ইতিহাস গড়লেন কমলা হ্যারিস
কমলা হ্যারিস শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এখানেই থেমে নেই তিনি। কমলা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পাশাপাশি প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান হিসেবে এমন উঁচু পদে নির্বাচিত হয়েছ্নে। তিনি এবং হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জিতে এখন সামনের জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গত আগস্টে কমলার নাম যুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে জনসেবায় তাঁর বিস্তৃত কর্মজীবন। তিনি প্রায় চার বছর ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ছিলেন শক্তিশালী বিচার ও গোয়েন্দা বিভাগ কমিটির সদস্য।
জ্যামাইকা ও ভারতীয় অভিবাসী বাবা-মায়ের মেয়ে কমলা জানান, তাঁর কর্মজীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বর্ণগত বৈষম্য মোকাবিলা।
১৯৮৬ সালে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যাস্টিং ল স্কুল থেকে পাস করা কমলা তাঁর ভাষায় অপরাধের বিচার ব্যবস্থা ভেতর থেকে সংস্কারে অত্যন্ত মনোযোগ দেন।
সিনেটর হওয়ার আগে কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ছয় বছর এবং সানফ্রান্সিসকো ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
বাইডেন তাঁর নির্বাচনী দৌড়ের সঙ্গী হিসেবে কমলাকে বাছাই করার আগে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিজেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। পরে প্রাথমিক বাছাইয়ের দৌড় থেকে তিনি সরে দাঁড়ান এবং বাইডেনকে সমর্থন দেন।
নির্বাচনের প্রাথমিক বাছাইয়ের সময় কমলার প্রচারণা শিবিরের চেয়ারওম্যান ছিলেন তাঁর ছোট বোন মায়া হ্যারিস। তিনি আগে ছিলেন উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এজিএলইউ) নির্বাহী পরিচালক।
মায়ের মেয়ে
কমলার বন্ধু মিমি সিলবার্ট এপিকে বলেন, ‘কমলার ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ রোল মডেল এবং সেটা ছিল তাঁর মা।’
কমলা প্রখ্যাত স্তন ক্যানসার গবেষক ও বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী শ্যামলা গোপালানের মেয়ে। তিনি বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলিতে পড়োশোনা করার জন্য ১৯ বছর বয়সে ভারত ছেড়ে আসেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্যামলার সঙ্গে অর্থনীতির অধ্যাপক জ্যামাইকান-আমেরিকান ডোনাল্ড জে হ্যারিসের দেখা হয়। সেই সময় চলমান মানবাধিকার, ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী ও ভোটের অধিকার নিয়ে চলা আন্দোলনে তাঁরা যুক্ত হন এবং একসময় প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। শেষে তাঁরা বিয়ে করেন এবং তাঁদের ঘরে আসে দুই মেয়ে। পরে এ দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।
কমলা নিয়মিতভাবে ভারতের তামিলনাড়ুতে তাঁর নানার বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। তাঁর শৈশব গড়ে উঠেছিল ভারতীয় মূল্যবোধের ওপর। তাঁর বাবা-মা তাঁদের মেয়েদের কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় উভয় সংস্কৃতির সংস্পর্শে নিয়ে আসেন।
কমলা তাঁর স্মৃতিকথা ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড : অ্যান আমেরিকান জার্নি’ বইয়ে লিখেন, ‘আমি শ্যামলা গোপালান হ্যারিসের মেয়ে, এ কথা বলার চেয়ে দুনিয়ায় আমার কাছে আর কোনো অধিক উপাধি বা সম্মানের কিছু নেই। এ সত্যই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।’