আফগানিস্তানে নতুন তালেবান সরকার নিয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর গতকাল মঙ্গলবার আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী করে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে গোষ্ঠীটি। আলোচিত নেতা আব্দুল গানি বারাদার হচ্ছেন তার উপ-প্রধানমন্ত্রী।
এদিন ঘোষণা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ৩৩টি পদেই রয়েছেন তালেবান ও তার সহযোগী গোষ্ঠীর সদস্যরা, যাদের অনেকের নাম রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায়, রয়েছেন ওয়াশিংটনের নজরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামিও। তবে নতুন সরকারে কোনো নারীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নানা দেশ ও সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তানের নতুন সরকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান নতুন সরকার ঘোষণার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, (আফগানিস্তানে) ঘোষিত নামের তালিকায় কেবল তালেবান সদস্য বা তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা রয়েছেন এবং কোনো নারী নেই। আমরা (এদের মধ্যে) কিছু লোকের অন্তর্ভুক্তি ও অতীত ইতিহাস নিয়েও উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, এটিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে তালেবান। তবে, আমরা তাদের কথায় নয়, কাজ দিয়েই বিচার করব।’
তুরস্ক
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তারা আফগানিস্তানের পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছেন। কঙ্গো সফরকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না (আফগানিস্তানের) এ অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে। আমাদের এ প্রক্রিয়াটি সাবধানে অনুসরণ করতে হবে।’
চীন
আফগানিস্তানের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। এক বিবৃতিতে বেইজিং বলেছে, কাবুলে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যে অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে তারা একে স্বাগত জানাচ্ছে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার চীনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের নতুন সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করেন তারা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এবং বিভিন্ন পদে নেতাদের নিয়োগের বিষয়টিকে চীন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, এর মাধ্যমে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটিতে যে অরাজকতা চলছিল তার সমাপ্তি ঘটাতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও দেশ পুনর্গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কাতার
কাতারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তালেবান এখন ‘বাস্তববাদী’ মনোভাব দেখাচ্ছে এবং কাজের মাধ্যমেই তাদের বিচার করা উচিত। তার মতে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি যে আফগানিস্তানের একচ্ছত্র শাসক, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাতারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোলওয়াহ আল-খাতার বলেন, ‘তারা (তালেবান) অনেক বেশি বাস্তববাদ দেখিয়েছে। আসুন, সেখানকার সুযোগগুলো কাজে লাগাই.. এবং তাদের সাধারণ কার্যক্রমগুলো দেখি। তারাই যে (আফগানিস্তানের) প্রকৃত শাসক, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, সরকারের স্বীকৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক এই সংস্থাটির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি সাংবাকিদের বলেন, ‘এটি সদস্য দেশগুলোই করে, আমরা নই। আজকের ঘোষণা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, কেবল আলোচনা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নিষ্পত্তির মাধ্যমেই আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি আনা সম্ভব।’
জাতিসংঘের মুখপাত্র জানান, আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে অবদান রাখতে, সব আফগান, বিশেষ করে নারী অধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ও জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানে সংস্থাটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতিসংঘের নারী সংস্থা
জাতিসংঘের নারী সংস্থার প্রধান প্রমিলা পাতীন বলেছেন, আফগানিস্তানের নতুন সরকার থেকে নারীদের বাদ দেওয়া তালেবানের ‘নারী অধিকার রক্ষা ও সম্মান’-এর প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে ‘লিঙ্গ সমতা ও প্রকৃত গণতন্ত্রের একটি মৌলিক শর্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার থেকে নারীদের বাদ দিয়ে তালেবান নেতৃত্ব তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্য সম্পর্কে ভুল সংকেত পাঠিয়েছে।