রাজাদের ভূমি রাজস্থান
ভারতের সবচেয়ে বড় প্রদেশ রাজস্থান। এর রাজধানী জয়পুর। এটাই রাজার রাজত্বের প্রবেশ পথ। জয়পুরের ‘সিটি প্যালেস’ ছিল একসময় এই অঞ্চল শাসন করা রাজাদের বাসস্থান। এখন রাজাদের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে সিটি প্যালেস। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাদুঘর। রাজস্থানের সমৃদ্ধ ইতিহাস ধারণ করে আছে জাদুঘরগুলো।
জয়পুরের বাজারগুলোতে রয়েছে রাজস্থানের নানা স্মৃতিস্মারক। গয়না, জুতা এবং কাপড়ের জন্য বিখ্যাত জয়পুরের এসব বাজার। দুর্গঘেরা রাজস্থানের রূপ লেগে আছে রঙিন পোশাক ও মরুভূমিতে।
এই উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক প্রতিবছর রাজস্থান ভ্রমণ করতে আসেন। রাজপুত রাজাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল রাজস্থান। সে সময়ে তৈরি দুর্গ এবং কেল্লাগুলো রাজস্থানের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজস্থানকে বলা হয় ‘নীল শহর’। নীল চাষের জন্য তৈরি ঘনক্ষেত্র আকৃতির ঘরগুলো সেই পুরোনো দিনের সাক্ষ্য দেয়। যোধপুর হচ্ছে রাজস্থানের দ্বিতীয় বড় শহর। এখানেই রয়েছে আকাশছোঁয়া ‘মেহরানগড় দুর্গ’। পুরো শহরকে যেন একাই দেখে রাখছে এই দুর্গ। এতটাই বিশাল এর স্থাপনা।
মহারাজাদের হাতে তৈরি এই দুর্গ এখন পর্যটকদের কাছে এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। দুর্গের ভেতরে রয়েছে সেই সময়কার বিত্ত ও বৈভবের ছোঁয়া।
মরুভূমির জন্য রাজস্থানের যে পরিচিতি রয়েছে, তাকে বহন করছে ‘থার মরুভূমি’। বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা এই মরুভূমি পৃথিবীর অন্যতম কঠিন মরুপথ। তবু এই মরুভূমিকে আপন করে নিয়েছে যাযাবর উপজাতি এবং পশুরা। মরুভূমিজুড়ে তাদের নিরাপদ বাস।
মরুভূমির ভেতরেই সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যান, বন্য পশুদের জন্য যা এক অভয়ারণ্য। রাজস্থানের মরুভূমির সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত তুলনাহীন।
মরুভূমি, রঙিন জীবন আর দুর্গ কেল্লার আভিজাত্যের সাথে আরেকটি বিষয় বিখ্যাত রাজস্থানের। সেটা হলো রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী খাবার। রাজস্থানের খাবারের বৈশিষ্ট্য তাদের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মরুভূমিবেষ্টিত অঞ্জল হওয়ায় রাজস্থানের খাবারে পানি ব্যবহার করা হয় খুব কম।
হিন্দু এবং জৈন সম্প্রদায়ের বাস হওয়ায় নিরামিষ খাবার খুবই জনপ্রিয় এই অঞ্চলে। যদিও সমানতালে মাংস খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে। তবে রাজস্থানের স্থানীয় যে খাবারটি অবশ্যই চেখে আসা উচিত, তা হচ্ছে ডাল বাটি চুরমা। এই খাবারের মূল উপাদান তিনটি। ডাল, রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী রুটি, মিষ্টি তালের বড়া।
রাজস্থানের যেখানেই যাবেন, সেখানেই পাবেন এই খাবার। কয়েক শ বছর ধরে নিজেদের এই খাবারের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে রাজস্থানের অধিবাসীরা।