আবারও ইউরোপের ‘সার্বভৌমত্বের’ ডাক দিলেন ম্যাক্রোঁ
চীন সফরের পর আবারও বাকি বিশ্বের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইউরোপকে আরও শক্তিশালী করার ডাক দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ৷ নেদারল্যান্ডসে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে তিনি ইউরোপের সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দেন৷
গত কয়েক দিনে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চীন সফর শেষে দেশে ফেরার সময় তিনি দুটি সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বদলে ইউরোপের ‘কৌশলগত সার্বভৌমত্বের’ ওপর জোর দিয়েছেন৷ তাইওয়ান প্রশ্নে ইউরোপের নরম অবস্থানেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷
গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এক ভাষণে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন রূপরেখা তুলে ধরেন ম্যাক্রোঁ৷
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ স্পষ্ট করে দিয়েছে, নিজস্ব পরিচয় বজায় রাখতে হলে ইউরোপকে বাইরের জগতের ওপর নির্ভরতা কমাতেই হবে৷’ অর্থাৎ নিজস্ব স্বার্থ অনুযায়ী সহযোগী বাছাই এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরই বেছে নেওয়ার পথে এগোতে হবে বলে তিনি মনে করেন৷
ম্যাক্রোঁর মতে, ‘শুধু বর্তমান বিশ্বের নাটকীয় বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ একমাত্র খোলা মনে পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব৷’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যেভাবে চীন, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের নতুন রসায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে৷ বিশেষ করে চীনের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে তিনি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশাপাশি ইউরোপকে তৃতীয় পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নও আলোড়ন সৃষ্টি করছে৷
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা হচ্ছে ইউরোপের নিরাপত্তার দৃঢ় ভিত্তি৷’ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশেও ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের সমালোচনা হচ্ছে৷
মঙ্গলবারের ভাষণে ম্যাক্রোঁ ইউরোপের আরও শক্তিশালী শিল্প নীতির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ইউরোপেই উৎপাদন বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের ওপর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি৷
ম্যাক্রোঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সেই পথেই চলেছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপ জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা যেভাবে প্রায় মুক্ত হতে পেরেছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেই পথে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের সূত্রপাত ঘটিয়েছে৷
মঙ্গলবারের ভাষণের মাঝেই প্রতিবাদের মুখে পড়েন ম্যাক্রোঁ৷ বিক্ষোভকারীরা ব্যানার হাতে চিৎকার করে প্রশ্ন তোলেন, ‘ফরাসি গণতন্ত্র কোথায়?’
উল্লেখ্য, অবসর ভাতা কাঠামোর সংস্কারকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে সম্প্রতি প্রবল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ম্যাক্রোঁ৷ দ্য হেগ শহরে ভাষণের সময়েও তাঁকে ‘হিংসা ও দ্বিচারিতার প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে সমালোচনা শুনতে হয়েছে৷