এর লেটেস্ট লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLM),PaLM 2 ব্যবহার করা হয়েছে । যার ফলে এটি নির্ভুল কোডিং,গণিত সমাধান ও যুক্তিগত দক্ষতায় পারদর্শী।
৩.টেনসরফ্লো (Tensorflow)
গুগল এর একটি মেশিন লার্নিং ফ্রেমওর্য়াক হচ্ছে টেনসরফ্লো। এর মাধ্যমে ডিপ লার্নিং ও নিউরাল নেটওর্য়াক মডেল তৈরি করা সহ ট্রেইনও করা যায়। Python, javascript, c++, Julia এই প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো ব্যবহার করে এই প্লাটফর্মে মেশিন লার্নিং মডেলগুলো আরও উন্নত করা যায়। টেনসরফ্লো মূলত একটি সফটওয়্যার লাইব্রেরি যা স্কেলাবল ও হাই পারফরমেন্সের মেশিন এ্যালগারিদমকে স্কেল করার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪.ক্যাফে (Caffe)
ক্যালির্ফোনিয়া ইউনিভার্সিটি Caffe কে নির্মাণ করেছে Python ইন্টারফেস বিশিষ্ট ওপেন-সোর্স হিসেবে কাজ করার জন্য। মূলত একাডেমিক কাজে অর্থাৎ গবেষণায় সাহায্য করার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি শিল্পক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছবি প্রক্রিয়াকরণের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয়। । এটি প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন ছবি প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে তাই এর ব্যবহারকারীদের মাঝে এই এআই ভীষণ জনপ্রিয়।
৫. এইচটুও এআই (H2O AI)
যারা ডেটা সায়েন্টিস তাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় একটি AI হল H2O । তাছাড়া যারা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে তারাও এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে থাকেন। H2O মূলত মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং ও জটিল এ্যালগারিদম পরিচালানার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া একে ব্যবহার করে বিভিন্ন এ্যালগারিদমের কাজগুলো দ্রুত করার পাশাপাশি ট্রেইনও করা যায়। H2O ক্লাউড কম্পিউটিং এর জটিল কাজগুলোও সহজে করে দিতে পারে।
৬.কেরাস (keras)
Keras হল Python ইন্টারফেস বিশিষ্ট ওপেন-সোর্স নিউরাল নেটওর্য়াক লাইব্রেরি। এই এআই টি মূলত প্রোটোটাইপিং ও ডিপ লার্নিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়। অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য keras ব্যবহার করা হয়। keras দিয়ে সহজেই CPU ও GPU রান করা যায়।
৭. সাইকিট লার্ন (Scikit Learn)
Scikit Learn মূলত একটি মেশিং লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। এটি বহুল ব্যবহৃত হলেও এটি দিয়ে শুধু CPU রান করা যায়। এটি তৈরি করতে SciPy ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাথে Numpy, Matplotilib, Sympy, Pandas ব্যবহার করা হয়েছে। এই এআই টি দিয়ে মূলত ডেটা মডেলিং এর কাজ করা হয়ে থাকে।
৮. ওপেন এনএন (Open NN)
Open NN এর পূর্ণরূপ হল Open Neural Network যা একটি ওপেন-সোর্স লাইব্রেরি। লেখার ক্ষেত্রে এটি C++ ভাষা ব্যবহার করে আর ডিপ লার্নিং এর কাজে একে ব্যবহার করা হয়।
৯. ইনফোসেস নিয়া (InFosys Nia)
InFosys Nia AI টি তৈরি করেছে ভারত। এই এআই টি বর্তমানে ৫০টির বেশি দেশের ব্যবহারকারীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই এআই টি মূলত মেশিন লার্নিং বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই এটি ব্যবহার করে নানা সমস্যার সমাধান করে থাকে।
১০.পাইটর্চ (PyTorch)
আপনি কি জানেন যে মেটার (ফেসবুক) নিজস্ব একটি এআই সিস্টেম আছে? যা ২০১৭ সালে উন্মুক্ত করা ব্যবহারকারীদের জন্য। মেটার এআই হল PyTorch এটি মূলত GitHub কোডিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় থাকে।
এই এআই গুলো ছাড়াও আরও অনেক এআই রয়েছে যাদের দিয়ে আরও নানান রকমের কাজ করানো হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি Google এ সার্চ করেন তবে এদের নামগুলো প্রথমে আসবে। কারণ এআই ব্যবহারকারীদের মাঝে এরা ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে। আর তাছাড়া প্রযুক্তিশিল্পে প্রতিনিয়তই পরিবর্তন আসছে তাই হয়তো ভবিষ্যতে আজ যে এআই গুলো জনপ্রিয় সেগুলো হারিয়ে যাবে। আর নতুন কোনো এআই দখল করে নিবে পুরোনো এআই গুলোর জায়গা। তবে ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই গুলোই শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ইউটিউব