সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ স্মৃতি ধরে রেখেছে যে দেশ
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি তো ঘটেছে সেই ১৯৯১ সালে। কিন্তু তাতে বিশাল দেশটির স্মৃতি সম্পূর্ণ লোপ পায়নি। অন্তত পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট একটি ভূখণ্ডের মানুষ এখনো দিব্যি সেই সোভিয়েত ঘরানার জীবনযাপন বজায় রেখে চলেছে। দেশটির নাম ট্রান্সনিস্ত্রিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়্যার্ড থেকে পাওয়া গেল কাঠখোট্টা নামের এই ভূখণ্ড সম্পর্কে কিছু তথ্য।
ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার অবস্থান পূর্ব ইউরোপের ইউক্রেন আর মলদোভার মধ্যে। ১৯৯১ সালে যখন একে একে সব দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে, তখন বেঁকে বসে এখানকার মানুষ।
ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশ বাসিন্দারা দাবি তোলে, যেকোনো মূল্যে তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকিয়ে রাখবে, ফলাফলে বাধে যুদ্ধ। ১৯৯২ সালে শেষ হওয়া সেই যুদ্ধের ফলস্বরূপ অনেকটা আধা স্বাধীনরূপে টিকে আছে এই দেশটি।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, বিশ্ব রাজনীতিতে এর নাম কখনো কেন শোনা যায় না? কারণটা আর কিছুই নয়, বিশ্বের কোনো দেশই যে স্বীকৃতি দেয়নি এই দেশটিকে! অথচ ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার আছে নিজস্ব পার্লামেন্ট, মুদ্রাব্যবস্থা, সরকার, পতাকা, এমনকি ডাক বিভাগ পর্যন্ত।
তবে ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো, দেশটি এখনো সোভিয়েত জমানাতেই যেন পড়ে আছে। দেশটির পতাকা অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো, কাস্তে আর হাতুড়ি চিহ্নিত।
দেশটির আনাচে-কানাচে এখনো শোভা পায় লেনিন-স্ট্যালিনের ভাস্কর্য। এমনকি মুদ্রায়ও এসব সোভিয়েত ব্যক্তিত্বের ছবি শোভা পায়। ভুল করে কারো মনে হতে পারে যেন দিব্যি সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস করছে সবাই।
অবশ্য এভাবে টিকে থাকাটা একেবারেই সোজা নয়, তা বলা বাহুল্য। ট্রান্সনিস্ত্রিয়ার বেশির ভাগ মানুষই রুশ। ফলে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে বিনামূল্যে গ্যাস ও আরো নানা ছাড় উপভোগ করে। দেশটিতে ক্ষুদ্র একটি রুশ সেনাদলও আছে।
এমনকি ২০১৪ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার কাছে আবেদন জানান, যেন ট্রান্সনিস্ত্রিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। আর এসবই ঘটে আসছে প্রতিবেশী দেশ মলদোভার তীব্র বাধা উপেক্ষা করে।
ট্রান্সনিস্ত্রিয়াকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবি করে মলদোভা। আর এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতারও শেষ নেই।