ঘুরে আসুন ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে
চেনা ছবি অজানা ইতিহাস
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার ধানমণ্ডি লেকের ধারে ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন এই বড়িতে। স্বাধিকারের সংগ্রামে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই বাড়িটি আজ তাঁর নানা স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। তবে এই বাড়িটি এখন আর শুধু একটি বাড়ি নেই। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী এই বাড়িটি পরিণত হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরটির নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন বাড়িটি, এতে আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একসময়ে।
সেই ইতিহাস আজও জীবিত
আমরা জানি ইতিহাসেরও ইতিহাস থাকে। এই বাড়ি তৈরিরও সে রকম একটি ইতিহাস আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে বাড়িঘর, সংসারের কোনো খবরই তিনি ঠিকমতো রাখতে পারতেন না। এ দিকটি সামলাতেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হন। কিন্তু সে সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ কংগ্রেস, তফসিলি ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি সরকার গঠন করে। সরকারের চিফ মিনিস্টার নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই মন্ত্রিসভার বাণিজ্য, শ্রম, শিল্প ও দুর্নীতি দমন মন্ত্রী। তখন বঙ্গবন্ধুর পিএস ছিলেন নুরুজ্জামান। সে সময় তিনি মন্ত্রী হিসেবে সপরিবারে থাকতেন আবদুল গনি রোডের ১৫ নম্বর বাড়িতে। তখনই পিডব্লিউডি থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছিল।
একদিন বঙ্গবন্ধুর পিএস নুরুজ্জামান পিডব্লিউডি থেকে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের হাতে দেন। এবং আবেদন ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে দাখিল করেন। ১৯৫৭ সালের শুরুতে বেগম মুজিবের নামে এক বিঘার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মূল্য ধরা হয় ছয় হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রথমেই দুই হাজার টাকা এবং পরে বিধি অনুযায়ী কিস্তিতে বাকি চার হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। ওই বছরই শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সেগুনবাগিচায় একটি বাসা তাঁর নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সেগুনবাগিচার বাড়িটি তিন দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ১৫ অক্টোবর বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল মাঠের পাশে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবের পরিবার যে এই বাড়িতে থাকে তা জানাজানি হয়ে যায়। বাড়ির মালিক বেগম মুজিবকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে তিনি সন্তানদের নিয়ে আবার ওঠেন সেগুনবাগিচার একটি বাসার দোতলায়।
ইটের ওপরে ইট
১৯৬০ সালের ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্ত হয়ে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কন্ট্রোলার অব এজেন্সিস পদে চাকরি নেন। তখনই বেগম মুজিব বুঝেছিলেন যেকোনোভাবেই হোক তাঁকে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে হবে। বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার পরই বেগম মুজিবের নামে বরাদ্দ পাওয়া জায়গাটিতে বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৬০-৬১ সাল থেকেই ধার-কর্জ ও বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতা এবং হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের এই বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর এ বাড়িটির নির্মাণকাজ তদারকি করেছিলেন ততকালীন পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও পরবর্তীকালে পূর্তসচিব মাইনুল ইসলাম। এ বাড়ি নির্মাণকাজে আর্থিক দিক দিয়েও নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও দাপ্তরিক সহকর্মীরা। সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহকর্মী চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের নূরুল ইসলাম। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন কর্মকর্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মিক এবং পারিবারিক সম্পর্ক। ওই অফিসে ক্রস ওয়ার্ড লটারি খেলা সবার জন্য ছিল বাধ্যতামূলক।
একদিন লটারিতে ব্যবহার করেছিলেন শেখ রেহানার নাম। সেই দিনই তিনি পেয়ে যান ছয় হাজার টাকা। এই টাকা তিনি গচ্ছিত রাখেন বেগম মুজিবের কাছে। বাড়ির নির্মাণকাজে টাকার সংকট দেখা দিলে নূরুল ইসলাম এই গচ্ছিত টাকা কাজে লাগানোর জন্য অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ টাকা ঋণ হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং পরে তা পরিশোধও করা হয়। বাড়ির জানালার গ্রিল সরবরাহ করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা রংপুরের মতিউর রহমান। বাড়ি নির্মাণকালীন কেয়ারটেকার ছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার আরজ আলী।
ছুঁয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু
কোনোমতে বাড়িটি নির্মাণকাজ শেষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতে ওঠেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। একতলা এ বাড়িটিতে তখন ছিল দুটি বেডরুম। এক রুমে থাকতেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব। অন্য রুমে থাকতেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তার পাশে ছিল আর একটি কক্ষ। সে কক্ষটি রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই রান্নাঘরের এক পাশে থাকতেন শেখ কামাল ও শেখ জামাল। বাড়িতে ঢুকতেই ছিল একটি ছোট রুম। এ রুমটিকে ড্রয়িং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৩২ নম্বরের এ বাড়িটিকে তিলে তিলে গড়ে ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকে দুই তলার কাজ শেষ করেছিলেন। চারপাশে লাগিয়েছিলেন অনেক গাছগাছালি। বিশেষ করে পেঁপে গাছ।
বঙ্গবন্ধু পেঁপে খেতে খুব পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন কবুতর। তার পোষা কবুতর আমার বুকে চরে বেরাত। গাছগুলো বুলিয়ে দিত ছায়ার পরশ। গাছের পাতাধোয়া জল আমাকে সিক্ত করত। শুকনো পাতার ঝনঝনানি আমাকে মুগ্ধ করত।
স্বপ্ন দেখার বাড়ি
বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতে আসার পর কত গুরুত্বপূর্ণ সভা যে এখানে হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। কত শত মানুষ যে এখানে এসেছে, বসেছে তার হিসাব কেউ রাখেনি। শুধু বঙ্গবন্ধুর কারণে এ বাড়িটি একসময় হয়ে যায় বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার বাড়ি। মাঝখানে এই বাড়িটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ সালের ১১ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণের পর সরকার বাড়িটি সিল করে দেয়।
স্বাধীনতার পটভূমি
১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১-এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, এই সবগুলো ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা প্রণয়ন, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শোনা-এ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও এই বাড়িতে ভিড় করেছেন ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণের রূপরেখাটি বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এই বাড়ির কনফারেন্স টেবিলে বসে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি, তখনো তিনি এই বাড়িটি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করতেন। এই বাড়ি থেকে অসংখ্যবার পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ’৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে। সব মিলিয়ে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এই বাড়িটি হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের বীজ রোপণ করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণে প্রাণে।
কালরাতে লাল রক্তস্নাত রাতে
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ২৯ শ্রাবণ ১৩৮২। শুক্রবার ভোরে ফজরের আজান শুরু হয়েছে মাত্র। রাতের অন্ধকারের শেষ রেশটুকু ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে। শ্রাবণের শেষ দিন। বাতাস ভেজা ভেজা। এই বাড়ির সামনের রাস্তায় হঠাৎ সামরিক জিপ, ট্যাংক ও ভারী ট্রাকের ছোটাছুটি শোনা গেল। তারপর গুলি আর গুলি। প্রথমেই খুনিদের একটি দল নিচতলার প্রতিটি ঘরে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। ঘাতকরা দোতলায় ওঠার সিঁড়ির প্রথম ধাপ পেরিয়ে দ্বিতীয় ধাপে এসে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু লুঙ্গির ওপর সাদা পাঞ্জাবি পরে সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়েছেন। এমন সময় ঠাঠা গুলি। বঙ্গবন্ধু পড়ে গেলেন লম্বা হয়ে সিঁড়িতে। এরপর ঘাতকের দল বেগম মুজিবসহ একে একে ১৬ জনকে হত্যা করে। তারা হলেন বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজো ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ের ছেলে সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম রিন্টু। এত মানুষের রক্তগঙ্গায় ভেসে যাচ্ছিল ঘরের মেঝে। দেয়ালজুড়ে লেগে ছিল ছোপ ছোপ রক্ত আর বুলেটের দাগ।
বাসভবন যেভাবে জাদুঘর
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে এলে এই বাড়িটি ফিরে পান। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রে একটি নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান। হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের সে নিলাম বিজ্ঞপ্তির তালিকায় বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িটিও ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা মোটেও দেরি না করে ছুটে যান হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের অফিসে। ১২ হাজার টাকা বকেয়া পরিশোধের পর বাড়িটির দখল শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তাঁর পৈতৃক এ বাড়িটিকে নিজে বা তাঁর পরিবারের অন্য কেউ ভোগদখল না করে বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে। নাম দেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। এই হলো বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ির ইতিহাস। এটা এখন আর কোনো সাধারণ বাড়ি নয়। এটি এখন ইতিহাসের বাড়ি। বাঙালির শৌর্যবীর্য অহংকারের বাড়ি।
জাদুঘরের দর্শনীয় বিষয়
বঙ্গবন্ধু ভবনের গেটের সামনে যেতেই বাম দেয়ালে চোখে পড়বে একটি কবিতা। বিখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা ‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা/গৌরী, যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান’ এই কবিতাটি তোমাদের স্বাগত জানাবে। জাদুঘর ভবনটিতে ঢুকে একতলাতেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। একতলায় জাদুঘরটির প্রথম কক্ষে ছবির মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলাপচারিতা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এই কক্ষটি ছিল ড্রয়িং রুম। যেখানে বসে বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। এই কক্ষের পাশের কক্ষটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর। এখানে বসে তিনি লেখালেখি করতেন। এখান থেকেই তিনি ’৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় চোখে পড়বে সেই রাতের তাণ্ডবলীলার নিদর্শন। দেয়ালে গ্লাসে গুলির দাগ। এ ছাড়া এখানে শিল্পীর তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি প্রতিকৃতি রয়েছে।
দোতলায় গিয়ে প্রথমেই যে কক্ষটি দেখতে পাবেন, সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক বসার ঘর। এর পরের প্রথম কক্ষটি ছিল তাঁর শোবার ঘর। তারপরের কক্ষটি শেখ রেহানার শোবার ঘর। এ কক্ষগুলোয় এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গের নানা স্মৃতিচিহ্ন। এটি কেবল একটি পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন নয়, এগুলো একটি জাতির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এই জাদুঘরে প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের খেলার জিনিস। যেমন- বল, হিকস্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবি ইত্যাদি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তো রয়েছেই।
এখানে আছে একটি শোকবই। পরিদর্শন শেষে শোকবইতে মনের কথা লিখতে গিয়ে যেন সবার মনের বাঁধ ভেঙে যায়। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন অনেকেই। দর্শনার্থীদের সহযোগিতার জন্য এখানে আছেন একজন ভিজিটর গাইড। উল্লেখ্য, ৩২ নম্বরের বাড়িটির পেছনের জমিতে একটি নতুন ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবনেই ২০১১ সালের ২০ আগস্ট চালু করা হয়েছে সম্প্রসারিত জাদুঘর।
অবস্থান ও ঠিকানা
ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকার লেকসার্কাসের পশ্চিম পাশে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে এই জাদুঘরটির অবস্থান। ঠিকানা : বঙ্গবন্ধু ভবন, বাড়ি ১০, রোড ৩২ (পুরাতন), ১১ (নতুন)।