জেনে নিন
এসির রিমোট ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক নামিদামী এসি ব্র্যান্ড আছে। প্রত্যেক ব্র্যান্ডের এসিকে নিয়ন্ত্রন করতে হয় রিমোট ফাংশনের মাধ্যমে। কম বাজেটের মধ্যে ভালো মানের ইনভার্টার এয়ার কন্ডিশনার চালাতেও রিমোটের বিকল্প নেই। তবে এসি যত ভালো মানেরই হোক না কেন এর যথাযথ ও সঠিক ব্যবহার না জানলে পরতে হতে পারে বিপদ। আর তাই আজকের লেখাটি আমরা সাজিয়েছি এসির রিমোর্ট কন্ট্রোলের বিভিন্ন মোডের ব্যবহার ও কন্ট্রোলের বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে। কম দামের এয়ার কন্ডিশনার বা বেশি দামের যেমনি হোক না কেন এদের রিমোট ফাংশন প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
অন/অফ বাটন
প্রথমেই আসি অন-অফ বাটন মোডে। এই বাটনটি দিয়ে আপনি এসি বন্ধ এবং চালু দুটো কাজ করতে পারবেন। অর্থাৎ এটি হচ্ছে আপনার এসির কন্ট্রোলার প্যানেল।
প্লাস/মাইনাস বাটন
এর মাধ্যমে এসির তাপমাত্রা বাড়াতেও পারবেন চাইলে কমাতেও পারেন। সাধারণত এসিতে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১৫.৫ ডিগ্রি সে. থাকে এবং আপনি কন্ট্রোল বারে থাকা এই মোডের মাধ্যমে সহজে এটিকে বাড়াতে ও কমাতেও পারবেন যা অটো কন্ট্রোল বারে সম্ভব হয়না। এছাড়াও আপনি এই মোডের সাহায্যে কয়ঘন্টার জন্যে তাপমাত্রা কমাতে চাচ্ছেন তার এলার্ম ও সেট করে রাখতে পারবেন। এর জন্যে আপনাকে হয় প্লাস অথবা মাইনাস বাটনের যে কোন একটি বোতাম প্রেস করতে হবে।
হিট বাটন
এই বাটনের মাধ্যমে আপনার এসির ঠান্ডা হাওয়া গরমে পরিণত হবে। এবং এর ফলে এসির তাপমাত্রাও আপনি শীতকালে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
ফ্যান বাটন
ফ্যান বাটন মোডের মাধ্যমে আপনি এসির ফ্যানের স্পীডকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। মূলত ফ্যানের স্পীডকে ৪ রকমভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে লো, মিডিয়াম, মিডিয়াম, হাই এবং কোয়াইট।
আই ফিল বাটন
একজন ব্যবহারকারী যখন এই মোডে চাপ দেন তখন এসির কন্ট্রোল বার তার ঘরে বহমান তাপমাত্রাকে সহজেই চিহ্নিত করে ফেলে। আর যার কারণে আপনার ঘরের সহনশীল তাপমাত্রা অনুযায়ী এসি কন্ট্রোল প্যানেলও একজন ব্যক্তির আরামদায়ক তাপমাত্রা প্রদান করে থাকে। এর ফলে আপনি আপনার শরীরের রিল্যাক্সেশন অনুযায়ী তাপমাত্রা এই এসির মাধ্যমে অনুভব করতে পারেন। এর পাশাপাশি ও আই ফিল বাটন দিয়ে আপনি আপনার ঘরে সহনীয় তাপমাত্রাও বৃদ্ধি ও হ্রাস করতে পারবেন। শুধু খেয়াল রাখবেন এই মোডটি চালু থাকার সময় রিমোটটি যাতে এসির কাছাকাছি থাকে এবং তাপমাত্রা যাতে অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি না পায়। রিমোট যে স্থানে থাকে সেখানের তপমাত্রা এই ধরনের ফাংশন সুবিধা শুধুমাত্র গ্রী এসি এর মধ্যে থাকে।
আপ-ডাউন সুইং বাটন
এসির উপর নিচ এবং বাম ও ডান অংশ নিয়ন্ত্রণের জন্যে এই মোডটি অনেক বেশি মাত্রায় প্রয়োজনীয়। আপ-ডাউন সুইং বাটন মোড এর জন্যে কন্ট্রোল প্যানেলকে অন করার জন্যে কন্ট্রোলারের অন বাটনটি প্রথমে প্রস করতে হবে। এবং বন্ধ করার জন্যে ডিসপ্লে বাটনের টার্ন অফ বাটনটি চাপলেই এসির কন্ট্রোল বন্ধ হয়ে যাবে। মূলত এই বাটনটির মাধ্যমে এসির কন্ট্রোলার দিয়ে দুই থেকে তিনের অধিক সময় ফ্ল্যাশিং এবং টার্ন অন ও আউট করতে পারবেন।
মোড বাটন
এই বাটনটিতে আপনি নানা ধরণের আইকন দেখতে পাবেন। এসির প্রত্যেকটি কন্ট্রোলার প্যানেলে পাঁচ ধরনের আইকন লক্ষণীয়। এর মধ্যে অটো সিলেক্ট বাটন, কোল বাটন, ড্রাই বাটন, এবং হিট বাটন। এই পাঁচটি আইকনকে আপনি আপনার সুবিধার্থে যে কোনো সময় ব্যবহার করতে পারবেন।
