ঈদে ঘোরাঘুরি
ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল
সরকারিভাবে ঈদের ছুটি শেষ। তারপরও যাঁরা দু-একদিন বেশি ছুটি নিয়েছেন, তাঁদের জন্য শ্রীমঙ্গল হতে পারে ঘোরাঘুরির আদর্শ জায়গা। শ্রীমঙ্গল বিখ্যাত বৃষ্টিপাতের কারণে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতটা এখানেই হয়ে থাকে। কপালে থাকলে বৃষ্টি দেখলেন, সঙ্গে চা-বাগানটাও ঘোরা হয়ে গেল।
শ্রীমঙ্গল চা বাগান
চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবস্থান সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। পাতা আর কুঁড়ির এই দেশ পাহাড় আর চা বাগানে ঘেরা আর সব সময়ই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আদর্শ স্থান। সবুজে মোড়ানো শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা বাগান। রয়েছে আনারস ও রাবার বাগান। চায়ের রাজধানী এই শ্রীমঙ্গলের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পশুপাখির বিচরণ নিমিষেই মুগ্ধ করে দেয় চোখ আর মনকে। শ্রীমঙ্গলের উত্তর-পশ্চিম পাশে কিছু অংশ হাইল হাওর ছাড়া পুরোটা উপজেলাই চা বাগান দ্বারা আবৃত। আপনি যখন মাইলের পর মাইল চা বাগানের ভেতর দিয়ে যাবেন, তখন আপনার মনে হবে বিশ্বের সকল সৌন্দর্যরাশি যেন আপনার সম্মুখে।
চা গবেষণা কেন্দ্র
চায়ের রাজধানীতে গড়ে উঠেছে গবেষণা কেন্দ্র। বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রটি শ্রীমঙ্গলের মূল শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থানটি বিটিআরআই হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। শহর থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই বিটিআরআই পৌঁছে যেতে পারেন। বিটিআরআই ক্যাম্পাসেই রয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন অফিস। অফিস গেটে রিকশা থেকে নামা মাত্রই চোখে পড়বে হরেক রকম ফুলের সমাহার। বিটিআরআইয়ের অপরটি চা বোর্ডের অফিস। দুটোই পাশাপাশি। ভেতরে দেখতে পাবেন ৫০-৬০ বছরের পুরোনো চা গাছ। চা ম্যানুফ্যাকচারিংসহ টি টেস্টিং ল্যাব, গবেষণা ফ্যাক্টরিসহ বাংলাদেশের একমাত্র ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। বিটিআরআইয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর।
গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো বিটিআরআইয়ে চা জাদুঘর স্থাপন করা হয়। চা জাদুঘর স্থাপিত হওয়ায় শ্রীমঙ্গলের পর্যটনে সংযোজিত হয়েছে নতুন মাত্রা।
লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট
শ্রীমঙ্গলের আট কিলোমিটার পূর্বদিকে রয়েছে ‘লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট’। নানা প্রজাতির পাখি, শুশুক, অজগর, বনমোরগ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল আর কলাবাদুড় রয়েছে এই অভয়ারণ্যে। পাখিপ্রেমীদের জন্য লাউয়াছড়া আকর্ষণীয় জায়গা। সিএনজি বা অটোরিকশা দুভাবেই যেতে পারেন এই বনে। এমনিতে সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা। তবে দরদাম করে নিলেই ভালো।
মাধবকুণ্ড
এখন বলি সিলেটের অন্যতম আকর্ষণ মাধবকুণ্ডের কথা। ২০০ ফুট উঁচু, অন্যতম সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কিলোমিটার অদূরে। পাহাড় আর সবুজে ঘেরা পথ দিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে যেতে আপনি কখন নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন, তা টেরই পাবেন না। মাধবকুণ্ডের অবিরাম জলধারা এনে দেবে আপনাকে প্রশান্তি। মাধবকুণ্ড যেতে হলে সিএনজি ছাড়া অধিকতর ভালো কোনো উপায় নেই। কেননা বাসে বড়লেখা নেমে আপনাকে আবার ভোগান্তি পোহাতে হবে। রিজার্ভ সিএনজিতে ৬০০-৭০০ টাকায় বেশ ভালোভাবেই পৌঁছে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ডে।
হাকালুকি হাওর
শ্রীমঙ্গল এসেছেন। এত কাছে এসে কেউ হাকালুকি হাওর না দেখে যায় না কি? প্রায় ১৯২ বর্গকিলোমিটার জলাভূমির বাস্তুসংস্থান হাকালুকি হাওরের আশপাশে এক লাখ ৯০ হাজার ঘনবসতি রয়েছে। আর হাকালুকি হাওর শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ। কাদাখুঁড়ি, পানকৌড়ির ঝাঁকসহ আরো অনেক বিরল দৃশ্য দেখা যায় হাকালুকিতে। হাকালুকি যেতেও আপনার একমাত্র যাত্রাসঙ্গী সিএনজি। ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। তবে বাসে যদি যান, রাস্তা ফাঁকা থাকলে ট্রেনের আগেই পৌঁছাবেন। হানিফ, ইউনিক, রূপসী বাংলাসহ বিভিন্ন বাস রয়েছে আরামবাগ, মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। সিলেট মেইল অথবা উপবনে করেও যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। ট্রেনে ভাড়া ৩০০-৩৫০ (স্নিগ্ধা), ২৭০ (শোভন চেয়ার), ২০০ (সুলভ)। বাসের ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা।
কী খাবেন
শ্রীমঙ্গলে খাবারের খরচ অনেক কম। প্রায় সব ধরনের রেস্তোরাঁই রয়েছে শহরে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হিসেবে রয়েছে সাত রঙের চা। মাধবকুণ্ড, হাকালুকি এবং লাউয়াছড়ায় ভাত, ডাল, মুরগির মাংস, হাঁসের মাংসের সঙ্গে মজাদার খাবার হিসেবে পাওয়া যায় বকের মাংস।
অনেকটা সময় এই শ্রীমঙ্গলের গল্প শুনে এখন কি আপনার দুই চোখে সারি সারি চা বাগানের দৃশ্য ভেসে উঠছে? তাহলে এখনই ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিন। এই ছুটির বাকি কটা দিন না হয় কাটিয়ে দিন শ্রীমঙ্গলেই!