আফগান নাগরিকদের হত্যা করেছে অস্ট্রেলীয় সেনা : তদন্ত প্রতিবেদন
আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকা অবস্থায় অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য বেআইনিভাবে বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৯ জনকে হত্যা করেছে বলে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী-এডিএফের এক তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এডিএফ ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে ‘বন্দি, কৃষক কিংবা বেসামরিক নাগরিক’ হত্যাকাণ্ডের ৫৭টি ঘটনা তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তদন্তকালে তিন শতাধিক সাক্ষীর বয়ান শুনেছে এডিএফ।
এডিএফের প্রধান জেনারেল অ্যানগাস ক্যাম্পবেল বলেছেন, তাঁরা কিছু অসি সেনার ‘যোদ্ধাবৃত্তি’ ফলানোর ‘লজ্জাজনক প্রমাণ’ পেয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিএফের তদন্তে উঠে এসেছে যে যুদ্ধরত অবস্থায় নয়, ঠাণ্ডা মাথায় সাধারণ আফগান নাগরিক ও যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করেছিলেন অস্ট্রেলীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
এডিএফপ্রধান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তদন্তে উঠে আসা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য তাঁরা অত্যন্ত দুঃখিত এবং দোষীরা শাস্তি পাবেন। তিনি আফগানিস্তানের মানুষের কাছে ‘আন্তরিকভাবে’ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
অস্ট্রেলীয় সেনারা ২০০২ সালে আফগানিস্তানে গিয়েছিল। তারা ন্যাটো বাহিনীর হয়ে আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন লড়াই করেছে। যেসব হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সে ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে অসি সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে।
কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে বেশ কিছু নথি ফাঁস হয়। ‘আফগান ফাইল’ নামে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় অসি সেনাদের হাতে বেসামরিক আফগান নাগরিক হত্যার ঘটনাগুলো। এভাবেই বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব নথি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সাধারণ আফগানদের ওপর কীভাবে অত্যাচার চালিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এলিট ফোর্সের কিছু সদস্য। এরপরই তদন্ত শুরু হয়। এবং শেষ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
এডিএফপ্রধান জানিয়েছেন, অসি সেনাদের হাতে নিহতরা কেউ ছিলেন সাধারণ কৃষক, কেউ বা শিক্ষক। যুদ্ধের সঙ্গে যাঁদের কোনো সম্পর্কই ছিল না। অস্ট্রেলিয়া পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল এ ঘটনার তদন্ত করেছেন। এডিএফপ্রধান জেনারেল ক্যাম্পবেল জানিয়েছেন, এত বড় নীতিহীনতার অভিযোগ এর আগে অস্ট্রেলীয় সেনাদের বিরুদ্ধে ওঠেনি। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
তদন্তে জানা গেছে, দোষী সেনা কর্মকর্তারা একাধিক যুদ্ধবন্দির ওপরেও নির্যাতন চালিয়েছেন। বন্দিদের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে ভুয়া প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ১৯ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চিহ্নিত করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তাঁদের বিচার পর্ব শুরু হবে। ক্যাম্পবেল জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর আইন অনুযায়ী তাঁদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
তবে কয়েকটি বিষয়ে অসি প্রতিরক্ষা বিভাগ কিংবা পুলিশ—কেউই কোনো কথা বলতে চায়নি। কীভাবে ফাঁস এলো আফগান ফাইল? কারা তা সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিল? আফগান ফাইল প্রকাশ্যে না এলে কি পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনার তদন্ত করতো? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। শুধু অস্ট্রেলীয় সেনা নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশের সেনার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে হত্যাকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু কোনো দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এতদিন পর্যন্ত অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব দেয়নি।