করোনায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকেও ছাড়াল দক্ষিণ কোরিয়া
করোনাভাইরাসে মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। এমনকি বর্তমানে চীনের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে দেশটি। চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে এলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে আজ রোববার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৬ জন।
এর আগে গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮১৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়, যা বর্তমানে চীনে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যার চেয়েও বেশি। আজ রোববার চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৩ জন, গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪২৭ জন। সে হিসাবে গতকাল রাতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। এ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৫২৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তাই, মৃত্যুর সংখ্যা ১৭-ই রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এ শহরের একটি গির্জা থেকেই দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার জানিয়েছে, এরই মধ্যে গির্জার দুই লাখ ১০ হাজার সদস্য এবং গির্জার বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ৬৫ হাজার ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিন হাজার ৩০০ জনের শরীরে জ্বরসহ করোনাভাইরাসে লক্ষণ দেখা গেছে।
এদিকে, দেগু শহরের ওই গির্জার পক্ষ থেকে তাদের সব সদস্যের নাম উল্লেখ না করার অভিযোগে গির্জাটির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার কথা জানিয়েছেন প্রাদেশিক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ওই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সদস্যের নাম চাওয়া হলেও তারা সম্পূর্ণ তালিকা দেয়নি। তবে ওই গির্জার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে অনুসারীদের ওপর ‘নিপীড়ন’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে বর্তমান সময়কে ‘সংকটাপূর্ণ’ উল্লেখ করে বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক বিবৃতিতে জনগণকে উদ্দেশ করে দেশটির উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী কিম কং-লিপ বলেন, ‘জনসমাবেশ, বিক্ষোভসহ ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া থেকে আপনাদের বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
কিম কং-লিপ আরো বলেন, ‘দয়া করে আপনারা সবাই ঘরের ভেতরে থাকুন এবং বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে কম যোগাযোগ রাখুন।’
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৭০ জনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ রোববার আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮০ হাজার জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৩ জন। চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস আধানম। করোনাভাইরাসের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উচ্চ থেকে উচ্চতর সতর্কতা জারি করেছে। গত কয়েক দিনে দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
টেড্রস আধানম বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বাড়তে থাকা সংক্রমণের হার অবশ্যই চিন্তার বিষয়। আমাদের বিশেষজ্ঞরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রও বাড়িয়েছি আমরা।’
জাতিসংঘের জরুরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ড. মাইক রায়ান বলেন, ‘যেকোনো দেশের সরকারের জন্য এটি একটি পরীক্ষামূলক সময়। কীভাবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।’
এরই মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৫০টিরও বেশি দেশে। আইসল্যান্ড, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, বেলারুশে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো আক্রান্ত অবস্থায় এক ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যিনি ছিলেন জাপানের প্রমোদতরীর যাত্রী। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খবরটি নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো এক করোনাভাইরাস রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাওয়ার ফলে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন রাজধানী ওয়াশিংটনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. জেফরি। তবে এর আগে চীনের উহান শহরে যুক্তরাষ্ট্রের আরো এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ছে ইতালিতেও। সেখানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২৮ জনে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় অনলাইনে স্কুলের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে নাজুক অবস্থার শিকার ইরানের বাসিন্দারা। সেখানে ভাইরাসটি দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু রাজনীতিসহ নানা টানাপোড়েনের কারণে তা মোকাবিলা নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। এ ভাইরাসে ইরানে সরকারঘোষিত সংখ্যার চেয়ে মৃতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে দাবি করছে স্থানীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংগঠন।