করোনাকালে ভ্রমণে যা করা আবশ্যক
প্রতিদিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বারবার সতর্ক করছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু গত বছর পুরো সময়টাই প্রায় কেউ ঘুরতে যেতে পারেননি, তাই সবাই বসে আছেন একটু সুযোগ পেলেই বেড়াতে যাবেন কোথাও। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতিতে কি আদৌ ঘুরতে যাওয়া নিরাপদ হবে? করোনা সংক্রমণের মধ্যে কি উচিত হবে ঘুরতে যাওয়া? কী করা যেতে পারে?
যদি সম্ভব হয়, পিছিয়ে দিন ঘুরতে যাওয়ার তারিখ
আপনার যদি ঘুরতে যাওয়ার তারিখ ইতোমধ্যেই ঠিক হয়ে থাকে, আপনি হয়তো ভাবছেন যাবেন কি যাবেন না। যদি সম্ভব হয়, তবে অবশ্যই ঘুরতে যাওয়ার তারিখ পিছিয়ে দিন। এই সময় সংক্রমণ অনেকাংশেই বেড়েছে, কিন্তু যে সময় সংক্রমণ আবার নিয়ন্ত্রণে আসবে, সে সময় আপনি ঘুরতে যেতে পারেন।
ঘুরতে যাওয়ার আগে ও ফিরে টেস্ট করান
আপনি ঘুরতে যাওয়ার অন্তত একদিন আগে কোভিড টেস্ট করিয়ে নিন। এতে নিশ্চিত হয়ে যাবেন আপনি সংক্রমিত কি না। সংক্রমিত না হলে আপনি তো অবশ্যই ঘুরতে যেতে পারেন। আর ফেরার পরেও কোভিড টেস্ট অবশ্যই করিয়ে নেবেন। সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকার জন্য আপনার নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ব্যবহার করুন স্যানিটাইজার
ভ্রমণে স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। করোনা মহামারিতে নিরাপদ থাকতে নিয়মিত স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভ্রমণ করলে তাঁদেরও স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে।
লেনদেন করুন কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপে
বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারির ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নগদ লেনদেনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যতটা সম্ভব ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করুন।
নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে ভ্রমণ করুন। সংখ্যায় যতটা সম্ভব কম লোক সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ করুন। সম্ভব হলে একাই ভ্রমণ করুন। নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলুন।
নিজে মাস্ক পরুন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরতেই হবে। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় মাস্ক পরা আবশ্যক। গাড়িতে থাকা অবস্থায় কিংবা হাঁটার সময়ও মাস্ক পরলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
জনপ্রিয় জায়গা বাদ দিয়ে অফবিট জায়গা বেছে নিন
জনপ্রিয় জায়গা, যেমন—কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সিলেট—সেখানে স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি ভিড় হয়। সেসব জায়গা পরিহার করে নতুন কোনও জায়গায় অথবা উত্তরবঙ্গের কোনও নির্জন গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তবে সেখানে ভিড় আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন, আবার প্রকৃতির মাঝে ভালো সময়ও কাটবে আপনার।
স্থানীয় হাসপাতালের নম্বর সঙ্গে রাখবেন
আপনি যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, সেখানে স্থানীয় হাসপাতালের যোগাযোগ করার ব্যবস্থাদি সব সময় সঙ্গে রেখে দিন। কারণ, আপনি যদি ঘুরতে গিয়ে কোনও ভাবে অসুস্থ বোধ করেন, তবে আপনি সঙ্গে সঙ্গে সেই হাসপাতালে যোগাযোগ করে নিজের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেন।
পরিবহণে ভ্রমণের পূর্বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন
বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে সঠিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলছেন; কিন্তু কোথাও বেড়াতে গিয়ে যে বাহনে চড়ছেন, তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন তো? যদি না হয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু দুশ্চিন্তা রয়েই যাবে। বাস বা ভাড়া করা পরিবহণে ভ্রমণের সময় যে স্থানে বসছেন, সেই স্থানটি সুরক্ষিত কি না, সে সম্পর্কে পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন। আসন নেওয়ার সময় আপনার চারপাশের শক্ত পৃষ্ঠতলের ওপর দ্রুত জীবাণুনাশক স্প্রে করুন।
স্পর্শের আগে বিশেষ সতর্কতা
বাসে, ট্রেনে কিংবা বিমানে ওঠার আগে এটিএম, চেক-ইন মেশিন, এসকেলেটর এবং অন্য যে কোনও ডিভাইস ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা উচিত। অন্যরা যেগুলো স্পর্শ করেছে, সেগুলো ব্যবহার করার সময় গ্লাভস পরে নিন।
কোভিড উপসর্গ থাকলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
ঘুরতে যাওয়ার কয়েক দিন আগেও যদি আপনার হাঁচি, কাশি শুরু হয়, আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তিনি যদি আপনাকে টেস্ট করার পরমার্শ দেন, তবে টেস্ট করিয়ে নেবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। সুস্থ থাকলেই ঘুরতে পারবেন। তাই আগে স্বাস্থ্য পরে আনন্দ!
তালিকা তৈরি করুন
ভ্রমণের সময় কিছু জিনিস অবশ্যই আপনার সঙ্গে বহন করা উচিত। সে তালিকায় একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টয়লেট পেপার, টিস্যু ও মাস্ক রাখতে হবে। এ জিনিসগুলো আপনাকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিধিনিষেধের কারণে মানুষ খুব কমই বাইরে বের হতে পারছে। তবে কয়েক মাস ধরে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর বিধিনিষেধ শিথিল এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাগুলো অনেকাংশে তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে করোনা-পরবর্তী সময়ে ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। ভ্রমণে থাকুন স্বাস্থ্যসচেতন।