করোনা ঠেকাতে ফ্রান্সে মাস্ক বাধ্যতামূলক, তবে বোরকা নিষিদ্ধই
জনপরিসরে বোরকা বা নেকাব নিষিদ্ধের বেলায় পশ্চিমা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কঠিন আইন ফ্রান্সে। এবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে ধীরেসুস্থে বেরিয়ে আসার এ সময়ে আজ সোমবার থেকে দেশে মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছে ফরাসি সরকার।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য ২০০৪ সালে সে দেশের সরকারি স্কুলগুলোতে হিজাব বা মাথা ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। পরে ২০১০ সালে সারা দেশে জনসমক্ষে পুরো মাথা ও মুখ ঢাকা নেকাব ও বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়। বলা হয়, এসব পোশাক জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া এগুলো নাগরিকদের সমতার ধারণাবিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়।
ফ্রান্সের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও গণপরিবহনে মাস্ক না পরলে জরিমানা গুনতে হবে। দোকানিরা ক্রেতাদের মাস্ক পরতে বলতে পারবেন এবং না পরলে ক্রেতাকে দোকান থেকে চলে যেতে বলতেও পারবেন। রাজধানী প্যারিসের মেট্রো সার্ভিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা সবার ওপর নজর রাখবে, মাস্ক না পরে কেউ আনাগোনা করলেই গুনতে হবে জরিমানা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সচেতনতার ভিত আরো মজবুত করতে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত সপ্তাহে ফরাসি পতাকার নীল, সাদা ও লাল স্ট্রাইপ দেওয়া মাস্ক পরে একটি স্কুল পরিদর্শনে যান। প্রেসিডেন্ট এ মুখ ঢাকা মাস্ককে স্বাধীনতা, সমতা ও সংঘবদ্ধতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন। ফরাসিরা এ বেলায় বিতর্ক ছাড়াই মুখ ঢাকার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিএফএম টিভির এক জরিপে দেখা গেছে, ফ্রান্সের ৯৪ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
দেশটির মুসলিমরা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন এমন লোকজন বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মাস্ক মেনে নেওয়ার প্রবণতায় অবাক হয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টকে ফ্রান্সের পলিটিক্যাল সায়েন্স ইনস্টিটিউট অব এইক্স-এন-প্রোভেন্সের গবেষক ফাতিমা খেমিলাত বলেন, “আপনি যদি মুসলিম হন এবং ধর্মীয় কারণে মুখ ঢেকে রাখেন, তাহলে জরিমানা গুনতে হবে এবং ‘একজন ভালো নাগরিক’ হতে হলে কী কী করতে হবে এমন একটি কোর্সে অংশ নিতে হবে আপনাকে। কিন্তু আপনি অমুসলিম হলে মহামারির সময়ে আপনাকে ‘ভালো নাগরিক হতে’ এবং জাতীয় সংঘবদ্ধতা রক্ষায় ‘মুখ ঢাকার বস্তু’র ব্যবহার করতে হবে।”
এদিকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হতে পেরেছেন ৫৬ হাজার ২১৭ জন।