মৃত্যুর আগে যে ২০ শহরে যেতে ভুলবেন না
ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান কোনটি? এক বাক্যে বলা কঠিন। বলা হয় ইন্টারনেটের কারণে ছোট হয়ে আসছে বিশ্ব। তবুও ভ্রমণের গুরুত্ব কমেনি এতটকু। আর সারা পৃথিবীতেই এমন অসাধারণ সব সুন্দর জায়গা রয়েছে, যেগুলোর ছবি দেখলে মনেই হবে না এগুলো পৃথিবীর কোনো জায়গা; যেন অপার্থিব গল্পের কোনো পটভূমি। ইজিন ডট কমের বরাত দিয়ে আজ আমরা সেরকমই ২০টি সুন্দর স্থানের ছবি নিয়ে হাজির হয়েছি।
১. সান্তরিনি, গ্রিস
বিজ্ঞানীদের মতে, লক্ষাধিক বছর আগে ইজিয়ান সাগরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বৃত্তাকার একটি দ্বীপের সৃষ্টি হয়। সময়ের বিবর্তনে সাধু আইরিনির নামানুসারে এর নাম হয়ে যায় সান্তরিনি। হ্যাঁ, আমরা গ্রিক আইল্যান্ড সান্তরিনির কথাই বলছি। সান্তরিনি গ্রিসের অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ। মূল ভূমি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইজিয়ান সাগরে অবস্থিত ছোট দ্বীপটি। সান্তরিনির বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট। পর্যটকদের কাছে এ দ্বীপ বিখ্যাত এর আর্কিটেকচারাল সৌন্দর্যের কারণে। দ্বীপের খাড়া বেয়ে নীল সাদার মিলনে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সান্তরিনি আকর্ষণীয় জায়গা। বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সান্তরিনি ভ্রমণের আদর্শ সময়।
২. কেপিলান সাসপেনশন ব্রিজ, কানাডা
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের সবুজেঘেরা বনের মাঝে কেপিলান সাসপেনশন ব্রিজের অবস্থান। ১৮৮৯ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার নর্থ ভানকোভারের কাপিলান নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান। ১৪০ মিটার দীর্ঘ এই অপূর্ব সেতু নদী থেকে ৭০ মিটার উচ্চতায় ঝুলছে। জীবনে একবার হলেও ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে আসতে চাইবেন কেপিলান সাসপেনশন ব্রিজে। তবে সেতুটির ওপর দিয়ে হেঁটে পার হওয়া খুবই ভয়ের।
৩. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জিম্বাবুয়ে
অপরূপ সুন্দর এই জলপ্রপাত জিম্বাবুয়ের সীমান্ত ও জিম্বাজি নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত। এর উচ্চতা ১০৮ মিটার ও চওড়ায় ১,৭০৩ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৩৫ ঘনমিটার জল পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত এটি লোমহর্ষক কুয়াশার সৃষ্টি করে। জল পড়ার সময় প্রচণ্ড আওয়াজ সৃষ্টি করে বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’। এর অর্থ ‘বজ্রের ধোঁয়া’। ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত থেকে জল পড়ার সময় জলীয় বাষ্পের মেঘ তৈরি হয়, যা প্রায় ৪০০ মিটার উচ্চতায় ভাসতে থাকে ও প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাকৃতিক নিদর্শনের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য এখানকার জলীয় বাষ্পে আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হওয়া। শুধু দিনেই নয়, পূর্ণিমার রাতেও এই রংধনু দেখা যায়। ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৫৫ সালে এই জলপ্রপাত দেখে নামকরণ করেন রানি ভিক্টোরিয়ার নামে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত।
৪. ভেনিস, ইতালি
