বিপজ্জনক ছত্রাক নিয়ে দুশ্চিন্তা
বিজ্ঞানীরা একাধিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চমকপ্রদ অগ্রগতি দেখিয়েছেন। কিন্তু বিপজ্জনক ছত্রাক মোকাবিলার হাতিয়ার এখনো বিরল। বিশেষজ্ঞরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন।
অ্যাস্পেরজিলাস ফিউমিজেটাস নামের ছত্রাক ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। ক্যানডিডা অরিস এমন এক ইস্ট বা খামির, যা রক্তে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। অথবা ক্রিপ্টোককাস নিওফরম্যান্স আমাদের কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেমের উপর হামলা চালাতে পারে।
এমন ফাংগাল ইনফেকশন গোটা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠছে। কোলন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রো. ড. অলিভার কর্নেলি বলেন, ‘ঘটনা হলো, আমরা ছত্রাকের প্রতি অতি কম মনোযোগ দেওয়ার কারণে সেগুলো যে সংক্রমণ ঘটায়, তা মোকাবিলার জন্য আমাদের হাতে খুব কম ওষুধ রয়েছে। সেটা একটা সমস্যা বটে। ফাংগাল ইনফেকশন এখনকার মতো ঘনঘন ঘটতে থাকলে সেগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য আমাদের হাতে খুব কম হাতিয়ার রয়েছে।’
ডাক্তাররা আরো ঘনঘন অ্যাস্পেরজিলাস ফিউমিজেটাসের কারণে সংক্রমণ লক্ষ্য করছেন। এই ছত্রাক সাধারণত সুস্থ মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু দুর্বল ইমিউন সিস্টেম থাকলে অথবা অ্যাস্থমা বা হাঁপানির রোগী হলে সেটি ফুসফুসে প্রদাহ ঘটাতে পারে। তবে ডাক্তাররা প্রায়ই রোগের লক্ষণের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছত্রাককে বিবেচনা করেন না। বিশেষ করে রোগীর হাঁপানি রোগ থাকলে তাঁরা ভাবেন, এমনিতেই কাশি হওয়া স্বাভাবিক।
ল্যাবে ব্রনকোস্পোপি করে মিউকাস বা শ্লেষ্মা পরীক্ষা করা যায়। সেই সঙ্গে রক্তের নমুমা পরীক্ষা করে দুইয়ের ফল মিলিয়ে মোল্ড বা ছত্রাকের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পালমোনোলজিস্ট হিসেবে প্রো. ক্লাউস এফ রাবে জানালেন, ‘এই উপকরণের মধ্যে স্পোর বা রেনু পাওয়া যায়, অ্যাস্পেরজিলাস বা এই মোল্ড শনাক্ত করা যায়। তারপর রক্ত পরীক্ষা করে সেই মোল্ডের মোকাবিলার অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়। ত্বকের পরীক্ষা করেও মোল্ড মোকাবিলার অ্যান্টিবডির সন্ধান করা যায়। তখন রোগ নির্ণয় করে অ্যালার্জিক ব্রনকোপালমোনারি অ্যাস্পারজিলোসিসের সঙ্গে গুরুতর হাঁপানি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়।’
সেটাই হলো ছত্রাকের রেনুর প্রতি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া। সেই রোগই ফুসফুসে প্রদাহ ঘটায় এবং গুরুতর মাত্রায় শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে। ভাগ্য সামান্য ভালো থাকলে অ্যান্টি-ফাংগাল ওষুধ ও কর্টিসোন সাহায্য করতে পারে। নতুন এক ওষুধও ইমিউন প্রতিক্রিয়ায় রাশ টানতে পারে।
সৌভাগ্যবশত এমন ফাংগাল ইনফেকশন বিরল ঘটনা। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে সন্ধান না করলে সেটি শনাক্ত করা কঠিন। মানুষকে অসুস্থ করে তোলে, ক্যানডিডা অরিস নামের নতুন এমন ফাংগাসের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে।
২০০৯ সালে সেই প্যাথোজেন প্রথম বার শনাক্ত করা হয়। সেটির উৎস সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়েছে। জাপানে সেটি আবিষ্কারের পর একাধিক দেশে সেই ক্যান্ডিডা অরিসের আবির্ভাব ঘটে। সেটি বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রো. অলিভার কুরজাই বলেন, ‘সেটি অত্যন্ত ড্রাগ-রেজিস্টেন্ট। সেইসঙ্গে ছত্রাক হওয়া সত্ত্বেও সেটি এক রোগী থেকে অন্য রোগীর শরীরে বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু রোগীর এমন গুরুতর সংক্রমণ হয়, যার চিকিৎসা করা কঠিন। মাসের পর মাস ধরে রোগ দানা বাঁধতে পারে। সেটা সত্যি ভয়ংকর এক অবস্থা।’
অস্বাভাবিক ব্যাপার হলো, ক্যানডিডা অরিস সংক্রমণের মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। সে কারণে এই ফাংগাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন হাসপাতালে এমনটা দেখা যায়। একটি মাত্র ওষুধ সেটির মোকাবিলা করতে পারে।
সব সময়েই নতুন প্যাথোজিনিক ফাংগি পাওয়া যায়৷ প্রো. ড. অলিভার কর্নেলি এমন অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘উষ্ণতা বেড়েই চলেছে৷ ফলে ছত্রাক এমন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেখানে আগে সেটির অস্তিত্ব ছিল না৷ এর ফলে আরো বিপজ্জনক ছত্রাক এখনো ছড়িয়ে পড়ছে।’
বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে গুরুতর ফাংগাল ইনফেকশন দেখা যায়। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে নতুন অ্যান্টি-ফাংগাল ড্রাগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে গবেষকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন।