করোনায় চীনের পর নতুন উদ্বেগের নাম দক্ষিণ কোরিয়া
করোনাভাইরাসে শুরু থেকেই ধুঁকছে চীন। বিশেষ করে দেশটির হুবেই প্রদেশে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে পুরো বিশ্বই অবগত। তবে সম্প্রতি চীনে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেলেও হুট করেই দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। এমনকি লক্ষ করা যাচ্ছে, বর্তমানে একদিনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যায় চীনকেও পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়া। একদিনে সর্বশেষ চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৭ জন। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯৪ জন বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের পর এই দেশটি ঘিরে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৯৩১ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।
এরই মধ্যে বর্তমান সময়কে ‘সংকটাপূর্ণ’ উল্লেখ করে বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক বিবৃতিতে জনগণকে উদ্দেশ করে দেশটির উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী কিম কং-লিপ বলেন, ‘জনসমাবেশ, বিক্ষোভসহ ধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া থেকে আপনাদের বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময়কে ‘সংকটাপূর্ণ’ উল্লেখ করে কিম কং-লিপ আরো বলেন, ‘দয়া করে আপনারা সবাই ঘরের ভেতরে থাকুন এবং বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে কম যোগাযোগ রাখুন।’
এদিকে চীনের উহান শহরের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরকে করোনাভাইরাসের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই শহরের একটি গির্জা থেকে এ ভাইরাস দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেগু শহরে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৬ জন। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরই মধ্যে গির্জার দুই লাখ ১০ হাজার সদস্য এবং গির্জার বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ৬৫ হাজার ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিন হাজার ৩০০ জনের শরীরে জ্বরসহ করোনাভাইরাসে লক্ষণ দেখা গেছে।
এদিকে দেগু শহরের ওই গির্জার পক্ষ থেকে তাদের সব সদস্যের নাম উল্লেখ না করার অভিযোগে গির্জাটির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনার কথা জানিয়েছেন প্রাদেশিক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ওই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সদস্যের নাম চাওয়া হলেও তারা সম্পূর্ণ তালিকা দেয়নি। তবে ওই গির্জার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে অনুসারীদের ওপর ‘নিপীড়ন’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৮৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ শনিবার চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৯ হাজার। সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এ খবর জানিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজারেরও বেশি।
চীন ছাড়াও বিশ্বের মোট ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রাদুর্ভাব বেশি।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইরানে ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। দেশটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাসে প্রাণ হারানো বেশিরভাগই ইরানের রাজধানী তেহরান ও কোম শহরের বাসিন্দা। মূলত এই কোম শহর থেকেই ইরানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। বিবিসির খবরে আরো বলা হয়েছে, নতুন মৃতের সংখ্যা গতকাল শুক্রবার সরকার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে ছয়গুণ বেশি। গতকাল ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল।
তবে ২১০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপোর। তিনি এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্বচ্ছ দাবি করেছেন এবং বিবিসি মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে কোম শহরের এক সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছিলেন, ইরান কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা গোপন করছে।
গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে কংগ্রেসের একটি কমিটির বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘আমরা ইরানকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছি।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার তেহরানসহ আরো ২২টি শহরে জুমার নামাজ বাতিল করা হয়। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউরোপের দেশ ইতালিতেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট ৬৫০ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। নতুন করে দেশটিতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৯ জন। এর মধ্যে দেশটির একটি প্রমোদতরীতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের মধ্যে ৭০৫ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তবে প্রমোদতরীতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা সরকারি হিসাবে যুক্ত করছে না জাপান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও করোনাভাইসে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, দেশটিতে মোট ৬০ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জাপানের প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করা মার্কিনিদেরও যুক্ত করা হয়েছে।