ইতালির অন্যতম সেরা পর্যটন নগরী ভেনিস পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের শহর। ভাসমান এ শহরটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসেন। ফলে ইতালি সরকারের অন্যতম আরেকটি আয়ের উৎস ভেনিস। উত্তর-পূর্ব ভেনেতো এলাকায় অবস্থিত ভেনিস। এটি একসময় ছিল প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও ‘প্রশান্ত অথবা শাসক’ হিসেবে পরিচিত ছিল জলকন্যাখ্যাত ভেনিস। এর উচ্চতা দুই মিটার সাত ফুট। স্থলভাগের চেয়ে জলভাগের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই ভেনিসের সৌন্দর্য শুধু জলপথে। ভেনিসের জনসংখ্যা ছয় লাখ ৩৬ হাজার ২৪৪। দেশটি ভ্রমণ করতে প্রতি বছর দুই কোটি পর্যটন যান। এ শহরে প্রায় ১১৮টি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে।
৫. রোম, ইতালি
বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত শহরগুলোর একটি রোম। ইতালির রাজধানী এ শহরের ইতিহাস হাজার বছরের। রোমকে পাশ্চাত্য সভ্যতার কেন্দ্র বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ শতকে শহরটি আবিষ্কার করা হয়। রোম পিলিওলিথিক যুগের প্রাচীন শহর। ইউরোপের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থভূমি রোম। প্রাচীনকালে এখানে ছোট্ট জনপদ গড়ে উঠেছিল, যাকে সুসভ্য গ্রিকরা ইতালিয়া বলে ডাকতেন। ইতালি প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির সংমিশ্রণে রোমান সভ্যতার নগরী। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা সপরিবারে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন প্রাচীন এই নগরীতে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ইতালির রোম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।
৬. গ্রেট ব্লু-হোল, মধ্য আমেরিকা
একটি বড় ডুবো সিঙ্কহোল, গ্রেট ব্লু-হোল বাতিঘর রিফ কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। এটি একটি বিশেষ ডাইভিং গন্তব্য, যার গভীরতা ৪০৭ ফুট ও ৯৮৪ ফুট চওড়া। আপনি যদি পানিতে ডাইভ করতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনার জন্য এটাই আসল জায়গা। এর সৌন্দর্যের কারণে এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার তালিকায় আছে। কারণ ২০১২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের এক গবেষণায় গ্রেট ব্লু-হোল পৃথিবীর ১০ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক স্থানের তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিল। এটি একটি সস্তা অভিজ্ঞতা না যদিও, এর জন্য ভালো মাপের খরচ করা প্রয়োজন। এটি মধ্য আমেরিকার বেলিজে অবস্থিত।
৭. দ্য রেড বিচ, চীন
সৈকতে কিছু সময় কাটানো চিত্তাকর্ষক হতে পারে, কিন্তু তা যদি হয় একটি অসাধারণ সৈকত তাহলে সেটা আরো স্মরণীয় ও বিস্ময়কর হবে। আর এটি হলো চীনের রেড বিচ। এটি পানজিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডোয়াতে অবস্থিত। এই সৈকত দেখলে মনে হবে এর পানি লাল। কিন্ত আসলে পানি লাল নয়। সুইডা নামক একপ্রকার শৈবাল পড়ার পর পানি লাল রং ধারণ করে। এখানে প্রায় ৩৯৯টিরও বেশি বন্যপশু ও ২৬০ প্রজাতির পাখি আছে। লাল সৈকতে বছরজুড়েই বহু পর্যটকের আনাগোনা থাকে। যে কেউ চাইলেই বাজেট ঠিক করে সেখানে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
৮. চীনের প্রাচীর
