জগদল বিহারে একদিন
জয়পুরহাট থেকে শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে মূল সড়ক ছেড়ে কিছুটা সরু আঁকাবাঁকা কিন্তু পিচঢালা মসৃণ পথে চলতে শুরু করলাম। সবুজের মাঝে শত বছরের পুরোনো একটা বৌদ্ধ বিহার তার ইতিহাস নতুন করে জানাতে জেগে উঠেছে। অনেকটা জায়গাজুড়ে এ বিহার।
নওগাঁর জগদল বিহার। নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলায় এর অবস্থান। বৌদ্ধ বিহারগুলো আসলে পাল আমলের স্থাপনা বলে ধরে নেওয়া হয়। বিহারগুলো কখনো উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অতিথিশালা হিসেবে একেকটা রাজ্যের নানা জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হতো। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এসব বিহারে শিক্ষা গ্রহণ করত। নানারকম ধর্মীয় আচার পালন করত। দূর-দূরান্ত থেকে পথ চলার সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এসব জায়গার নির্জনতায় অবসর অতিবাহিত করত; দু-একদিন থেকেও যেত।
একদম গ্রামীণ জনপদের মধ্যে নির্জন সবুজের মধ্যে তুলনামূলক ফাঁকা জায়গায় এই জগদল বিহারের অবস্থান।
সবুজ ঘাসের মাঝে ছোট ছোট ঘরের আদল বা কুঠুরি। একপাশে সরু দরজার মতো ফাঁকা জায়গা, চারদিকে এমন করে গড়ে তোলা এ স্থাপনা শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা। আর একদম মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। মাঝে একটা উঁচু ঢিবির মতো আছে। চারপাশের ছোট ছোট কামরার একদম মাঝে সাধারণ একটা বেদীর মতো থাকত, যেখানে বসে সে সময়ের শিক্ষাগুরুরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতেন।
প্রাচীন আমলের উপাসনালয়গুলোও শিক্ষালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। একইসঙ্গে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া-নেওয়ার রেওয়াজ সেই আদিকাল থেকে বিদ্যমান। পুরো জগদল বিহার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোথাও এতটুকু ময়লা নেই, নোংরা নেই, নেই কোনো উচ্ছিষ্ট বা আবর্জনা।
সত্যিই দারুণ কিছু ভালো লাগা নিয়ে, স্মৃতি আর ছবি নিয়ে আবারও পথ চলতে শুরু করেছিলাম। নতুন করে বাংলাদেশ দেখার অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম।