সবুজের মাঝে রুপালি ধারা, হাতছানি দিচ্ছে হাজাছড়া
পাহাড়ের গা ছুঁয়ে কখনো কি অশান্ত শীতল ঝরনার বয়ে চলাকে দেখেছেন? অনুভব করেছেন কি তার শীতল স্পর্শ? একবার ভেবেই দেখুন না আপনি প্রকৃতির এমন এক মায়াভরা পরিবেশে আছেন যেখানে চারদিকে সবুজ পাহাড় আর সেই পাহাড়ের গা ছুঁয়ে বয়ে চলছে ঝরনার জলধারা। আপনি ঝরনার পানিতে পা ভিজিয়ে হেঁটে চলেছেন। ভাবতেই মনে কেমন যেন একটা ভালোলাগা কাজ করে, তাই না। তবে এই ভালোলাগাকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির হাজাছড়া ঝরনা থেকে।
ঝরনাটির অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইহাটে। ঝরনাটি সবুজ অরণ্যে ঘেরা নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত। ঝরনাটি বেশ বড় এবং সুন্দর। বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য যেন বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। ঝরনাটির মায়াময় সৌন্দর্য দেখে আপনারও মন চাইতে পারে এর পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে দিতে। আপনার যদি কখনো সাজেক যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, সময় করে যাত্রাপথেই ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝরনা থেকে।
কীভাবে যাবেন
ঝরনাটি দেখতে হলে প্রথমেই ঢাকা থেকে আপনাকে যেতে হবে খাগড়াছড়ি সদর কিংবা খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়। ঢাকা থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, হানিফ, রিফাতসহ অনেক বাস প্রতিদিন খাগড়াছড়ির উদ্দেশে যাত্রা করে। ভাড়া ৫২০ (নন-এসি)। এ ছাড়া আপনি সেন্ট মার্টিন পরিবহনের এসি বাসে যেতে পারেন, ভাড়া পড়বে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। তবে শান্তি পরিবহনের বাসে করে আপনি চাইলে দীঘিনালা পর্যন্তও যেতে পারেন। দীঘিনালা থেকে রওনা দিলে আপনার সময় কম লাগবে। সেখান থেকে আপনাকে যেতে হবে বাঘাইঘাট। খাগড়াছড়ি শহর থেকে বাঘাইহাট পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং দীঘিনালা থেকে বাঘাইহাট পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে ৩০ মিনিট। খাগড়াছড়ি সদর থেকে চাঁদের গাড়ির ভাড়া পড়তে পারে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। দীঘিনালা থেকে গাড়ি ভাড়া করলে খরচ আরো কম পড়বে।
তবে আপনি যদি সাজেক ভ্যালি দেখার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনাকে আর আলাদা করে গাড়ি ভাড়া করার প্রয়োজন হবে না, কারণ আপনার সাজেক যাত্রাপথেই বাঘাইহাট পড়বে। বাঘাইহাট নেমে আপনাকে আরো ২০ মিনিটের মতো হেঁটে যেতে হবে ঝরনাটি দেখতে। বেশি দূরে নয়, তবে এখনো চলাচলের কোনো রাস্তা তৈরি না হওয়ায় উঁচু-নিচু স্থান পার হয়ে যেতে হয় বলে একটু সময় লাগে। হাঁটার সুবিধার জন্য চাইলে পাঁচ টাকা মূল্য দিয়ে বাঁশের লাঠি কিনে নিতে পারেন। এরপর সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে ঝরনা থেকে নেমে আসা শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। শহরের কোলাহলমুক্ত এমন সবুজ সুন্দর পরিবেশ আপনার মনে এনে দিতে পারে প্রশান্তির ছোঁয়া।
যা মনে রাখবেন
১। বর্ষাকালে কিছু কিছু জায়গা খুব পিচ্ছিল থাকে, তাই সাবধানে হাঁটবেন।
২। কোনো কোনো জায়গায় কাঁটাজাতীয় একধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়, তাই দেখে দেখে হাঁটবেন।
৩। জায়গাটি বেশ নির্জন তাই একা না গিয়ে একসঙ্গে বেশ কয়েকজন মিলে যাওয়াটাই উত্তম। তবে এখানে প্রায় প্রতিদিনই অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে।
৪। হাঁটার রাস্তাটি উঁচু-নিচু এবং বেশ সুবিধাজনক নয়, তাই সঙ্গে কোনো ভারী বস্তু নেওয়া উচিত নয়। এতে আপনারই কষ্ট হবে।
৫। ঝরনাটি বেশ সুন্দর। চাইলে আপনিও ঝরনার পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। তবে এর আশপাশে কাপড় পরিবর্তন করার কোনো ব্যবস্থা বা খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ব্যবস্থাগুলো আপনি বাঘাইহাটে এসে পাবেন।
৬। সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত খাবার পানি রাখুন। সম্ভব হলে আগে থেকে গাড়িতে পানি রাখুন, যাতে ঝরনা থেকে ফেরার পথে পা ধুয়ে নিতে পারেন। তা না হলে পা ধুতে হলে আপনাকে পানি কিনতে হবে। প্রতি মগ ১০ টাকা।
৭। এখানকার কমলা ও কলা বেশ মিষ্টি। চাইলে খেয়ে দেখতে পারেন।