চীনের প্রাচীর (গ্রেট ওয়াল অব চায়না) সম্পর্কে কে না জানে? এটি পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল দেশ চীনে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যগুলোর মধ্যে একটি। পৃথিবীর এই আশ্চর্য ও দীর্ঘতম প্রাচীর দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৬৯৫ কিলোমিটার ও উচ্চতা ৪.৫৭ থেকে ৯.২ মিটার বা প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ফুট। চওড়ায় প্রায় ৯.৭৫ মিটার বা ৩২ ফুট। কথিত আছে, চীনের প্রাচীরের ওপর দিয়ে একসঙ্গে ১২ জোড়া ঘোড়া চলতে পারে। চীনের এ মহাপ্রাচীরটি বিশ্বের মানবসৃষ্ট অন্যতম বড় নিদর্শন। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকে উত্তরের মঙ্গল আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য চীনের সম্রাটরা এটি নির্মাণ শুরু করেন। ২২০-২০৬ খ্রিস্টপূর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেয়ালগুলো নির্মাণ করা হয়। পূর্বে ডাংডং থকে শুরু করে পশ্চিমে লপ লেক পর্যন্ত ৮৮৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ দেয়ালের বিস্তৃতি।
৯. মাচুপিচু, পেরু
পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইনকাদের গড়ে তোলা শহর মাচুপিচু। ১৪৫০ সালে ইনকারা মাচুপিচু শহরটি নির্মাণ করে। একশ বছর পর স্প্যানিশদের আক্রমণে ইনকাদের নির্মিত সব শহর ধ্বংস হয়ে গেলেও তারা এই শহরটির সন্ধান পায়নি। মাচুপিচু শহরটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। পেরুর ৫০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আন্দিজ পর্বতমালার কোরডিংয়েরা দে ভিলকাবাম্বা এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন ইনকা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ মাচুপিচু শহর। বলা হয়ে থাকে, মাচুপিচু হয়তো ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন।
১০. পোটালা প্যালেস, তিব্বত
দালাই লামার বাসস্থান ও বিশ্বের উচ্চতম রাজপ্রাসাদ হিসেবে পরিচিত তিব্বতের পোটালা প্যালেস। ৫০ বছর লেগেছে ৩৭০০ মিটার উঁচু ১৩ তলাবিশিষ্ট প্রাসাদটি তৈরি করতে। এ ছাড়া এতে রয়েছে এক হাজার কক্ষ। ভ্রমণের জন্য পোটালা প্যালেস হতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা।
১১. গ্রেট রিফট ভ্যালি, ইথিওপিয়া
প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত এ এলাকা বিশ্বের বৃহত্তম ফাটলের ফলে সৃষ্ট উপত্যকা। রেড সি থেকে লেক মালাউয়ি পর্যন্ত বিস্তৃত এ এলাকা ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। উপত্যকাটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সিরিয়া হতে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিক পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উপত্যকা উত্তর থেকে দক্ষিণে ছয় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ (৩,৭০০ মাইল)।
১২. তাজমহল, ভারত
ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ নামে পরিচিত, তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, যা সম্পন্ন হয়েছিল প্রায় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে। নির্মাণের পর থেকেই তাজমহল বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। বর্তমানে তাজমহলে দুই থেকে তিন মিলিয়ন পর্যটক যান, যার মধ্যে দুই লাখ পর্যটক বিদেশি, যা ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি পর্যটক যান ঠাণ্ডা মৌসুমে—অক্টোবর, নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে।
১৩. গ্লাস বিচ, ক্যালিফোর্নিয়া
সৈকত কার না ভাল লাগে। বিস্তৃত নীল সমুদ্র আর নীল ঢেউ আছড়ে পড়ে যে সুবিশাল বেলাভূমিতে তার প্রতি আকর্ষণ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পৃথিবীর প্রায় সব সৈকতের একই চিত্র। চিকচিক সাদা বালুকাময় বেলাভূমি সমুদ্রের ঢেউয়ে গিয়ে নামে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট ব্র্যাগের কাছে ম্যাক্যারিচার স্টেট পার্কে রয়েছে এক অদ্ভুত সৈকত। এটি আর সব সৈকতের সঙ্গে মেলে না। এখানে বালি নয় চিকচিক করে কাচের টুকরো। এ সৈকতের নাম গ্লাস বিচ। সমুদ্রবিলাস তো সব সৈকতেই করা যায়। কিন্তু গ্লাস বিচ নামে পরিচিত এ সৈকতে গেলে পর্যটকদের নানা রঙের স্বচ্ছ পাথর দেখে মন ভরে যাবে। এখানে রঙিন পাথরগুলোর ওপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করা আলোর প্রতিফলন এক স্বর্গীয় দৃশ্যের অবতারণা করে। রাশি রাশি কাচের টুকরোয় ভরপুর এ সৈকতকে ‘কাচের সৈকত’ বলাই যথার্থ।
১৪. এন্টার্কটিকা, দক্ষিণ মেরু
পৃথিবীর দুর্গমতম মহাদেশ এন্টার্কটিকা। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত। আয়তন প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার। বিশাল এ আয়তনের প্রায় ৯৮ শতাংশ অঞ্চল গড়ে ১.৯ কিলোমিটার পুরু বরফে ঢাকা। এন্টার্কটিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই। তখন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর মোট বরফের প্রায় ৯০ শতাংশই এ মহাদেশে সঞ্চিত আছে। এখানকার সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট ভিনশন’, যার উচ্চতা প্রায় ১৬,০৫০ ফুট। আগ্নেয়গিরিও রয়েছে। চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া সত্ত্বেও এন্টার্কটিকায় জীবের অস্তিত্ব রয়েছে। এখানে প্রায় ১,১৫০ প্রজাতির ছত্রাক, ৭০০ প্রজাতির শৈবাল, ১০০ প্রজাতির মস, ২৫ প্রজাতির লিভারওর্টসহ মাত্র ৩ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ দেখা যায়। বরফের প্রায় ২,৬০০ ফুট নিচে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। কয়েক প্রজাতির পেঙ্গুইন দেখা যায় এন্টার্কটিকায়। এছাড়া পেট্রেল, অ্যালবাট্রস পাখিও আছে। এন্টার্কটিকার উপকূলে আরও দেখা যায় নীল তিমি, কিলার তিমি, কলোসাল স্কুইড, সিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী। রয়েছে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা এস্কিমোরাও। বরফের কোলে এসব প্রাণীর বিচরণ এন্টার্কটিকাকে করেছে বিস্ময়কর।
১৫. ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
এশিয়া ও ইউরোপের মাঝামাঝি স্থানে তুরস্ক দেশটি অবস্থিত, যা একসময় অটোম্যান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তুরস্কের প্রায় পুরোটাই এশীয় অংশে পড়েছে। পর্বতময় আনাতোলিয়া এশিয়া মাইনর উপদ্বীপের অংশ। তুরস্কের বাকি অংশের নাম পূর্ব বা তুর্কীয় থ্রাস। এটি ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এখানে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল। অপরূপ শহরটি হতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।
১৬. বার্সেলোনা, স্পেন
ইউরোপ ভ্রমণে যেমন আপনার ক্লান্তি লাগবে না, তেমনি যদি আপনাকে স্পেনের বার্সেলোনা ভ্রমণের কথা বলা হয় তাহলে আপনি কখনোই না বলতে পারবেন না। কারণ, কী নেই বার্সেলোনায়? ফুটবলখেলায় মেসি কিংবা রোনালদোকে দেখতে চান, বার্সেলোনা গেলেই দেখতে পাবেন। বিখ্যাত সৈকত, পাহাড়েঘেরা শহর, শত শত বছরের অসাধারণ শৈল্পিক কারুকার্যময় স্থাপনা, প্যারা অলিম্পিকের স্মৃতি এবং সর্বোপরি অদ্ভুত সুন্দর একটা প্রদেশ হচ্ছে বার্সেলোনা। স্পেনের কাতালুনিয়া প্রদেশের রাজধানী এই বার্সেলোনা। স্পেনের মাদ্রিদের পর বার্সেলোনাই হচ্ছে বড় শহর। ভূমধ্যসাগরপাড়ের বার্সেলোনাতে রোমান সাম্রাজ্যের নিদর্শনগুলো আজও স্পষ্ট চোখে পড়ে।
১৭. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
