ছুটির দিনে
চলুন যাই দক্ষিণাঞ্চলের ভাসমান বাজারে
একঘেয়েমি কাজের মাঝে যখন আপনি বিরক্ত তখন নিজেকে সতেজ করতে ঘুরে আসতে পারেন । একটু ইচ্ছে করলে ভালো সময় কাটাতে পারেন।
বিদেশের ফ্লোটিং মার্কেটের মতোই বাংলাদেশেও আছে ভাসমান বাজার। যেখানে সবকিছু বিক্রি হয় ভাসমান নৌকায়। পাঁচ টাকার চা, পান থেকে শুরু করে ধান, চাল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই ভাসমানভাবে বিক্রি হয় এই বাজারে। এ দৃশ্য দেখা যাবে ‘বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে’।
কোথায় এই বাজার?
দেশের সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা পিরোজপুরের সবচেয়ে বড় ভাসমান বাজার, ‘বৈঠাকাটা’। নাজিরপুর উপজেলার বেলুয়া নদীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বাজার। তিন জেলার (গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও বরিশাল) মোহনায় এই নদী। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে এই ভাসমান হাট। আগের রাত থেকে খাল বেয়ে চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ডিঙি নৌকায় করে ভিড়তে থাকেন নাজিরপুরে। ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে সরগরম হয়ে ওঠে বাজার। অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা- বিক্রেতারা কেউই পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসে না। এই বাজারে সবাই আসে নৌকায়। স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে হাট।
ভৌগলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খাল বেষ্টিত। পানির ওপর ভাসমানভাবে সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য কেনা-বেচার জন্য পাকিস্তান আমলে বৈঠাকাটা বাজারের সূত্রপাত হয়। তবে কারো কারো মতে, এই বাজারের বয়স আরো বেশি।
যা দেখবেন
বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে চাল, ডাল বিক্রি হয় ভাসমানভাবে নৌকায়। নৌকার ওপর ভাসমান এসব চালের দোকানগুলো দেখতে বেশ অদ্ভুত। পরিচিত অন্য কোনো চালের দোকানের সঙ্গে এই দোকানের মিল নেই। প্রতিটি নৌকাতেই থাকে বাঁশ দিয়ে তৈরি চাল রাখার বড় বড় পাত্র। স্থানীয়ভাবে এগুলো ‘ডোলা’ নামে পরিচিত। ডোলা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের চাল বস্তায় ভরে রাখা হয় বিক্রির জন্য। তবে এই হাটে বেশিই বিক্রি হয় মৌসুমি সবজি। এই এলাকায় বেশি বিক্রি হয় বরবটি, কুমরা, পুঁইশাক, করল্লা, পটল, কাঁচকলা ও লাউ। চাল, ডাল, শাক-সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন মুখরোচক খাবারও নৌকায় ভাসমানভাবে বিক্রি হয় এজ বাজারে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন গাছের চারাও পাওয়া যায়।
পানিতে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন জলজ, আগাছা ও কচুরিপানাও বিক্রি হয় এখানে। আমাদের কাছে জঞ্জাল মনে হলেও এগুলো ওই এলাকার কৃষিকাজের আবশ্যকীয় উপাদান। এসব কচুরিপানা কৃষকরা বৈঠাকাটা বাজার থেকে কিনে নেন বেশ দাম দিয়ে। তুলনামূলকভাবে কম খাজনায় কেনা-বেচা করা যায় বলে অন্য বাজারের তুলনায় ভাসমান এই বাজারে ক্রেতা সমাগমও বেশি।
নৌকায় যোগাযোগ বিধায় এই বাজারে পণ্য আনা-নেওয়ার পরিশ্রম ও খরচ দুটোই বেশ কম। বড় বড় ট্রলারে করে পাইকার হাজির হয় টাকার ব্যাগ নিয়ে। অন্যান্য বাজারের মতই দর কষাকষি করে চলে এই ভাসমান বাজারের কেনা বেচা।
তবে, পানির ওপর ভাসমান এই বাজারে কেনা - বেচার পদ্ধতি একটু আলাদা। বিক্রেতারাই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে এগিয়ে যায় পাইকারদের বড় ট্রলারের কাছে। সেখানে গিয়ে দরদাম করে বিক্রি করেন পণ্য। এই বাজারে পাইকারদের নৌকাই যেন এক একটি ভাসমান গুদাম। বাজার থেকে শাক- সবজি, ডাব, নারকেল, কলা, কচুসহ বিভিন্ন পণ্য পাইকারি কেনার পর সেগুলো সেই নৌকাতে করেই বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্নপ্রান্তের বাজারগুলোতে।
যাতায়াত
বৈঠাকাটার সঙ্গে ঢাকার রয়েছে সরাসরি লঞ্চ যোগাযোগ ব্যবস্থা। পূবালী-৯ নামের একটি লঞ্চ একদিন পরপর যাতায়াত করে ঢাকার উদ্দেশ্য। যাত্রীর পাশাপাশি এই হাটের পণ্য ঢাকায় পাঠানো হয় এই লঞ্চটির মাধ্যমে। শুধুমাত্র বাজারের বাণিজ্যিক দিক থেকেই নয়, ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চ যোগাযোগ থাকার পর্যটনের এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত ভাসমান বৈঠাকাটা বাজারের।
থাকা-খাওয়া
এ এলাকায় অনেক সুবিধাসম্পন্ন আধুনিক কোনো হোটেল-মোটেল নেই। আশেপাশের শহরতলী নাজিরপুর, স্বরূপকাঠীতে ছোট মানের হোটেল পাবেন। আরো আরামে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল কিংবা পিরোজপুর জেলা শহরে। আর স্থানীয় রেস্তোরাঁই খাওয়ার একমাত্র ভরসা।
মনে রাখবেন
শনি ও মঙ্গলবারকে টার্গেট করে গেলেই বাজার দেখা যাবে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সেখানে পৌঁছলে বাজার দেখার স্বাদ মিলবে না।