জেসিন্ডাকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান সিংহভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী
নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করার সুফল পেতে যাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। দেশটিতে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। জনমত জরিপ বলছে, জেসিন্ডা আরডার্নই দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে কিছুদিন আগে নতুন করে করোনার প্রকোপ দেখা দিলে জেসিন্ডা সরকার কিছুটা জনসমর্থন হারায়। কিন্তু, নির্বাচনের দুদিন আগে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেকা গেছে, এখনো ৪৬ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে জেসিন্ডার লেবার পার্টির পক্ষে। অন্যদিকে বিরোধী দল ন্যাশনাল পার্টির পক্ষে রয়েছে ৩১ শতাংশ জনসমর্থন।
নিউজিল্যান্ডে একজন ভোটার দুটি ভোট দিতে পারেন—একটি প্রার্থীকে, অন্যটি দলকে। এ বছর নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার অগ্রীম ভোট দিয়েছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জর্জিনা মারেও আগাম ভোট দিয়েছেন। তিনি এক দলের প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট দিলেও অন্য ভোটটি দিয়েছেন ভিন্ন দলকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জর্জিনা মারে বলেন, ‘সাধারণত আমি লেবার পার্টিকেই ভোট দিই। তবে এ বছর ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী হচ্ছি।’
জেসিন্ডার প্রশংসা করে জর্জিনা মারে বলেন, ‘আমি মনে করি জেসিন্ডা আরডার্ন দারুণ একজন নেতা। কারণ, তিনি নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার। তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব। তাঁর আচরণ উষ্ণ এবং তিনি নতুন করে দেখিয়েছেন যে নেতৃত্ব কেমন হতে পারে।’
তবে জেসিন্ডাকে নিয়ে এমন মাতামাতি বা ‘জেসিন্ডাম্যানিয়া’ কিন্তু সবসময় ভোটারদের মধ্যে ছিল না। বেশ কয়েকবার কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জেসিন্ডা আরডার্নের সরকারকে যেতে হয়েছে। গত বছরের মার্চে ক্রাইস্টচার্চ শহরে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা, এরপর ডিসেম্বরে অগ্নুৎপাতের ঘটনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ন্যাশনাল পার্টির জনপ্রিয়তা ছিল বেশ পড়তির দিকে।
ব্যক্তিগতভাবে দয়ালু ও সহমর্মী আচরণের জন্য জেসিন্ডা আরডার্নের সুনাম থাকলেও অনেক নিউজিল্যান্ডবাসীই একটা সময় পর্যন্ত মনে করতেন, যেসব পরিবর্তনের অঙ্গীকার জেসিন্ডা দিয়েছেন, সেগুলো তিনি পূরণ করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেন টমাস বলেন, “তিনি (জেসিন্ডা) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘অসংখ্য শিশুকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করবেন’ এবং ১০ বছরের মধ্যে দরিদ্রদের জন্য এক লাখ ঘর নির্মাণ করে দেবেন। সে হিসাবে এর মধ্যেই ১০ হাজার ঘর তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দেখছি বাস্তবে তৈরি হয়েছে মাত্র কয়েকশ।”
বেন টমাস আরো বলেন, ‘পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের অনেক প্রতিশ্রুতির কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলেও, বাস্তবে আমি এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।’
তবে নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারি সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে।
বেন টমাস বলেন, ‘করোনাভাইরাস আরডার্নকে সুযোগ করে দিয়েছে। এতে করে তিনি তাঁর এজেন্ডা নতুন করে সাজাতে পারবেন। আপনার যদি দেখেন, (করোনা) সংকটে হয় প্রধানমন্ত্রী উপকৃত হয়েছেন, কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কারণে নিউজিল্যান্ড উপকৃত হয়েছে।’
জেসিন্ডা আরডার্ন ক্ষমতায় থাকাকালে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজারেরও কম মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৫ জন। করোনাকালে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি ছিল। কিন্তু, লকডাউন থাকলেও যুক্তরাজ্যসহ আরো কয়েকটি উন্নত দেশের মতো নিউজিল্যান্ডকে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে হয়নি।