অটো সিলেক্ট বাটন- এসির তাপমাত্রাকে অটোমেটিক্যালি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
কুল বাটন - এসির কন্ট্রোলিরকে কুল মোডে নিয়ন্ত্রণ করে।
ড্রাই বাটন- এই বাটনের মাধ্যমে আপনি এসির ড্রাই অপশনকে সিলেক্ট করতে ও সেই অনুযায়ী এসিকে ড্রাইভ করতে পারবেন।
ক্লক বাটন
ক্লক বাটন মোডের মাধ্যমে এসিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনরায় সচল ও বন্ধ করতে সক্ষম হবেন। এখানেই আগের মতো যে কোনো একটি প্লাস বা মাইনাস বাটন চাপলে আপনার টাইমারটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক মিনিট করে বৃদ্ধি পাবে। আবার একইভাবে এই সময়ের পরিমাণ আপনি কমাতেও পারবেন।
হিউমিডিটি / হেলথ বাটন
এসির মাধ্যমে ঘরের ভিতরে আদ্রতা ঠিক রাখার জন্য এই ধরনের হিউমিডিটি বাটন ব্যবহার করা হয়। হেলথ মোড ব্যবহার করে বাতাসে আয়নের পরিমাণ এবং অবস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। এটি ঘরের ভিতরের বাতাসে জীবাণুকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং ঘরের বাতাস দ্রুত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
এয়ার বাটন মোড
ঘরের বায়বীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত বাতাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই বাটনটি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্যে শুধু আপনাকে রিমোট কন্ট্রোলে এসির এয়ার বাটন আইকনে চাপ দিতে হবে।
লাইট বাটন
লাইট বাটনে চাপ দিলে এসির ইনডোর ইউনিটের লাইট জ্বলে উঠবে। অন্যদিকে এই একি বাটনে পুনরায় প্রেস করলে আপনার এসির ইনডোর ডিসপ্লে লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।
স্লিপ বাটন
এই মোডে আপনি ঠিক চারটি মোড পাবেন স্লিপ-১, স্লিপ-২, স্লিপ-৩ এবং স্লিপ-৪ বাটন। একই বাটনে পুনরায় চাপ দিয়ে আপনি মোডটি বন্ধও করে দিতে পারবেন। স্লিপ-১ থেকে স্লিপ-২ বাটনে চলাকালীন এসি একটি নিদিষ্ট পরিক্রমায় চলতে থাকবে। আবার পুনরায় স্লিপ-৩ থেকে স্লিপ-৪ মোডের মধ্যে এয়ার বাটন মোড অন্যতম। এয়ার বাটন মোড এবং স্লিপ-৩ মোড একত্রে চাপলে আপনার এসিটি একটি পার্সোনালাইজডভাবে চলতে থাকবে।
আবার স্লিপ-৪ মোডটি হচ্ছে সিয়েস্টা মোড, এখানে আপনার সেট করা তাপমাত্রা কক্ষ তাপমাত্রা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে থাকবে। অর্থাৎ এখানে আপনি এসিকে ম্যানুয়ালি সেট করতে পারবেন না, উপরন্তু এই মোডটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে কোয়াইট ফ্যান মোডটিও অটোমেটিক্যালি চলতে শুরু করবে।
সতর্কতা
এসির প্রত্যেকটি মোড সম্পর্কে বিস্তারিত উপরে আলোচনা হয়েছে। একটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ তা হচ্ছে-
– কখনোই এসির তাপমাত্রাকে হাই ভোল্টেজ বা একেবারে লো ভোল্টেজে রাখা যাবে না। এতে করে এসি লোড হতে সময় লাগবে।
– মাসে অন্তত একবার এসি সম্পূর্ণ বন্ধ করে বাহ্যিক ময়লা পরিষ্কার করুন। এসির সামনের দিকটা একটি শুকনো ব্রাশ বা নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।
– এসির যে কোনো টাইমার সেট করার আগে আপনার এসির ভোল্টেজ ও তাপমাত্রা চেক করে নিন।
– ইউনিট ফ্যান ও পরিষ্কার রাখুন এবং সেই সাথে সাথে সার্কিট ব্রেকারের কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটিও যাচাই করে নিন।
সূত্র : বিডিস্টল ডটকম