কুয়েতে করোনা আতঙ্কে দোকানপাট-শপিংমল বন্ধ ঘোষণা
কুয়েতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে দুই সপ্তাহ ছুটি এবং সাময়িকভাবে মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ ঘোষণার পর এবার দোকানপাট, শপিংমল ও সব ধরনের সেলুন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কুয়েত সরকারের মুখপাত্র তারেক আল-মেজরেম গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেইখ আহমাদ নাসের মোহাম্মদ আল-সাবাহসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদমাধ্যম আরব টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারেক আল-মেজরেম আরো জানান, দোকানপাট, শপিংমল ও সেলুন বন্ধের পাশাপাশি শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ থাকবে। তবে সমবায় সমিতিসহ রেশন সেন্টারগুলো খোলা থাকবে।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী আল-হার্বি জানান, বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকা উচিত।
এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কুয়েতে সব মসজিদে নামাজ আদায় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেখানে মুসল্লিদের বাসায় নামাজ আদায়ের জন্য বলা হয়। কুয়েতের ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়। সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরে ১২ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা দেয় কুয়েত মন্ত্রিপরিষদ। এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধে এ সময় অন্যান্য সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে জানানো সিদ্ধান্তগুলো হলো—পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কুয়েতের সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থগিত থাকবে। সংক্রমণ এড়াতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, হল, শপিং সেন্টার, প্রাইভেট হেলথ ইনস্টিটিউট বন্ধ থাকবে। ব্যাংকগুলো ১২ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে (এটিএমএস উন্মুক্ত থাকবে)।
এরই মধ্যে কুয়েতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে চীনে করোনাভাইরাসের মহামারি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করলেও বিশ্বেজুড়ে বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে এই রোগ ছড়িয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৯১০ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসা চলছে ৮৩ হাজার ৫৮৪ জনের। আর এই ভাইরাসের থাবায় মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ৪৭৫ জনের।
গত বছরের শেষ দিকে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। করোনায় চীনেই সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত চীনে করোনায় মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ১৯৯ জন। তবে গত কয়েক দিনে চীনে করোনায় আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্র ইউরোপ মহাদেশজুড়ে। এ মুহূর্তে চীনের পরিবর্তে ইউরোপ করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে বলে এরই মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইউরোপে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ইতালি, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের। চীনের পরে এখন পর্যন্ত ইতালিতে করোনাভাইরাসে সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে পরিস্থিতি আরো ভায়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।