ওড়িশা উপকূলজুড়ে ইয়াসের তাণ্ডব
ভারতের ওড়িশার উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ওড়িশার স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ স্থলভাগে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এখন সেখানে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে, সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই ঝড়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভারতের আবহাওয়া কার্যালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়, এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার। আগামী তিন ঘণ্টা ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ এই ভয়াল তাণ্ডবের শিকার নাও হতে পারে। যদিও উপকূলে কোথাও কোথাও ভারি জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টি হবে।
ওড়িশা রাজ্যের ত্রাণ কমিশনার পি কে জেনা ভারতীয় সংবাদামাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, ‘উপকূলীয় বালেশ্বর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তিন-চার ঘণ্টা ধরে আঘাত হানতে থাকবে। বুধবার বেলা ১টা নাগাদ এ প্রক্রিয়া চলবে। এরপর বিকেলে এটি ময়ূরভঞ্জ জেলা পাড়ি দেবে। এ সময় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার থাকবে।’
ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণ ও ধামরার উত্তর দিক দিয়ে অতিক্রম করে যাবে বলে জানা গেছে। তারপর ঘূর্ণিঝড় চলে যাবে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দিকে। বৃহস্পতিবার সেখানে পৌঁছাবে। তবে তার আগে আজ বুধবার বিকেল থেকেই সেখানে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সমুদ্র সৈকত দীঘাতে ব্যাপক জলচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউ পৌঁছে যাচ্ছে নারকেল গাছের মাথার উপরে। পানি ঢুকে গিয়েছে উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে। রাস্তায় পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে একের পর গাড়ি। ভেঙে যাচ্ছে কংক্রিটের রাস্তাও। উত্তাল সমুদ্র। পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে সমুদ্রের ধারের বোল্ডারের পাঁচিল। গার্ডওয়াল টপকে পানি ঢুকছে জনপদে। সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত পশ্চিমবঙ্গের দীঘা, তাজপুর, মন্দারমনিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন সন্নিহিত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়ও। সেখানে গোসাবা, ক্যানিং, কুলতলি, ফ্রেজারগঞ্জ, সাগর, পাথরপ্রতিমাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে গ্রামের পর গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গের ৫১টি বাঁধে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া বহু নদীর বাঁধেও দেখা দিয়েছে ফাটল।
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় নামানো হয়েছে ১৭ কোম্পানি সেনাবাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে নামানো হয়েছে সেনা। নামানো হয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীকেও। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
ইয়াসের আগমনে ভয়াবহ অবস্থা ওড়িশার বালেশ্বর ও ধামরায়। স্থানীয় মানুষজনের মতে, তাঁরা জীবদ্দশায় এমন প্রাকৃতিক তাণ্ডব দেখেননি। ভেঙে পড়ছে একের পর এক গাছ, কাঁচাবাড়ি, লাইটের পোস্ট। ঝড়ের সঙ্গে চলছে প্রবল বৃষ্টিপাত।
এ মাসেই ভারতে আঘাত হানা দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। গত সপ্তাহে গুজরাটে আঘাত হানে অপর ঘূর্ণিঝড় তাউকতে।