গণ্ডার রক্ষায় ৩০ বছরের চেষ্টা যাচ্ছে বিফলে!
অতি বিপন্ন প্রাণী গণ্ডার। বিশ্বে মোট জীবিত গণ্ডারের ৮০ শতাংশই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রাণীটিকে রক্ষার্থে ৩০ বছর আগে দেশটিতে একটি খামার দেন ৮১ বছর বয়সী জন হিউমে। আট হাজার একর জায়গার ওপর অবস্থিত খামারটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ খামারে রূপান্তরিত হয়েছে। খামারটিতে রয়েছে প্রায় দুই হাজার গণ্ডার রয়েছে। তবে, অর্থসংকটে খামারটি বিক্রি করে দেবেন এই প্রাণিপ্রেমী। একইসঙ্গে নিলামে তোলা হবে খামারটিতে লালিত পালিত গণ্ডারগুলো। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে আজ সোমবার (২৪ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে ভারতীয় গণমাধ্যমটি জানায়, গণ্ডার রক্ষায় জন হিউমের ৩০ বছরের চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। বর্তমানে গণ্ডারের খামার চালানোর মতো তার কাছে অর্থ নেই। এ জন্য গণ্ডারসহ খামারটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আগামী সপ্তাহেই নিলামে তোলা হবে খামারসহ প্রাণীগুলোকে।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিউমে বলেন, ‘আমার কাছে আর কিছুই নেই। শুধু রয়েছে দুই হাজার গণ্ডার ও আট হাজার একর জায়গার ওপর নির্মিত খামার।’
এনডিটিভি বলছে, বিশ্বে জীবিত থাকা মোট গণ্ডারের ৮০ শতাংশই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এ জন্যই চোরা শিকারিদের নজর দেশটির গণ্ডারের ওপর। একইসঙ্গে এশিয়ায় প্রাণীটির শিংয়ের চাহিদা বেড়েছে, যা ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর এতেই চোরা শিকারিদের উপদ্রব বেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
দেশটির কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অতি বিপন্ন ৪৪৮ গণ্ডারকে মারা হয়েছে। তার আগের বছর অর্থাৎ, ২০২১ সালে হত্যা করা হয় ৪৪৫ গণ্ডারকে। এর জেরে প্রাণীটি রক্ষায় দেশটির ন্যাশনাল পার্কসহ অন্যান্য এলাকায় পাহারা জোরদার করা হয়েছে।
গণ্ডার শিকারের জন্য চোরা শিকারিদের প্রথম পছন্দ ব্যক্তিগত খামার বা বনাঞ্চল। এসব জায়গায় থাকা গণ্ডারদের শিংই তাদের লক্ষ্য। স্তন্যপায়ী প্রাণীটির শিংয়ে রয়েছে এক ধরণের কঠিন ক্যারেটিন, যা মানুষের নখেও পাওয়া যায়। এটি দিয়েই ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরি করা হয়। মূল্যবান সোনা ও মাদক হেরোইন থেকে দামি গণ্ডারের শিং প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬০ হাজার মার্কিন ডলারে।
হিউমে বলেন, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে রক্ষায় আমি এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ডলার খরচ করেছি। গণ্ডার রক্ষার দিক থেকে এটি বিপুল পরিমাণের অর্থ। যখন আমি এই খামারটি চালু করি, তখন পৃথিবীতে অনেক গণ্ডার ছিল।’
সাবেক ব্যবসায়ী হিউমে নিজের ভাগ্য বদলাতে চেয়েছিলেন খামারটিতে একটি পর্যটন রিসোর্ট করে। তিনি বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর আমার ইচ্ছে ছিল একটি খামার করার। যখন আমি প্রথম একটি কিনেছিলাম দুর্ভাগ্যবশত আমি প্রাণীটির প্রেমে পড়ে যায়। গণ্ডারের সংখ্যা বাড়াতে গত ৩০ বছরে আমি আমার সব সঞ্চয় শেষ করেছি। অবশেষে আমি আজ অর্থহীন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার নর্থ ওয়েস্ট প্রদেশে হিউমের খামারটি অবস্থিত। চোরা শিকারিদের হাত থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বাঁচাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খামারটি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তার খামারে রয়েছে দুই হাজারের মতো সাদা জাতের গণ্ডার। আর ১৯ দশকের শেষ দিকে এসে অতি বিপন্নের তালিকায় এই জাতের গণ্ডারের নাম ওঠে। তবে, কয়েক দশক ধরে নিরাপত্তা ও প্রজনন বাড়িয়ে প্রাণীটিকে আবার পরিবেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) লাল তালিকায় ‘হুমকির কাছাকাছি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে সাদা জাতের গণ্ডার। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৮ হাজার সাদা জাতের গণ্ডার রয়েছে।
হিউমের খামারটির প্রাণীগুলোকে রক্ষার্থে মাইলের পর মাইল এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা পরিমাপণ যন্ত্র ও ১০০’র বেশি নিরাপত্তা কর্মী পাহারা দিচ্ছে। খামারটির প্রধান নিরাপত্তাকর্মী ব্যান্ডন জোনস বলেন, ‘কড়া নিরাপত্তা চোর শিকারিদের একটি বার্তা দিচ্ছে, তারা এখানে কোনো সুযোগ পাবে না। আমাদের অনুশীলনটি শুধুমাত্র আংশিকভাবে সফল। কারণ, চোরা শিকারিরা অন্য কোথাও গিয়ে গণ্ডারকে হত্যা করবে। আমরা শুধু তাদের আমাদের খামার থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা জানি, অপেক্ষাকৃত কম নিরাপত্তা থাকা এলাকায় গিয়ে তারা শিকার করবে।’
খামারের গণ্ডারদের রক্ষার্থে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় ও কতজন অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে, তা গোপন রেখেছে হিউমে। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্যই আমাদের বেশি খরচ হয়। আমার খামার কিনতে ইচ্ছুক ব্যক্তির পকেটে অনেক অর্থ থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করছি, গণ্ডার রক্ষার্থে কাজ করবে, এমন ধনকুবের আমার খামারটি কিনবেন, যার বছরে আয় থাকবে ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি।’
আগামী বুধবার অনলাইনে খামার ও গণ্ডারের নিলাম শুরু হবে। ডাক শুরু এক কোটি ডলার দিয়ে। এ ছাড়া খামারটিতে থাকা ১০ টন গণ্ডারের শিংয়ের নিলাম আলাদাভাবে হবে। কালো বাজারে এই ১০ টন শিংয়ের দাম ৫০ কোটি ডলার। হিউমের দাবি, তারা এই শিংগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে নতুন একটি প্রজেক্ট চালু করবে, যা গণ্ডারের শিং বিক্রির বৈধ বাজার তৈরি করবে।