উত্তরের ভ্যানিস ব্রুগেস
মধ্যযুগের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে বেলজিয়ামের ব্রুগেস শহর। শিল্পসমৃদ্ধ এই শহরকে বলা হয় ‘উত্তরের ভেনিস’। এই শহরে বেশকিছু সিনেমার শুটিংও হয়েছে। হালের আমির খানের পিকে ছবির শুটিং হয়েছে ব্রুগেসে। ২০০৮ সালে হলিউডে হয়েছে ‘ইন ব্রুগেস’ নামের একটি ছবি। চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ আনা হলো ব্রুগেসের সৌন্দর্য বোঝানোর জন্য। ব্রুগেসের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছেন চিত্রনির্মাতারা।
এই শহরের সাথে মধ্যযুগের স্থাপত্য জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। সেই আমলের আকাশছোঁয়া ছাদের বাড়িগুলো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ব্রুগেসের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে চকোলেট ও বিয়ারের দোকান।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ঠাসা হলেও ব্রুগেস কিন্তু খুবই ছোট শহর। শহরের সব ঐতিহাসিক স্থাপনা, চকোলেট ও বিয়ারের দোকান, বুটিকের দোকান এবং রেস্তোরাঁ ঘুরতে আপনার সর্বোচ্চ একদিন লাগবে।
আর আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হন তাহলে বেলুনে করে ব্রুগেস ঘুরে দেখতে পারেন। বড় এসব বেলুন করে আকাশে ভাসতে ভাসতে ব্রুগেসটা দেখা হবে মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় দুইবেলা বেলুনে চড়ার সুযোগ রয়েছে।
সকালবেলা বেলুনে চড়বেন। এরপর সেখানে সাড়বেন নাস্তা, সঙ্গে থাকবে শ্যাম্পেইন। যদি সন্ধ্যার আলো-আধারিতে আকাশে ঘুরে বেড়াতে চান তো সেটাও আপনি করতে পারবেন। তখন অবশ্য সঙ্গ দিতে পারে বিয়ার আর মজাদার খাবার-দাবার। এই বেলুন ভ্রমণে সময় লাগে তিন ঘণ্টা।
আর যাদের আকাশভীতি রয়েছে তারা নৌকায় করে ব্রুগেস ঘুরতে পারেন। পুরো শহরেই রয়েছে খালপথ। একটি নৌকায় চড়ে বসবেন, হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে থাকবেন ব্রুগেসের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। আকাশ বা খাল যে পথেই ব্রুগেস ঘুরে দেখুন, অভিজ্ঞতায় জমা হবে চমৎকার কিছু মুহূর্ত।
আর ভোজনরসিক বিশেষ করে চকোলেটপ্রেমীদের কাছে ব্রুগেস হচ্ছে বারবার ঘুরতে যাওয়ার মতো জায়গা। কারণ ব্রুগেসে রয়েছে ৫০টিরও বেশি চকোলেটের দোকান। এদের রয়েছে ল্যাবরেটরি, যেখানে নতুন স্বাদের চকোলেট বানানোর জন্য সব সময়ই চলে নানা গবেষণা। মাস্টার শক-ও-ল্যাটিয়ার ও ডমিনিক পারসুন্স চকোলেট শপের মতো দুটি বিখ্যাত চকোলেটের দোকান রয়েছে সেখানে।
ব্রুগেসের আরেকটা ঐতিহ্য হচ্ছে বিয়ার। শহরে রয়েছে বিয়ার কারখানা যারা সেই আদিকাল থেকে বিয়ার তৈরি করে আসছে। বিয়ার তৈরির বিখ্যাত একটি কারখানা বংশ পরম্পরায় চালিয়ে আসছে দো আলভ মান পরিবার। তাদের তৈরি দুটি বিখ্যাত বিয়ারের ব্র্যান্ড হচ্ছে ‘স্ট্রায়ে হেনড্রিক’ ও ‘ব্রুগসে জোট’। এই দুটি বিয়ার শুধু ব্রুগেসেই বিক্রি হয়।
ব্রুগেসে দুটি অদ্ভুত জাদুঘর রয়েছে। ভোজনরসিকদের জন্য এ দুটি জাদুঘর হতে পারে তীর্থস্থান। একটি হচ্ছে ‘ফ্রাইট মিউজিয়াম’। এই জাদুঘরে শুধু ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।
বেলজিয়ানরা খাবারের বিষয়টি নিয়ে খুবই সচেতন। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্রতি বেলজিয়ানদের ভালোবাসা এই জাদুঘরে গেলেই বুঝতে পারবেন। কোত্থেকে খাবারটি এসেছে এবং এর বিবর্তন ও স্বাদের বিস্তারিত সংরক্ষিত রয়েছে এখানে। আর চাইলে ব্রুগেসের মচমচে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই চেখে দেখতে পারবেন সেখানেই।
‘চকো স্টোরি’ হচ্ছে চকোলেটের জাদুঘর। শুনেই কেমন লোভ লাগছে তো? আপনার প্রিয় খাবার চকোলেটের যে চার হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস রয়েছে সেটা কি জানেন? সেই হাজার বছরের ইতিহাস নিজ চোখে দেখতে হলে ‘চকো স্টোরি’ জাদুঘরে আপনাকে যেতেই হবে।
কি নেই সেখানে? চকোলেট তৈরির ফর্মুলা, ছবি, চকোলেট তৈরির মেশিন, চকোলেটের নানা ফ্লেভার সব সাজানো রয়েছে জাদুঘরটিতে।