সিডনি শহর সত্যিই সুন্দর। বেড়ানোর জন্য যুতসই এক জায়গা অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় শহর সিডনি। পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেলে মাথায় রাখতে হবে যেন ভ্রমণটা কারো জন্য মজার আর কারো জন্য বিরক্তির না হয়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যেন মজা পায় এমন কোনো জায়গা ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের নিরাপত্তাকেও দিতে হবে সর্বাধিক গুরুত্ব। সে বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়া থাকবে তালিকার প্রথম সারিতে। থিম পার্ক, রৌদ্রজ্জ্বল সৈকত, ওয়াটার স্পোর্টস, রেইন ফরেস্ট, বন্যপ্রাণী এসব মিলিয়ে যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র বলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিকে।
১৮. হিলার লেক, অস্ট্রেলিয়া
অবাক করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিলার লেক। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মিডল আইল্যান্ডে এর অবস্থান। আশ্চর্যজনক এই হ্রদের বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার জল গোলাপি রঙের। এমনকি কোনো পাত্রে তোলার পরও এই জলের বর্ণ অপরিবর্তিত থাকে। বিজ্ঞানীরা কিন্তু এই জলের রং কেন গোলাপি, তার সঠিক মীমাংসায় পৌঁছাতে পারেননি। তবে কোনো প্রকার শৈবালের জন্য যে এমনটি হয় না সেটা তাঁরা নিশ্চিত করেছেন। বর্ণিল শৈবাল, চিংড়ি প্রভৃতির কারণে বিশ্বের বেশ কয়েকটি হ্রদের জলের রং লাল দেখার নজির থাকলেও হ্রদের জলে কিন্তু এই দুটির কোনোটিরই উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। তাই বিষয়টি সত্যিই রহস্যজনক। ৬০০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার প্রস্থের সুন্দর হ্রদটির রয়েছে নয়নাভিরাম বালুকাবেলা এবং এর চারপাশ মনোরম পেপারবার্ক আর ইউক্যালিপটাস বৃক্ষসমৃদ্ধ। শুধু আশ্চর্য-সুন্দর লেকটির কারণেই এখানে প্রচুর পর্যটক-সমাগম হয়।
১৯. বোরা বোরা দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স
বোরা বোরা ১২ বর্গমাইল আয়তনের একটি দ্বীপপুঞ্জ, যা ফরাসি পলিনেশিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত। ফরাসি পলিনেশিয়ার রাজধানী পপেইট থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার (১৪৩ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি উপহ্রদ ও একটি প্রাচীরের প্রস্থ দ্বারা ঘেরা। দ্বীপের মাঝখানে দুটি মৃত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট পেহিয়া ও মাউন্ট ওটারমমেনু রয়েছে। সর্বোচ্চ চূড়া ৭২৭ মিটার (২৩৮৫ ফুট)। অতীতে এই দ্বীপকে তাহিতিয়ান উপভাষায় ‘পোরা পোরা মেই তে পোরা’ বলা হতো, এর অর্থ ‘সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সৃষ্ট’। বোরা বোরা দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতি মূলত পর্যটননির্ভর। দ্বীপটিতে অনেক অবকাশযাপনকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ১৯৬১ সালে হোটেল বোরা বোরা স্থাপন করা হয় এবং এর ৯ বছর পর পানির ওপর বাংলো তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন কামান দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক দ্বীপটিতে ঘুরতে যান। এয়ার তাহিতির প্রতিদিন ৫-৬ টি ফ্লাইট থাকে বোরা বোরা দ্বীপপুঞ্জে। যানবাহন মূলত ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও সাইকেল ব্যাবহার করা হয়। স্কুবা ডাইভিং এই দ্বীপে একটি বড় আকর্ষণ। নানা প্রজাতির হাঙরের অভয়ারণ্য রয়েছে দ্বীপের কাছে।
২০. সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, ভ্যাটিকান সিটি
ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চার্চ। যদি কেউ রোম ভ্রমণ করেন, তাহলে তাঁদের অবশ্যই সেন্ট পিটার্স ভ্রমণ করা উচিত। রেনেসাঁ আমলের তৈরি এই চার্চের গঠনশৈলী এতই অসাধারণ যে প্রায় প্রতিবছর চল্লিশ লাখের বেশি মানুষ সেখানে ভ্রমণে যান।