এক মাস পর বৈরুতের ধ্বংসস্তুপে ‘প্রাণের সন্ধান’
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক মাস পূর্ণ হলো। এখনো ঘটনাস্থলের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। বিস্ফোরণে ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আরো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
এর মধ্যেই আশার কথা জানালেন ওই ধ্বংসাবশেষে কাজ করতে আসা উদ্ধারকর্মীরা। তাঁরা জানান, একটি ভবনের ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে একজনের প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা না গেলেও আশাবাদী উদ্ধারকর্মীরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধ্বংসস্তুপে হৃদস্পন্দনের সন্ধান পেয়েই গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাণের সন্ধানে কাজ করছিলেন চিলি থেকে আসা উদ্ধারকারী দল। সেখানে অনেক মানুষ ভিড় জমান।
চিলির ওই উদ্ধারকর্মীরা গত ১ সেপ্টেম্বর লেবাননে পৌঁছান। এর আগে গত বুধবার তাঁরা ওই ভবনের ধ্বংসস্তুপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের একটি কুকুর সংকেত দেয় যে সেখানে কেউ একজন জীবিত আছে। পরদিন সকালে একই ভবনের পাশ দিয়ে ফেরার পথে ওই কুকুর আবারও একই সংকেত দেয়। এরপরই নড়েচড়ে বসেন উদ্ধারকর্মীরা। তাঁরা তাঁদের কাছে থাকা একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র নিয়ে আসেন, যার মাধ্যমে ধ্বংসস্তুপে কেউ আটকে থাকলে তাঁর হৃদস্পন্দন ধরা পড়ে। তাঁরা দেখেন, ঠিকই কারো হৃদস্পন্দন ধরা পড়ছে।
এরপর উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপ সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসেন। এরপরও ক্রেনের অভাবে ভবন আরো ধসে পড়ার আশঙ্কায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা হাতে হাতে ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ করতে থাকেন। এরপরই বেসরকারি উদ্যোগে একটি ক্রেন যোগাড় করা হয়। তবে এখনো জানা সম্ভব হয়নি, আসলেই কেউ জীবিত আছেন কিনা। প্রাণের সন্ধানের আশায় এখনো ঘটনাস্থলে অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে বিবিসি।
এর আগে গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরের একটি রাসায়নিক পদার্থের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। এ ছাড়া এক লাখের বেশি শিশুসহ মোট তিন লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন। ওই গুদামে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল, যা সার ও বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে বৈরুতের ওই বিস্ফোরণের ফলে লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গনেরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। জনবিক্ষোভের চাপে পদত্যাগ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজধানী বৈরুতসহ দেশের ভিন্ন স্থানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের জের ধরে পদত্যাগ করে দিয়াবের মন্ত্রিসভা।
এর মধ্যেই লেবাননে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক কূটনীতিক মুস্তাফা আদিবের নাম ঘোষণা করা হয়। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, লেবানন পার্লামেন্টের বেশিরভাগ এমপির সমর্থনে গত সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন মুস্তাফা আদিব।