আর্জেন্টিনায় করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু
লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হলেও এটিই প্রথম মৃত্যুর খবর। এর আগে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর গতকাল শনিবার ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে আজ রোববার এ খবর জানানো হয়েছে।
এদিকে আর্জেন্টিনায় এখন পর্যন্ত নয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, করোনায় মৃত ওই ব্যক্তি বুয়েনস এইরেসের বাসিন্দা। সম্প্রতি ইউরোপ থেকে ফেরার পর লক্ষণ হিসেবে জ্বর, কফ দেখা দিলে পরীক্ষা শেষে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
এ ছাড়া ওই ব্যক্তি কিডনির সমস্যাসহ ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন বলে জানানো হয়। গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
এদিকে, লাতিন আমেরিকার মধ্যে ব্রাজিলে ১৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ইকুয়েডরে ১৪ জন, মেক্সিকোতে ছয়জন, চিলিতে পাঁচজন, পেরুতে পাঁচজন, কোস্টারিকায় পাঁচজন, কলম্বিয়ায় একজন ও প্যারাগুয়েতে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৯৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছয় হাজার পেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে, চীনে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৯৭ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৬৯৭ জনে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা।
চীনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এ রোগ দ্রুতগতিতে ছড়াতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রতিদিন বাড়ছে প্রাণহানি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৮ জনে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাতিল করা হয়েছে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বের অন্যতম বড় সংগীত উৎসব।
এদিকে, ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৮৩ জনে। চীনের পর ইতালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন।
ইরানে সরকারি হিসাবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮২৩ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে কাগজের টাকার ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২০ মার্চ ফার্সি নতুন বছর নওরোজ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনের পরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। দেশটিতে দ্রুতগতিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৩৪ জনে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
করোনার এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এ বিষয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস আধানম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমরা এ ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ৪০ ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট ও ২০ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষের দিকে। তারপরও সব দেশকে বলব, আপনারা এই রোগের সংক্রমণ ঠেকানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।’
করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ ফ্লাইট বাতিল করায় বিশ্বব্যাপী পর্যটনশিল্পেও ধস নেমেছে।