পর্তুগাল
বইয়ের হোটেল ‘দ্য লিটারারি ম্যান’
এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়, যাঁরা একই সঙ্গে ঘুরতে ও পড়তে ভালোবাসেন। যাত্রাপথের বিরক্তি বা ক্লান্তি এড়াতে জমজমাট কোনো রচনা কিংবা প্রকৃতির সৌন্দর্যের সুধা পান করতে করতে কবিতার দু-চারটা পঙক্তি আওড়ানো তাঁদের কাছে অনেকটা নেশার মতো। কিন্তু ভ্রমণের যাবতীয় জিনিসপত্রের মধ্যে বইয়ের বোঝা নিতে চান না অনেকেই। কেমন হয়, যেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন, সেখানেই যদি থাকে অসংখ্য বইয়ের সমাহার? যে হোটেলে থাকবেন, সেই হোটেলের দেয়ালজুড়ে শেলফ, আর শেলফভর্তি যদি থাকে বিখ্যাত সব বই, অনুভূতি কেমন হবে আপনার? যদি আপনি বইপোকা হন, তাহলে এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মানে হবে না।
এমনটা বাস্তবে সম্ভব। রিডার্স ডাইজেস্ট জানাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার সমৃদ্ধ হোটেলের খবর, যেখানে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তো বটেই, বইপোকাদের জন্যও অপেক্ষা করছে ৬৫ হাজার বইয়ের বিশাল এক ভাণ্ডার। হোটেলটির নাম ‘দ্য লিটারারি ম্যান’, যা অবস্থিত পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের পাশে অবিডস নামে ছোট একটি শহরে। যেখানে রয়েছে প্রায় ৩০টির মতো কামরা। যার প্রতিটিতে রয়েছে পর্তুগিজ লেখকদের সৃষ্টি করা সাহিত্যকর্ম। ৩০টি কামরা আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে ৩০ জন পর্তুগিজ লেখকের সাহিত্যকর্ম দিয়ে।
অর্থাৎ যদি আপনি হোটেলটিতে থাকার জন্য ১৪ নম্বর কামরাটি নির্বাচন করেন, তাহলে আপনি পাবেন নোবেল পুরস্কারজয়ী পর্তুগিজ লেখক হোসে সারামাগোর লেখা বইগুলো। একইভাবে অন্য রুমগুলোর কোনোটাতে রয়েছে কবিতা, আবার কোনোটাতে রয়েছে ভ্রমণবিষয়ক লেখা অথবা গোয়েন্দা গল্প।
হোটেলটির মালিক এবং শহরটির সাবেক নগরপিতা অবিডস টেলমো বলেন, ‘প্রতিটি কামরাকে আলাদাভাবে নির্দিষ্ট সাহিত্যকর্ম দিয়ে সাজানোর ধারণাটি তৈরি হয়েছে আমাদের অতিথিদের অন্য রকম একটি অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য।’
শুধু হোটেলটিই নয়, গোটা অবিডস শহরটিও যেন বিশাল এক পাঠাগার। মধ্যযুগে তৈরি হওয়া ৭০০ বছরের পুরোনো এই শহরে রয়েছে অসংখ্য পাঠাগার এবং বইয়ের দোকান। ইউনেস্কোর ‘সিটি অব লিটারেচার’ বা সাহিত্যের শহরের সেরা ২০ শহরের তালিকায়ও নাম রয়েছে অবিডসের। তাই আর দেরি না করে এখনই বাক্স-পেটরা গুছিয়ে ঘুরে আসুন এমন একটি শহর থেকে, যেখানে মানুষের চেয়ে বইয়ের সংখ্যা বেশি।